বৃহস্পতিবার , ৩১ মার্চ ২০২২ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. London Mirror Specials
  2. অন্যান্য
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. খুলনা
  6. খেলা
  7. চট্রগ্রাম
  8. জেলার খবর
  9. ঢাকা
  10. তথ্য-প্রযুক্তি
  11. প্রবাসের কথা
  12. বরিশাল
  13. বাংলাদেশ
  14. বিনোদন
  15. ব্যাবসা-বাণিজ্য

ঋণের বোঝায় খুঁড়িয়ে চলছে জিল বাংলা সুগার মিল

প্রতিবেদক

মার্চ ৩১, ২০২২ ৯:১৫ পূর্বাহ্ণ

বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ২১৬ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে খুঁড়িয়ে চলছে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে অবস্থিত বৃহত্তর ময়মনসিংহের একমাত্র চিনিকল জিল বাংলা সুগার মিলস লিমিটেড। নানামুখী প্রতিবন্ধকতার কারণে প্রতি বছর প্রতিষ্ঠানটির ঋণের পরিমাণ বেড়েই চলছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৩-১৪ আখ মাড়াই মৌসুমে ১৭৫ দিনে কারখানাটি ১ লাখ ৪৭ হাজার ৬০৫ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে চিনি উৎপাদন করেছিল ১১ হাজার ৩৯১ মেট্রিক টন। ওই সময় চিনি আহরণের শতকরা হার ছিল ৭ দশমিক ৭২ শতাংশ। এরপর থেকে পর্যায়ক্রমে এ হার কমতে থাকে।

এছাড়া প্রতিষ্ঠার শুরুতে মিলের আখ মাড়াইয়ের সক্ষমতা ৭০ হাজার ৬৯০ মেট্রিক টন ও চিনি উৎপাদনের সক্ষমতা ৫ হাজার ১৫৩ মেট্রিক টন থাকলেও কাঁচামাল সংকট, ঋণের বোঝা ও পুরোনো যন্ত্রাংশের কারণে বর্তমানে তা নাজুক অবস্থায়।

২০১৬-১৭ মৌসুমে ৭৮ দিনে ৬২ হাজার ৪৩৪.৭৪ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে চিনি আহরণ করা হয় ৪ হাজার ৬৬৯ মেট্রিক টন। চিনি আহরণের শতকরা হার ছিল ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ২০১৭-১৮ মৌসুমে ১০২ দিনে ৮৩ হাজার ৩৫৩ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে চিনি উৎপাদন করা হয় ৫ হাজার ৬০৮ দশমিক ৫০ মেট্রিক টন। এসময় শতকরা চিনি আহরণের হার ছিল ৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ। ২০১৮-১৯ মৌসুমে ১০১ দিনে ৮৩ হাজার ৫০৪ দশমিক ২৫ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে চিনি উৎপাদন হয় ৫ হাজার ২২২ মেট্রিক টন, যাতে চিনি আহরণের শতকরা হার ছিল ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ। ২০১৯-২০ মৌসুমে ৮৫ দিনে ৭০ হাজার ৬৮৯ দশমিক ৮০ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে চিনি উৎপাদন হয় ৫ হাজার ১৫৩ মেট্রিক টন, যার মধ্যে চিনি আহরণের শতকরা হার ছিল ৭ দশমিক ২৯ শতাংশ। সবশেষ ২০২১-২২ মৌসুমে ৪৪ দিনে ৩৫ হাজার ৬৯৮ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে চিনি উৎপাদন করা হয় মাত্র ২ হাজার ৪৯৮ মেট্রিক টন। এসময় চিনি আহরণের হার মাত্র ৭ শতাংশ।

jagonews24

জানা গেছে, ১৯৫৮ সালে তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ড সরকারের আর্থিক এবং কারিগরি সহায়তায় জেলা শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তরে যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদবেষ্টিত দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় পাকিস্তান সরকার মিলটি স্থাপন করে। শুরুতে এর নাম ছিল জিল পাক সুগার মিলস লিমিটেড। স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠানটির নাম পরিবর্তন করে জিল বাংলা সুগার মিলস করা হয়। দেশের পূর্বাঞ্চলের ভেতর এটি একমাত্র ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান, যা শিল্প মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের আওতাভুক্ত।

