সোমবার , ৯ মে ২০২২ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. London Mirror Specials
  2. অন্যান্য
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. খুলনা
  6. খেলা
  7. চট্রগ্রাম
  8. জেলার খবর
  9. ঢাকা
  10. তথ্য-প্রযুক্তি
  11. প্রবাসের কথা
  12. বরিশাল
  13. বাংলাদেশ
  14. বিনোদন
  15. ব্যাবসা-বাণিজ্য

চাঁদপুরে সাজাপ্রাপ্ত তারেক রহমানের বক্তব্য নির্বিঘ্নে প্রচার নিয়ে প্রশ্ন!

প্রতিবেদক

মে ৯, ২০২২ ৫:৫৩ অপরাহ্ণ

হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ঘটা করে চাঁদপুরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত ও পলাতক আসামী তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচার নিয়ে আলোচনা চলছে রাজনৈতিক মহলে। রীতিমতো তোলপাড় চলছে চাঁদপুরের রাজনীতিতে। হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিশাল মাঠ জুড়ে লাইভে তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারে একদিকে যেমন প্রশ্নের মুখে পড়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা অন্যদিকে তৃণমূলের প্রশ্নের মুখে পড়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। বিষয়টিতে জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের নীরবতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।

আইন অমান্য নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে সমালোচনা চললেও এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপের খবর মেলেনি। তবে ‘এটা আমাদের বিষয় না’-এমন মন্তব্য করে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বলছেন, ‘এটা নিয়ে কেন এত কথা বলেন। এ নিয়ে কথা বলতে চাই না।’ গত ৩০ এপ্রিল চাঁদপুর জেলা বিএনপি আয়োজিত ইফতার ও দোয়া মাহফিলে একাধিক মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি কর্মসূচিতে অংশ নেয়া নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেছেন, ঐদিন শত শত নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে পুরো অনুষ্ঠান বিরাট এলাকাজুড়ে মাইকে প্রচার করা হলেও পুলিশ, প্রশাসন ও আওয়ামী লীগ বা সহযোগী সংগঠনের কেউ এতে বাধা দেয়নি। একঘণ্টা ১০ মিনিট ৫৮ সেকেন্ডের ওই অনুষ্ঠান ইউটিউব ও ফেসবুকেও ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের তারেক রহমানের কর্মসূচির কথা জানালেও তারা চুপ ছিলেন বলে অভিযোগ নেতাকর্মীদের। জেলার সাবেক ও বর্তমান ছাত্রলীগের অনেক নেতা-ই আওয়ামী লীগ নেতাদের কর্মকান্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

কথা বলে জানা গেছে, ঐদিন বিকেলে চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের বাসভবনে অনুষ্ঠিত ইফতার ও দোয়া মাহফিলে চাঁদপুর জেলা বিএনপি’র সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট সলিম উল্যাহ সেলিমের পরিচালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এডভোকেট বোরহান উদ্দিন। প্রধান বক্তা ছিলেন কুমিল্লা বিভাগীয় বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া। বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আব্দুস সাত্তার পাটওয়ারী, এম এ হান্নানও বক্তব্য রাখেন। শত শত নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে পুরো অনুষ্ঠান বিরাট এলাকাজুড়ে মাইকে প্রচার করা হয়।

চাঁদপুরের বিএনপির সাবেক এমপি এহসানুল হক মিলনের দলে পদাবনতি হলে সেখানে সংগঠন চাঙা করতে ঐদিন তারেক রহমান দীর্ঘ বক্তব্য রাখেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা, অর্থ পাচার ও দুর্নীতির মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত তারেক রহমানের বক্তব্য বিবৃতি প্রচার বা প্রকাশ নিষিদ্ধ করতে ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি সরকারকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। রিট আবেদনকারী আইনজীবীরা বলেছেন, আদালতের আদেশ অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ছাড়াও সোশ্যাল মিডিয়া ও অনলাইনের ক্ষেত্রেও এ নির্দেশনা প্রযোজ্য। তবে চাঁদপুরের ঘটনায় হাইকোর্টের আদেশ অগ্রাহ্য হয়েছে।

চাঁদপুরের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এ্যাডভোকেট রণজিৎ রায় চৌধুরী ইতোমধ্যেই বলেছেন, সাজাপ্রাপ্ত আসামী তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচার ও প্রকাশ বেআইনী। যারা এটা করেছে তারাও অপরাধ করেছে। পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় এবং জেলা আওয়ামী লীগের নীরবতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

চাঁদপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এ্যাডভোকেট রুহুল আমীন বলেছেন, ঐদিনের সভায় তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচার করায় হাইকোর্টের আদেশ অবমাননা হয়েছে। বিষয়টি আদালতের দৃষ্টিগোচর হলে অবশ্যই শাস্তি হবে বলে মনে করেন তিনি।

