বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ হয়ে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে ভিভিআইপি ঘোষণা করে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে তারেক রহমান দেশে ফিরলে তিনি কি এই সিকিউরিটি পেতে পারেন কিনা?
মঙ্গলবার সকালে উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠকের পর বেগম খালেদা জিয়ার এ নিরাপত্তার ব্যবস্থা সিদ্ধান্ত হয়।পরে দুপুর ২ টা ২০ মিনিট থেকে ভিভিআইপি বিশেষ নিরাপত্তা নিয়োজিত এসএসএফ সদস্যগণ হাসপাতালে এসে ডিউটি শুরু করেছেন।
এখন প্রশ্ন হলো, খালেদা জিয়া ভিভিআইপি হওয়ায় তাঁর পরিবার-সদস্য হিসেবে তারেক রহমানও কি এই সুবিধার আওতায় আসবেন? বা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে তিনিও একই রকম নিরাপত্তা পেতে পারেন কিনা?
বিএনপির একজন নেতা জানিয়েছেন, রাষ্ট্র বা সরকার ঘোষিত ভিভিআইপি হিসেবে খালেদা জিয়ার জন্য যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে, সেটি তাঁর পরিবারের সদস্যদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হওয়া উচিত।
এ বিষয়ে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, অ্যাডভোকেট সৈয়দ মুয়াজ্জেম হোসেন আলাল ভিওডি বাংলাকে বলেন,
আমরা মনে করি, সরকার দেশনেত্রীর বেলায় যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটি অনেক বিলম্বে নেওয়া হয়েছে। আরও আগে তিনি এটি পাওয়ার যোগ্য ছিলেন। কারণ বর্তমান সরকার তো আমাদের,আন্দোলনে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর ও কিশোর-তরুণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফসল। সেই আন্দোলনের মধ্যমণি ছিলেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। এবং বেগম খালেদা জিয়ার মতো এত বড় ভিকটিম, এত বড় সাফারার সাম্প্রতিক কালের ইতিহাসে আর কেউ নেই। বিশেষ করে কোনো নারী নেতৃত্ব সারা পৃথিবীতেই সেই জায়গায় নেই। তাই আরও আগে এই সুবিধাটি তাঁকে দেওয়া উচিত ছিল—তাঁর চিকিৎসা, তাঁর চলাচল এবং তাঁর ফ্রি মুভমেন্টের জন্য। সরকার অনেক দেরিতে হলেও যাই হোক দিয়েছে ।
তিনি বলেন, সরকার ইচ্ছা করলে তার ক্ষমতার মাধ্যমে তা করতে পারে (তারেক রহমানকেও দিতে পারে)। এই একই বিষয়টি পারিবারিকভাবে না দেখে, বিএনপির নেতা হিসেবে-আরেকজন বড় ভিকটিম তারেক রহমানের বেলায়ও ইচ্ছা করতে পারেন। ইচ্ছা করলে পারেন। এতে আইনে কোনো বাধা আছে বলে আমার মনে হয় না।
এদিকে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, “খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় হাসপাতালে তাঁর নির্বিঘ্ন চিকিৎসা, প্রয়োজনে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার পরিকল্পনা, তাঁর নিরাপত্তা ও যাতায়াতের সুবিধা এবং উচ্চ মর্যাদার কথা বিবেচনা করে তাঁকে রাষ্ট্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (ভিভিআইপি) ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
ভিভিআইপি হিসেবে প্রজ্ঞাপন জারির পর রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মতো খালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
সরকারের এ সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর প্রশ্ন উঠেছে-খালেদা জিয়ার ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরলে তিনিও কি মায়ের মত একই নিরাপত্তা সুবিধা পাবেন?
