গতকাল রাতে রাজধানীতে অস্ত্রধারীদের হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে দু’জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন পথে আরও এক যুবক। নিহতদের একজন হলেন মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু (৫৪)। তিনি নিজ গাড়িতে বসা ছিলেন। অপরজন সামিয়া আফরান জামাল প্রীতি (২২)। যিনি ঘটনার সময় রিকশায় করে তার বান্ধবী সুমাইয়ার বাসায় যাওয়ার পথে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আজ শুক্রবার ভোররাত সুমাইয়া বলেন, ‘প্রীতি তার মা-বাবা ও ছোট ভাইয়ের সঙ্গে পশ্চিম শান্তিবাগে ভাড়া বাসায় থাকতেন। তবে গত ৪ দিন সে খিলগাঁও তিলপাপাড়ায় আমার বাসায় ছিল। সেখান থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাসায় ফিরছিল। তবে, নিজের বাসার কাছে এসেও ফিরে আসতে হয় প্রীতিকে। বাসার কাছাকাছি গেলে প্রীতিকে তার মা হঠাৎ ফোন দিয়ে বলেছিলেন- চট্টগ্রাম থেকে প্রীতির মামা-মামী এসেছেন। সে যেন আজকেও আমার বাসায় থাকে। আগামীকাল যেন বাসায় যায়।
বিষয়টি প্রীতি আমাকে আমি জানিয়ে উত্তর শাহজাহানপুর আমতলা থেকে ফোন দিয়ে সেখানে যেতে বলে। সেখানে আসার পর আমরা খিলগাঁও তিলপাপাড়া যাওয়ার জন্য রিকশা নিই। রিকশায় ওঠার পরপরই হঠাৎ শব্দ শুনি। ২ জনই রিকশা থেকে পড়ে যাই। পরে প্রীতির গায়ে রক্ত দেখে আশপাশের লোকজন বলেন- গুলি লাগছে। তারপর সেখান থেকে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন,’ যোগ করেন সুমাইয়া।
প্রীতির বাবা জামালউদ্দিন বলেন, ‘তার মেয়ে রাজধানীর বদরুন্নেসা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল। সে খিলগাঁওয়ে একটি দোকানে দেড় মাস কাজ করেছিল। তা ভালো না লাগায় চাকরি ছেড়ে দেয়। মাস খানেক হলো সে কোথাও কাজ করছে না।’ এ ঘটনায় শোকাহত প্রীতির মা হোসনে আরা বেগম আক্ষেপের সঙ্গে গণমাধ্যমকে বলেন,‘আমি কী জানতাম এমন দুর্ঘটনা ঘটবে?’
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১০টায় শাহজাহানপুর ইসলামিয়া হাসপাতালের সামনে অস্ত্রধারীরা এই হামলা চালায়। স্থানীয়রা জানিয়েছে, অস্ত্রধারীরা মোটরসাইকেলে করে এসে একটি চলন্ত গাড়ি লক্ষ্য করে এলোপাতারি গুলি চালায়। এসময় গাড়ির ভেতর বসা আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়েন। পাশ দিয়ে যাওয়া
রিকশায় বসা প্রীতি গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তার উপর পড়ে যান। এসময় আরও এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তার উপর পড়ে যায়। এলোপাতারি গুলিতে পুরো এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে। রাত ১১টায় স্থানীয় লোকজন গুলিবিদ্ধ তিনজনকেই উদ্ধার করে দ্রুত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে টিপু এবং প্রীতিকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।