ভারতীয় চলচ্চিত্রের ‘হি-ম্যান’ ও ‘গ্রিক গড’ নামে পরিচিত কিংবদন্তি অভিনেতা ধর্মেন্দ্র সোমবার ৮৯ বছর বয়সে মুম্বাইয়ে তাঁর বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। শ্বাসকষ্টের সমস্যার কারণে অক্টোবরের শেষে মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ভর্তি হবার পর, ছাড়া পাওয়ার মাত্র ১২ দিন পরই মারা গেলেন তিনি। ৮ ডিসেম্বর তাঁর ৯০তম জন্মদিন ছিলো। তার মৃত্যুতে ভারতে নেমে এসেছে শোকের ছাড়া। খবর এনডিটিভি।
স্বপ্নের শুরু ও ‘হি-ম্যান’ তকমা
১৯৬০ সালে ‘দিল ভি তেরা হাম ভি তেরে’ ছবির মাধ্যমে ধর্মেন্দ্রর অভিনয় জীবন শুরু হয়। ষাটের দশকে ‘অনপঢ়’, ‘বন্দিনী’, ‘অনুপমা’ এবং ‘আয়া সাওয়ান ঝুম কে’-এর মতো ছবিগুলোতে তিনি সাধারণ মানুষের চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের মন জয় করেন। তবে, তাঁর কর্মজীবনের মোড় ঘোরে অ্যাকশন এবং রোমান্টিক প্রধান চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে, যার মধ্যে ‘সোলে’, ‘ধরম বীর’, ‘চুপকে চুপকে’, ‘মেরা গাঁও মেরা দেশ’, এবং ‘ড্রিম গার্ল’-এর মতো কালজয়ী ছবিগুলো উল্লেখযোগ্য।
ধর্মেন্দ্রকে শেষ দেখা গিয়েছিল শাহিদ কাপুর ও কৃতি স্যানন অভিনীত ‘তেরি বাতোঁ মে অ্যায়সা উলঝা জিয়া’ ছবিতে। তাঁর পরবর্তী সিনেমাটিক উপস্থিতি হলো অমিতাভ বচ্চনের নাতি অগস্ত্য নন্দা অভিনীত যুদ্ধ ড্রামা ‘ইক্কিস’, যা ২৫ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে।
ধর্মেন্দ্রর আবির্ভাবের আগে ভারতীয় সিনেমার নায়করা বেশিরভাগই ছিলেন ট্র্যাজিক হিরো। ধর্মেন্দ্র সেই ধারায় পরিবর্তন আনেন। তিনি তাঁর পৌরুষপূর্ণ চেহারা এবং বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্বের মাধ্যমে দর্শকদের মুগ্ধ করেন। তাঁর ‘সিটি-মার’ (সিটি বাজানোর মতো) সংলাপে দর্শকরা ‘তালি’ (হাততালি) দিয়ে সাড়া দিতেন। ছয় দশক ধরে ৩০০টিরও বেশি ছবিতে তিনি এই ভালোবাসা পেয়েছেন, যা তাঁকে ‘গরম ধরম’ উপাধিও এনে দেয়।
পাঞ্জাবের গ্রাম থেকে বলিউড
ধর্মেন্দ্রর মুম্বাই এসে ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় তারকা হয়ে ওঠার গল্প যেন স্বপ্নের মতো। পাঞ্জাবের লুধিয়ানা জেলার নাসরালি গ্রামের এক সাধারণ ছেলে ধর্মেন্দ্র অভিনয় করতে অনুপ্রাণিত হন কিংবদন্তি দিলীপ কুমারের ‘শহীদ’ (১৯৪৮) ছবিটি দেখে। পরে তিনি তাঁর আদর্শের সাথে ১৯৬৬ সালের প্রথম বাংলা ছবি ‘পারি’ এবং এর হিন্দি রিমেক ‘অনখা মিলন’ (১৯৭২)-এ কাজ করার সুযোগ পান।
তরুণ ধর্মেন্দ্র, যাঁর জন্ম নাম ধর্মেন্দ্র কেবল কৃষ্ণ দেওল, রাতের পর রাত জেগে মুম্বাইতে বড় তারকা হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। এক সময় তিনি বলেছিলেন, আমি অসম্ভব স্বপ্ন দেখতাম এবং সকালে আয়নাকে জিজ্ঞেস করতাম, আমি কি দিলীপ কুমার হতে পারি?’
১৯৫৮ সালে ফিল্মফেয়ার ম্যাগাজিনের একটি ট্যালেন্ট প্রতিযোগিতায় জয়ী হলেও প্রতিশ্রুত ছবিটি আলোর মুখ দেখেনি। তবে দুই বছর পর অর্জুন হিঙ্গোরানির ‘দিল ভি তেরা হাম ভি তেরে’-তে তাঁর বড় ব্রেক আসে।
শুরুর দিকের কঠিন সংগ্রাম
সিনেমার এই পথচলা সংগ্রাম ছাড়া ছিলো না। প্রযোজকদের অফিসে যাওয়ার জন্য তাঁকে মাইলের পর মাইল হাঁটতে হয়েছে এবং দিনের পর দিন শুধু ছোলা খেয়ে জীবনধারণ করতে হয়েছে। এক সময় তিনি মুম্বাইয়ে একটি গ্যারেজে থাকতেন এবং বাড়তি আয়ের জন্য ওভারটাইম করে একটি ড্রিলিং ফার্মে কাজ করতেন।
১৯৬৬ সালে ‘ফুল অউর পাত্থর’ ছবির একটি শার্টবিহীন দৃশ্য দিয়ে তিনি দর্শকদের চমকে দেন, যা তাঁকে ‘গ্রিক গড’ উপাধি এনে দেয়। যদিও ধর্মেন্দ্র নিজে কখনও এই উপাধির অর্থ জানতেন না বলেই জানিয়েছিলেন।
পারিবারিক ও রাজনৈতিক জীবন
নিজের চেহারা এবং অভিনয় শৈলীর পাশাপাশি, ধর্মেন্দ্র ১৯৭০ ও ১৯৮০-এর দশকে হেমা মালিনীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়েও শিরোনামে ছিলেন। ‘সোলে’, ‘সীতা অউর গীতা’ এবং ‘ড্রিম গার্ল’-এর মতো ছবিতে তাঁরা বহুবার জুটি বেঁধেছেন। ধর্মেন্দ্র বিবাহিত ছিলেন প্রকাশ কউরের সাথে, যাঁর সাথে তাঁর দুই ছেলে (সানি ও ববি) এবং দুই মেয়ে (অজিতা ও বিজেতা) রয়েছে। গুজব আছে, হেমা মালিনীকে বিয়ে করার জন্য তিনি ১৯৮০ সালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। হেমা মালিনীর সাথে তাঁর দুই মেয়ে (এশা ও অহনা) রয়েছে।
১৯৮৩ সালে ধর্মেন্দ্র তাঁর প্রযোজনা সংস্থা বিজয়তা ফিল্মস চালু করেন এবং তাঁর ছেলে সানি দেওলকে ‘বেতাব’ ছবির মাধ্যমে বলিউডে আনেন। ১২ বছর পর ছোট ছেলে ববি দেওলকে ‘বরসাত’ ছবিতে লঞ্চ করেন।





