তবে তারেক রহমান কবে দেশে ফিরবেন তা এখনো নিশ্চিত নয়। তিনি নিজেই ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে জানিয়েছেন, তার দেশে ফেরার বিষয়টি ‘একক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ একক নিয়ন্ত্রণাধীন নয়’।
তবে সোমবার রাতে দলের এক বৈঠকের পর বিএনপির মুখপাত্র ও স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, তারেক রহমান শিগগিরই দেশে ফিরবেন।
ওপর দিকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে প্রোগ্রাম শেষে সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, তারেক রহমান কবে আসবেন, সেটা তাঁর নিজের ও তাঁর পরিবারের সিদ্ধান্ত। এ বিষয়ে আলোচনা করে কোনো লাভ নেই।কয়েক দিনের মধ্যেই তারেক রহমান ফিরবেন-এমন তথ্য জানা নেই। ওরকম কোনো কিছু আমাদের কালকে মিটিংয়েও আলোচনা হয়নি।’
বিভিন্ন নেতার বক্তব্য ও খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা সংক্রান্ত সরকারের পদক্ষেপ থেকে অনেকের ধারণা, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলেই দেশে ফিরতে পারেন তারেক রহমান।
এর আগেও তারেক রহমান ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে দেশে ফেরার বিষয়টি তাঁর একক নিয়ন্ত্রণে নেই বলে জানান। তখন অনেকেই ধারণা করেছিলেন, নিরাপত্তাজনিত বিষয়টিই এর বড় কারণ।
খালেদা জিয়াকে ভিভিআইপি ঘোষণার পর ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে তাঁর নিরাপত্তায় এসএসএফ সদস্যরা দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন।
এসএসএফ অধ্যাদেশে বলা আছে যে, ‘খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’র শারীরিক নিরাপত্তার দায়িত্ব এসএসএফের। এই অধ্যাদেশ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি ও সরকারপ্রধান ছাড়াও বিদেশি রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান কিংবা সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে ঘোষিত অন্য যে কোনো ব্যক্তিও ভিভিআইপি হিসেবে বিবেচিত হন বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে বিশেষ ব্যক্তিদের তিনটি শ্রেণি রয়েছে-ভিভিআইপি, ভিআইপি ও সিআইপি। এর মধ্যে ভিভিআইপি ও ভিআইপি নির্ধারণ করে রাষ্ট্র, আর সিআইপি নির্বাচন করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
দেশের প্রধান দুই ভিভিআইপি হলেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। তাঁদের নিরাপত্তায় প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট (পিজিআর) ও স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) কাজ করে থাকে। এছাড়া রাষ্ট্র কাউকে ভিআইপি ঘোষণা করলেও তাঁর নিরাপত্তা দেয় এসএসএফ।
এখন খালেদা জিয়াকে ভিভিআইপি ঘোষণা করে সরকার প্রজ্ঞাপন জারির পর তাঁর নিরাপত্তায় সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা সক্রিয় হয়েছে।
বিশেষ বৈঠকের পর উপদেষ্টা পরিষদ জানায়, খালেদা জিয়াকে ভিভিআইপি ঘোষণার বিষয়টি বিএনপি দলগতভাবে অবগত রয়েছে।
বিএনপির ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারেক রহমানই দলকে নেতৃত্ব দেবেন। দলের নেতারা আগে জানিয়েছিলেন, তিনি নভেম্বরেই দেশে ফিরবেন।
কিন্তু ২৯ নভেম্বর তারেক রহমান নিজেই জানান, তাঁর দেশে ফেরার বিষয়ে একক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ তাঁর নেই।
ব্রিটেনে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা তারেক রহমান বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়েছেন কি না বা আবেদন করেছেন কি না-সে বিষয়েও তিনি বা তাঁর দল কিছুই স্পষ্ট করেননি। সরকারের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।
তবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন রোববার বলেছেন, তারেক রহমান দেশে ফিরতে চাইলে একদিনেই তাঁকে ট্রাভেল পাস দেওয়া সম্ভব।
তিনি বলেন, পাসপোর্ট না থাকলে বা মেয়াদোত্তীর্ণ হলে দেশে ফেরার জন্য ‘ওয়ান টাইম ট্রাভেল পাস’ দেওয়া হয়।
এখন খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা সুবিধার আওতায় তাঁর পরিবারের সদস্য হিসেবে তারেক রহমানও যদি এসএসএফ সুবিধা পান, তাহলে তিনি ঢাকায় বিমানবন্দরে অবতরণের মুহূর্ত থেকেই এই নিরাপত্তা পেতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।


















