হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড় থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে লেগুনা চলাচল করছে বেপরোয়াভাবে।
লেগুনা মালিক সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড় থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত ১৮০টি যাত্রীবাহী লেগুনা চলাচল করছে। প্রতিটি লেগুনা থেকে দৈনিক চাঁদা আদায় করা হচ্ছে ৫৭০ টাকা করে। এর মধ্যে চিটাগাং রোডে লাইনম্যানের জন্য ৩০ টাকা, সাইনোবোর্ডে লাইনম্যানের জন্য ২০, যাত্রাবাড়ীতে লাইনম্যানের জন্য ৭০ আর জিপি চাঁদা ৪৫০ টাকা।
এছাড়া স্টিকার লাগানোর জন্য গাড়িপ্রতি মাসিক চাঁদা এক হাজার টাকা। সে হিসাবে স্টিকারসহ ১৮০ গাড়ি থেকে মাসে চাঁদার পরিমাণ দাঁড়ায় ৩২ লাখ ৫৮ হাজার টাকা।
লাইনে নতুন গাড়ি নামাতে হলে ‘সালামি’ দিতে হয় ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা। সে হিসেবে সালামি বাবদ হাতিয়ে নেওয়া কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাইকোর্টের নির্দেশনা অমান্য করে মহাসড়কে লেগুনা চলছে শিমরাইল এক্সপ্রেস লিমিটেড (এসইএল) নামক কোম্পানির ব্যানারে। সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার দায়িত্বে রয়েছেন ওই কোম্পানির এমডি হাসানুজ্জামান পরশ।
যাত্রাবাড়ীতে মনগড়া লেগুনা মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফ মোল্লা। চাঁদা আদায় করছেন কাউসার, অনিক, শাহআলম ও নয়ন নামে চারজন।
শিমরাইলে হাজি আহসান উল্লাহ সুপার মার্কেট ও প্রিয়ম টাওয়ারের সামনে মহাসড়কে লেগুনা স্ট্যান্ড করা হয়েছে। লেগুনার চালক ও হেলপার অধিকাংশই অপ্রাপ্ত বয়স্ক। তাদের নেই কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্স। বেশিরভাগ গাড়ি লক্কড়-ঝক্কড়। ঠিক নেই কাগজপত্র। নেই রুট পারমিট। তবু কর্মরত হাইওয়ে ও ট্রাফিক পুলিশের সামনে দিয়ে মহাসড়কে চলছে এসব লেগুনা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক গাড়ি মালিকের অভিযোগ, মাসিক এক হাজার টাকা চাঁদা দিয়ে গাড়ির সামনে গ্লাসে স্টিকার লাগাতে হয়। এটা বাধ্যতামূলক। স্টিকার না লাগিয়ে গাড়ি সড়কে চলাচল করতে পারে না। করলে চালকদের মারধর, গাড়ি ভাংচুর ও আটকিয়ে রাখেন সমিতির নেতারা।
শিমরাইল এক্সপ্রেস লিমিটেডের এমডি হাসানুজ্জামান পরশ বলেন, লাইনম্যানদের জন্য শিমরাইলে ৩০ টাকা ও সাইনোবোর্ডে ২০ টাকা নেওয়া হয়। জিপি ৪৫০ টাকা চাঁদা নেয় যাত্রাবাড়ীতে মালিক সমিতি। গাড়ি ১৮০টি হলেও দৈনিক রাস্তায় চলে প্রায় দেড়শ। তার মধ্যে দৈনিক চারটি গাড়ি থানা পুলিশকে রিকুইজিশন দিতে হয়।
লেগুনা মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফ মোল্লা বলেন, প্রশাসনের লোক ও সাংবাদিকদের ২০-৩০টি গাড়ি রয়েছে। এসব গাড়ি থেকে জিপি নেওয়া হয় অর্ধেক। অনেকে দেয় না। লাইনম্যানদের জন্য কিছু টাকা তোলা হয়।
সমিতির সভাপতি পলাশ চাঁদা আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, যেসব গাড়ি মালিকরা অভিযোগ জানিয়েছেন তাদের আমার সামনে নিয়ে আসেন।
চিটাগাং রোড ও সাইনবোর্ডে দায়িত্বে থাকা হাইওয়ে পুলিশের টিআই (প্রশাসন) সরফুদ্দিন লেগুনা চলাচলের বিষয়ে কথা বলতে অনীহা প্রকাশ করে শুধু বলেন, আগে যেভাবে চলছে এখনো সেভাবেই আছে।
হাইওয়ে পুলিশের নারায়ণগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার অমিত সূত্রধর বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী মহাসড়কে লেগুনা চলাচল করতে পারবে না। চাঁদাবাজির বিষয়টি আমার জানা নেই। মহাসড়কে লেগুনা চললে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।