রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মো. মহিউদ্দিন এবং বাসার কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীরের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।
এ হত্যাকাণ্ড মামলায় বাদীর পক্ষে লড়েছেন অধ্যাপক তাহেরেরই মেয়ে আইনজীবী সেগুফতা তাবাসসুম আহমেদ।
এ ঘটনায় তাবাসসুমের প্রশংসায় ফেসবুকে নেটিজেনরা লিখছেন, ‘স্যালুট! বাপ কা বেটি!’ অর্থাৎ বাবার সুযোগ্য কন্যাকে অভিবাদন।
২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারের ম্যানহোল থেকে অধ্যাপক তাহেরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন তিনি।
বাবাকে হত্যা ঘটনায় তার ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ মতিহার থানায় অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন সে সময়।
বাবার হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত করতে তখন থেকেই মাঠে নামেন মেয়ে সেগুফতা তাবাসসুম। ওই সময় সেগুফ্তা তাবাসসুম ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পড়ছিলেন। বাবা ড. তাহেরই মেয়েকে আইন বিষয়ে ভর্তি করেন।
১৬ বছর ধরে ছায়ার মতো লেগে ছিলেন এ মামলার তথ্য সংগ্রহে।
রাষ্ট্রপক্ষের সঙ্গে সবসময় যোগাযোগ রক্ষা করেছেন; গুরুত্বপূর্ণ নথি ও তথ্য সরবরাহ করেছেন।
নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে অবশেষে সর্বোচ্চ আদালত থেকে খুনিদের শাস্তির রায় নিশ্চিত করেছেন সাগুফতা।
গত ৫ এপ্রিল আপিল বিভাগের রায়ের পর গণমাধ্যমের নিজের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে আপ্লুত হয়ে পড়েন সেগুফতা। সে সময় তার চোখ বেয়ে আনন্দঅশ্রু ঝরছিল।
সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই ছবি এখন ভাইরাল। নেটিজেনদের হৃদয়কে নাড়া দিয়েছে সেগুফদার অশ্রুসিক্ত ও সার্থকতা মুখের ছবি।
ফেসবুকে ভূয়সী প্রশংসা করা হচ্ছে এ আইনজীবীর। অনেকের মতে, বাবার যোগ্য সন্তানের উৎকৃষ্ট উদাহরণ সেগুফতা তাবাসসুম।
তাবাসসুমের প্রশংসা করেছেন আইনজীবীরাই।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রাশিদা চৌধুরী নিলু ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘বাবা হত্যার বিচারের সঠিক রায় পেতে কন্যা সেগুফতা তাবাসসুমের দীর্ঘ ১৬ বছরের ক্লান্তিহীন লড়াই বাংলাদেশের ইতিহাসে অনন্য নজির হয়ে থাকবে। বাবা হত্যার বিচার পেতে কতটুকু দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হলে দীর্ঘদিনের আইনি জটিলতা ডিঙিয়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়, তা করে দেখালেন সাহসী ও দৃঢ়চেতা তাবাসসুম। অনেক অনেক শুভেচ্ছা আর ভালোবাসা সেগুফতা তাবাসসুম আহমেদ।’
সেগুফতার অশ্রুসিক্ত ছবি ফেসবুকে শেয়ার করে এক সাংবাদিক লিখেছেন ‘ছেলে বা মেয়ে বিষয় নয়; শিক্ষিত, যোগ্য, সাহসী সন্তান প্রয়োজন।’
তিনি লেখেন, ‘বাবা হত্যার বিচার নিশ্চিত করার জন্যই আইন বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করে আইনি পেশায় আসেন তাবাসসুম। বাবা হয়ত সেদিন চিন্তাও করেননি, তার কন্যারই আইনি লড়াই করতে হবে বাবা হত্যার বিচার নিশ্চিতে। বাবার হত্যাকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে মাকে সঙ্গে নিয়ে এক কন্যার ধৈর্য ও লড়াই সত্যি প্রশংসার দাবিদার।’
বিষয়টি গণমাধ্যমে আসার পর থেকে অনেকেই সেগুফতা তাবাসসুমকে স্যালুট জানাচ্ছেন। তারা ফেসবুকে লিখছেন, ‘স্যালুট! বাপ কা বেটি!’
অধ্যাপক তাহের হত্যা মামলায় ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালত চারজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং দুইজনকে খালাস দেন। পরে হাইকোর্ট দুই আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে অন্য দুই আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।
যাবজ্জীবন সাজা বহাল থাকা দুজন হলেন – নাজমুল আলম ও আব্দুস সালাম।
খালাসপ্রাপ্ত চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী ও আজিমুদ্দিন মুন্সী। ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ এ ৬ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দিয়েছিল পুলিশ।
পরে নিয়ম অনুযায়ী ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণ) হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি আসামিরা আপিল করেন।
২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল হাইকোর্ট দুই আসামির ফাঁসির দণ্ড বহাল রাখেন এবং অন্য দুই আসামির দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধেও আসামিরা আপিল করেন।
গত ৫ এপ্রিল আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বহাল রাখলেন।
আসামিদের প্রতিটি আপিলেই আইনি লড়াই চালিয়ে গেছেন অধ্যাপক তাহেরেরই মেয়ে আইনজীবী সেগুফতা তাবাসসুম আহমেদ।