দেশের ১৬টি চিনিকলের মধ্যে জিল বাংলা সুগার মিলস উত্তরাঞ্চলের সীমান্ত জেলা জামালপুরের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান। বর্তমানে বাংলাদেশ সুগার অ্যান্ড ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের অধীনে মিলটি পরিচালিত হয়ে আসছে। সাধারণত নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত মাড়াই কার্যক্রম চলে।

স্থানীয় বাসিন্দা রাসেল, সাইফুল ইসলাম, মেছের আলী, আরিফুল ইসলামসহ আরও অনেকে  জানান, আখের একটি মৌসুম শেষ হতে কমপক্ষে ১৫ থেকে ১৮ মাস সময় লাগে। অথচ লাভ হয় খুব সামান্য। এছাড়া আখের মূল্য পরিশোধে মিল কর্তৃপক্ষের গড়িমসি, শিউর ক্যাশে টাকা পরিশোধে বিলম্বিত হওয়ার কারণে চাষিরা দিন দিন আখ চাষে আগ্রহ হারান।

এছাড়া আখের দাম না বাড়লেও শ্রমিকের দাম, সারের দাম, কীটনাশকের দাম বেশি হওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। মিল থেকে জমি লিজ নিয়ে আবাদ করলে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয় অথচ মৌসুম শেষে মাত্র ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা লাভ হয়। বিষয়টিতে সরকার নজর দিলে আবারও সুদিন ফিরে আসবে বলে মনে করেন তারা।

জিবাসুমি আখচাষি কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আব্দুল মান্নান মোল্লা  বলেন, জিল বাংলা সুগার মিলস বৃহত্তর ময়মনসিংহের একটি ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান। বিগত বছরগুলোতে দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীর কারণে পথে বসেছিল প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে মিলের অবস্থা তুলনামূলক ভালো। এ বছর আখচাষিদের ঠিক সময়ে টাকা পরিশোধ করার কারণে কৃষকদের আখ চাষে আগ্রহ বেড়েছে। ভবিষ্যতে এ ধারা অব্যাহত থাকলে মিলটি আবারও আলোর মুখ দেখবে বলেও জানান তিনি।

jagonews24

এ বিষয়ে জিল বাংলা সুগার মিলের মহাব্যবস্থাপক (অর্থ) শরীফ মো. জিয়াউল হক বলেন, প্রতি কেজি চিনি উৎপাদনে মিলের খরচ ১৪০ টাকা, আর বিক্রি করতে হয় মাত্র ৬৪ থেকে ৭৪ টাকায়। বাকি টাকা ভর্তুকি দিতে হয় সরকারকে।

তিনি আরও বলেন, চলতি অর্থবছর আখ ব্যবসায়ীদের অর্থ দ্রুত পরিশোধ করা হয়েছে। তবে চাকরি থেকে যারা এখন পর্যন্ত অবসরে গেছেন তাদের বেতন ও পিএফসহ ১৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে। যমুনা ও টিএসপি কমপ্লেক্সের কাছে ঋণ তিন কোটি টাকা। এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকের ঋণসহ সব মিলিয়ে প্রায় ২১৬ কোটি টাকা দেনা।

মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রাব্বিক হাসান  বলেন, আমাদের প্রতিযোগিতা ইউরোপ-আমেরিকায় উৎপাদিত বিটের চিনির সঙ্গে। বিটের চিনি আহরণ সহজ হলেও আখ থেকে চিনি আহরণ এতটা সহজ নয়। বাজারে চিনির উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে বিক্রি করতে হয়। প্রতি বছর মিলের যন্ত্রাংশ মেরামত করা হলেও পুরোনো যন্ত্রাংশের কারণে মিলের উৎপাদন প্রতি বছরই কিছু না হ্রাস পাচ্ছে। তবে আমরা সার, বীজ, প্রয়োজনীয় কীটনাশক দিয়ে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করছি।

সর্বশেষ - আন্তর্জাতিক