বৃহস্পতিবার , ২৪ মার্চ ২০২২ | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. London Mirror Specials
  2. অন্যান্য
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. খুলনা
  6. খেলা
  7. চট্রগ্রাম
  8. জেলার খবর
  9. ঢাকা
  10. তথ্য-প্রযুক্তি
  11. প্রবাসের কথা
  12. বরিশাল
  13. বাংলাদেশ
  14. বিনোদন
  15. ব্যাবসা-বাণিজ্য

ঢাকার রাস্তায় জট, বাতাসে বিষ

প্রতিবেদক

মার্চ ২৪, ২০২২ ১১:০৩ পূর্বাহ্ণ

ছেলেবেলায় আমাদের লেখাপড়ায় উৎসাহিত করতে একটি ছড়া শেখানো হতো– ‘লেখাপড়া করে যে গাড়ি-ঘোড়া চড়ে সে।’ এই ছড়াটি যে এমন নির্মমভাবে আমাদের সবার জীবনে সত্য হয়ে যাবে তা কে ভেবেছিল। এই ছড়া নিয়ে এখন ফেসবুকে ট্রল হয়, ‘ছেলেবেলায় এত লেখাপড়া করেছি যে এখন দিনের বেশিরভাগ সময় গাড়িতেই কাটে।’ আসলেই ঢাকার যানজট পরিস্থিতি এমন অবস্থায় পৌঁছেছে, লেখাপড়া করা না করা সবাইকেই এখন দিনের বেশিরভাগ সময় গাড়িতেই কাটাতে হয়। করোনার কারণে দফায় দফায় লকডাউন এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় গত দুই বছর ঢাকার যানজট পরিস্থিতি কিছুটা সহনীয় ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুরোদমে খুলে দেওয়ার পর ঢাকা ফিরে গেছে আগের চেহারায়। সত্যটা হলো, যানজট পরিস্থিতি আগের চেয়ে আরও অনেক খারাপ হয়েছে। ঢাকা এখন প্রায় স্থবির এক শহর। আসাদ এভিনিউতে আমার বাসা থেকে কাওরানবাজারে আমার অফিসের দূরত্ব ৬ কিলোমিটার। সাধারণ সময়ে এটুকু দূরত্ব পেরুতে মিনিট বিশেক সময় লাগে। তবু আমি গড়ে ৪৫ মিনিট সময় হাতে রাখি। কিন্তু গত সপ্তাহে অফিসে আসতে আমার গড়ে দুই ঘণ্টা করে লেগেছে। একদিন প্রায় তিন ঘণ্টা লেগেছে। ঢাকার যানজট সমস্যা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। কিন্তু কোনও কার্যকর সমাধান বের হয়নি।

ছেলেবেলায় আমাদের ছেলে প্রসূন যানজটে খুব বিরক্ত হতো। গাড়িতে বসে সে বলতো, বাবা সামনের গাড়িটা চলে না কেন? আমি জবাব দিতাম, সামনের গাড়ির সামনেও যে গাড়ি আছে। সে জবাব দিতো, সবার সামনের গাড়িটা চলে না কেন। তাহলেই তো যানজট থাকে না। সবার সামনের গাড়িটা চলে না কেন, শিশু মনের এই প্রশ্নের জবাব আমার জানা নেই। আমি অসহায় কণ্ঠে বলতাম, বাবা, ঢাকায় রাস্তা কম, গাড়ি বেশি। তাই যানজট লেগেই থেকে। এর কোনও সমাধান নেই। প্রসূন জবাব দিয়েছিল, গাড়ি কমিয়ে দিলেই হয়। অর্ধেক গাড়ি রাস্তা থেকে তুলে নিলেই তো যানজট কমে যাবে। আমি মজা করে বললাম, অর্ধেক তুলে নেওয়া গাড়িতে যদি তোরটাও থাকে, তাহলে? প্রসূন বললো, তখন তো রাস্তায় জ্যাম থাকবে না। তখন আমরা রিকশা বা সিএনজিতে স্কুলে যাবো। জ্যামে বসে থাকার চেয়ে রিকশা অনেক ভালো। এতদিন বাদে প্রসূনের সেই ভাবনাটি বললেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। তিনি যানজট নিরসনে জোড় তারিখে জোড় নম্বর গাড়ি এবং বেজোড় তারিখে বেজোড় নম্বর প্লেটের গাড়ি রাস্তায় নামার প্রস্তাব বলেছেন। তবে প্রস্তাবটি প্রসূনের ছেলেমানুষি ভাবনার মতোই।

মনে হতে পারে, তাতে রাস্তায় গাড়ি অর্ধেক হয়ে যাবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সেই অর্ধেক গাড়ির মানুষ চলাচল করবে কীভাবে? অফিস-আদালত সব স্বাভাবিক সময়ে রেখে হঠাৎ রাস্তায় গাড়ি অর্ধেক করে দেওয়া কোনও সমাধান হতে পারে না। গণপরিবহন ব্যবস্থা উন্নত করলেই কেবল রাস্তায় ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণের কথা ভাবা যেতে পারে। তারচেয়ে বড় কথা হলো, এর আগে দিল্লি, ব্যাংকক, ম্যানিলা শহরে এই জোড়-বেজোড় প্রক্রিয়া চালু করে আবার তা বাতিলও করতে হয়েছিল। তার মানে এটি একটি পরীক্ষিত অকার্যকর প্রক্রিয়া। তাই এভাবে যানজট সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। কেউ কেউ বলছেন, বিভিন্ন অফিস এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সকাল-বিকাল দুই শিফটে ভাগ করে দেওয়া। তাতে রাস্তার ওপর চাপটা ভাগ হয়ে যাবে। অনেকে মেট্রোরেলের আশায় বসে আছেন। তাদের ধারণা মেট্রোরেল চালু হলেই যানজট কমে যাবে। মেট্রোরেল অবশ্যই ঢাকার যানজট কমাতে সহায়ক হবে। কিন্তু আমার ধারণা তাতে পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হবে না। কারণ, মেট্রোরেল চালু হতে হতে রাস্তায় গাড়ির চাপ আরও বেড়ে যাবে। মেট্রোরেল হয়তো গাড়ির সেই চাপ কিছুটা সামাল দেবে। কিন্তু এক লাইনের মেট্রো দিয়ে যানজট নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। ঢাকার রাস্তায় প্রতিদিনই নতুন নতুন গাড়ি নামে। কিন্তু গাড়ি কমে না একটিও।

সর্বশেষ - আন্তর্জাতিক