বিষয়টিতে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের অসন্তোষ যেমন আছে তেমনি আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের নীরবতাকেও তারা বলছেন ‘রহস্যজনক’। বিএনপি ও তারেক রহমানের ইস্যুতে নীরব থাকায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

জেলা ছাত্রলীগের এক নেতা বাহান্ন নিউজকে বলেছেন, ‘আমরা কথা বলতে পারছি না। বিষয়টি নিয়ে অনেকেই কথা বলছেন। এতদিনে কোন প্রতিবাদ তো দূরের কথা আজ পর্যন্ত একটি প্রতিবাদ বিবৃতিও দেননি আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সেক্রেটারি। আমরা বলেছি, প্রশাসন কি করল সেটা তাদের বিষয়, কিন্তু আওয়ামী লীগ কেন নীরব? আওয়ামী লীগ কি করছে? এ প্রশ্নের কোন জবাব আমরা পাচ্ছি না।’

চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা-ই প্রশ্ন তুলেছেন ঘটা করে তারেক রহমানের কর্মসূচিতে সভাপতি ও সেক্রেটারির নীরবতা নিয়ে। জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন,‘আদালত কর্তৃক একজন দণ্ডিত আসামীর বক্তব্য আদালতের নিষেধাজ্ঞা লংঘন করে প্রচার করানোর বিষয়ে আমরা ভেবেছিলাম প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ, বিবৃতি এবং রাজনৈতিক কর্মসূচি নেয়া হবে। কিন্তু কোন পদক্ষেপ আজ পর্যন্ত দেখা যায়নি। বিষয়টি রহস্যজনক।’

আদালতের আদেশ অমান্য নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে সমালোচনা চললেও এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপের খবর মেলেনি। জানা গেছে, স্থানীয় সংসদ সদস্য শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি তখন ওমরাহ পালন করতে সৌদি আরব ছিলেন। দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। কথা বলার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা এম এ খায়েরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘স্যার (শিক্ষামন্ত্রী) ঐ ঘটনার সময় ওমরাহ পালন করতে সৌদি আরব ছিলেন।’

তাহলে দলের নেতাকর্মীদের অভিযোগের বিষয়ে কি বলছেন চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক? সভাপতি মো. নাছির উদ্দিন আহমেদকে দলের নেতাকর্মীদের অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বাহান্ন নিউজকে বলেন, ‘এ বিষয় নিয়ে আপনারা কেন বাবাবার কথা বলেন? আমরা কি বিএনপির ইফতারে গিয়ে ঢুকব নাকি? এ বিষয়ে কথা বলতে চাই না। বিএনপি আইন মানে না। আমরা কি করব। অন্য বিষয়ে কথা বলেন। এ বিষয়ে কথা বলতে চাই না।’

সাধারণ সম্পাদকও বিএনপি ও তারেক রহমানের এ কর্মসূচি নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে রাজি হলেন না। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম পাটোয়ারী দুলাল বলেন, ‘এটা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিষয়। এটা আমাদের বিষয় না। এ বিষয়ে কথা বলতে চাই না।’ ঘটা করে তারেক রহমান রীতিমতো সমাবেশ করেছে। এটি জেলার শীর্ষ নেতাদের ব্যর্থতা-সাধারণ নেতাকর্মী ও বিভিন্ন শ্রেণীর নেতৃবৃন্দের এমন অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম পাটোয়ারী দুলাল  বলেন, ‘না, এটা কিসের ব্যর্থতা। এটা যদি আমাদের ব্যর্থতা হয় তাহলে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠানে যে তারেক রহমান বক্তব্য রাখে সেটাও তো আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের ব্যর্থতা। এ নিয়ে আর কথা বলতে চাই না।’

তবে শীর্ষ দুই নেতা এড়িয়ে গেলেও বিষয়টি স্বাভাবিক নয় বলে মনে করছেন স্থানীয় সাংবাদিক দৈনিক চাঁদপুর কন্ঠের বার্তা সম্পাদক এ এইচ এম আহসান উল্লাহ। তিনি বলছিলেন, ‘আদালত কর্তৃক একজন দণ্ডিত আসামীর বক্তব্য আদালতের নিষেধাজ্ঞা লংঘন করে প্রচার করানোর বিষয়ে আমরা ভেবেছিলাম প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে। জেলা আওয়ামী লীগ থেকে প্রতিবাদ, বিবৃতি এবং রাজনৈতিক কর্মসূচি নেয়া হবে। কিন্তু ঘটনার এতোদিন পরও প্রশাসন থেকেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি এবং আওয়ামী লীগ থেকেও এ পর্যন্ত কোন বিবৃতি দেয়া হয়নি। প্রশাসন ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নীরবতা রহস্যজনক ও প্রশ্নবিদ্ধ।

সর্বশেষ - আন্তর্জাতিক