যশোরের মণিরামপুর উপজেলার ১৭ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের শীর্ষ ১৯ নেতা গণপদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টচার্যকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে।
তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মতামত উপেক্ষা করে অর্থের বিনিময়ে অযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের পকেট কমিটি করার অভিযোগ এনে শনিবার বিকালে প্রেস ক্লাব যশোর মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন পদবঞ্চিত নেতারা।
সম্মেলন করতে এসে প্রেস ক্লাবের সামনে হামলায় ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত অন্তত ১০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়- ২৯ এপ্রিল জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সালাউদ্দিন কবির পিয়াস ও সাধারণ সম্পাদক তানজীব নওশাদ পল্লবের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে মণিরামপুর উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়।
একই সঙ্গে পাঁচ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটির সভাপতি করা হয় মাহমুদুল হাসান রকি ও সাধারণ সম্পাদক করা হয় রমেশ দেবনাথকে।
ওই কমিটিতে একজন সহসভাপতি একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও একজনকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়।
ঘোষিত উপজেলা কমিটিতে অনভিজ্ঞ, বিতর্কিত, রাজনৈতিক ভারসাম্যহীন এবং সদ্য এসএসসি পাশ করা ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
ঘোষিত উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটিকে ‘শিশু কমিটি’ আখ্যা দিয়ে খেদাপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের আহ্বায়ক হাদিউজ্জামান ফয়সাল বলেন, কমিটির সভাপতি মণিরামপুর বাজারের ফাস্টফুড ব্যবসায়ী এবং তার শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি পর্যন্ত। এমনকি উপজেলায় ছাত্রসমাজের কাছে তিনি বিবাহিত ও ডিভোর্সি হিসেবে সমালোচিত। সাধারণ সম্পাদক রমেশ দেবনাথ যিনি মনোনীত হয়েছেন তার কোনো ছাত্রত্বের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। যুগ্ম সাধারণ পদে এসএম বাপ্পী হুসাইন তার কোনো ইউনিয়ন বা ওয়ার্ড শাখার কোনো সাধারণ সদস্য পদ নাই। সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুর রহমান অভি তিনি সদ্য এসএসসি পাস এবং ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডে তাকে দেখা যায়নি। তারা সবাই মণিরামপুর উপজেলা ছাত্রলীগের অপরিচিত মুখ।
তিনি বলেন, আমরা দীর্ঘদিন উপজেলা রাজনীতি সংক্রিয় থেকেও আমরা পদ পদবি না পেয়ে হতাশ। অর্থের বিনিময়ে বিতর্কিত ও অযোগ্যদের পদ দেওয়া হয়েছে। এ সব কর্মকাণ্ডের মূলহোতা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টচার্য্যকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছি। একই সঙ্গে উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নের সংক্রিয় সভাপতি-সম্পাদক এবং আহ্বায়করা গণপদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগ নেতা হাদিউজ্জামান ফয়সাল বলেন, ছাত্রলীগের কমিটিতে বিতর্কিত নেতাদের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করতে এসে প্রেস ক্লাব সামনে সন্ত্রাসীদের কাছে হামলার শিকার হয়েছি। এ ঘটনায় ১০ জন ছাত্রলীগ নেতা আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে মণিরামপুর সরকারি কলেজের আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান ও ভোজগাতি ইউনিয়নের আহ্বায়ক হারুন অর রশিদ গুরুত্বর আহত হয়েছেন। তারা শহরের একটি বাড়িতে সন্ত্রাসীদের ভয়ে আত্মগোপনে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানান।
তবে কারা এ হামলার সঙ্গে জড়িত সংবাদ সম্মেলনে তাদের নাম প্রকাশ করেননি তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানিয়েছেন, মণিরামপুর উপজেলা ছাত্রলীগের নেতারা যখন প্রেস ক্লাব যশোরের সামনে দাঁড়ান, তখন যশোর সরকারি এমএম কলেজ ছাত্রলীগ নেতা সৌরভ ভট্টাচার্য্য এবং ছাত্রলীগ নেতা রাব্বীর নেতৃত্বে ৮-১০ যুবক আসেন। এরপর মণিরামপুর থেকে আসা ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে তারা বাগবিতণ্ডায় জড়ান। একপর্যায়ে সৌরভ ভট্টাচার্য্যের সঙ্গে থাকা ছাত্রলীগ নেতা রাব্বী, এনামুলসহ ৮-১০ জন যুবক পদবঞ্চিতদের সবাইকে ডেকে নিয়ে সার্কিট হাউসের দিকে যায়। সেখানে হাতুড়ি, লাঠি, হকস্টিক দিয়ে বেধড়ক মারপিট করতে থাকেন। পরে সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেলে তারা পালিয়ে যান।
এ বিষয়ে যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানজীব নওশাদ পল্লব সাংবাদিকদের জানান, মণিরামপুরে একটি সুন্দর কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে আরও কয়েকজন ত্যাগী নেতার নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কেন্দ্রে নাম প্রস্তাবনা করা হয়েছে। পদবঞ্চিতদের ওপর যারা হামলা চালিয়েছে তারা কেউ ছাত্রলীগের নেতা না। তারপরও এমন হামলার ঘটনার সঙ্গে যদি কোনো ছাত্রলীগ নেতা জড়িত থাকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।