২০ জুনের মধ্যে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ নির্বাচন ঘিরে কয়েক মাস ধরে নগরজুড়ে নানা কৌশলে প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত ডজনখানেক সম্ভাব্য মেয়রপ্রার্থী। তবে দিন যত ঘনিয়ে আসছে সম্ভাব্য প্রার্থীরা ততই সরব হয়ে উঠছেন। তাদের মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের হেভিওয়েট প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন।
এদিকে, সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত না থাকলেও বিএনপির বর্তমান মেয়রসহ একাধিক প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে তৎপর।
সচেতন মহলের প্রত্যাশা, একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে এমন একজন নগর পিতা নির্বাচিত হোক, যিনি নগরীর সমস্যা নিয়ে কাজ করবেন। মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়ে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে আরও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
আসন্ন নির্বাচন ঘিরে সম্ভাব্য প্রার্থীরা তাদের প্রার্থিতা জানান দিয়ে নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডে ব্যানার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড ও পোস্টার সাঁটিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও দোয়া চাওয়াসহ প্রার্থিতার জানান দিচ্ছেন তারা। দিন-রাত নেতাকর্মীদের নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে পাড়া-মহল্লায় করছেন গণসংযোগ ও ঘরোয়া বৈঠক।
এছাড়া সম্ভাব্য প্রার্থীরা যোগদান করছেন ছোট-বড় বিভিন্ন সামাজিক ও পারিবারিক অনুষ্ঠানেও। পাশাপাশি জাতীয় দিবসসহ বিভিন্ন উপলক্ষে শোডাউনও করেছেন। নগরীর বিভিন্ন স্থানে অনানুষ্ঠানিক প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিতরণ করেছেন লিফলেটও। এর পাশাপাশি দলীয় মনোনয়ন পেতে ঢাকায় কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন অনেকেই।
এদিকে, সম্ভব্য প্রার্থীদের মধ্যে প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা অধ্যক্ষ আফজাল খানের ছেলে মাসুদ পারভেজ খান ইমরান, কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক কবিরুল ইসলাম শিকদার, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক নুরুর রহমান মাহমুদ তানিম ও যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক অ্যাডভোকেট আনিছুর রহমান মিঠু। তারা সবাই দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী। দল কেন তাদের মনোনয়ন দেবে তার পেছনেও বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেছেন তারা।
অন্যদিকে, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান মেয়র মনিরুল হক সাক্কু, জেলা বিএনপি নেতা কাউসার জামান বাপ্পিও মাঠে রয়েছেন। তবে জাতীয় পার্টিসহ অন্য দলের প্রার্থীরা এখন মাঠে সরব না থাকলেও নির্বাচন এলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সম্ভাবনা রয়েছে।
জানা গেছে, ২০১১ সালের ৬ জুলাই স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে কুমিল্লাকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত করার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। তখন কুমিল্লা পৌরসভা ও সদর দক্ষিণ পৌরসভার ২৭টি ওয়ার্ড নিয়ে সিটি করপোরেশন গঠিত হয়।
একই বছরের ১০ জুলাই গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যায় কুমিল্লা সিটি করপোরেশন আইনের বিষয়টি প্রকাশিত হয়। এরপর নিয়োগ দেওয়া হয় প্রশাসক। দুই পৌরসভা নিয়ে গঠিত সিটির আয়তন ৫৩ দশমিক ০৪ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর দুই দফায় নির্বাচন হয়েছে। দুবারই বিএনপি সমর্থিত মেয়র নির্বাচিত হন মনিরুল হক সাক্কু। তার সঙ্গে প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন জেলা আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতা প্রয়াত অধ্যক্ষ আফজাল খান এবং দ্বিতীয় নির্বাচনে তার মেয়ে বর্তমান সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি আঞ্জুম সুলতানা সীমা। তরা উভয়েই পরাজিত হন।