শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫
শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫

পেট্রোবাংলার ভ্যাট ফাঁকি ২৩ হাজার কোটি, বিপাকে এনবিআর

বাংলাদেশ তৈল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) কাছে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্কবাবদ বকেয়া রাজস্বের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা। বছরের পর বছর ধরে ফাঁকি দেওয়া এ অর্থ আদায় নিয়ে বিপাকে পড়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

একদিকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে বকেয়া রাজস্ব আদায় করতে না পারা, অন্যদিকে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে হাজার হাজার কোটি টাকার ঘাটতি— সবকিছু মিলিয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে প্রতিষ্ঠানটি (এনবিআর)। সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত পেট্রোবাংলার কাছে নিরঙ্কুশ বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার ৬০১ কোটি ৪ লাখ টাকা। এর সঙ্গে চলতি অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত বকেয়া ৩৭৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকা যোগ করলে বকেয়া ভ্যাটের পরিমাণ দাঁড়ায় ২২ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা।

পেট্রোবাংলার কাছে বকেয়া রাজস্ব আদায় করতে দাবিনামা ও চিঠি দিয়ে যাচ্ছে এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ)। কিন্তু কোনোভাবেই তা আদায় হচ্ছে না। কারণ হিসেবে পেট্রোবাংলা বলছে, তাদের কাছে কোনো টাকা নেই। ফলে এনবিআরের দাবি করা ভ্যাট পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।

 

বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির বকেয়া পরিশোধের ক্ষমতা নেই। আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়কে অ্যাডজাস্টমেন্ট (সমন্বয়) করার জন্য অনুরোধ করেছি। এনবিআর কর্তৃপক্ষ যে স্থিতির (ব্যাংক) কথা বলছে, আসলে বর্তমানে আমাদের হিসাবে জমা টাকা নেই। যা ছিল এলএনজি খাতে বিনিয়োগে ব্যয় হয়েছে। এখন বরং আমাদের বিভিন্ন বিল সরকার থেকে এনে পরিশোধ করতে হচ্ছে

অন্যদিকে এনবিআরের ভ্যাট বিভাগ বলছে, পেট্রোবাংলার ব্যাংক হিসাবে বড় অঙ্কের অর্থ স্থিতি অবস্থায় রয়েছে। তাছাড়া তারা প্রতি বছর মুনাফাও করছে। যা দিয়ে বকেয়া পরিশোধ সম্ভব

পেট্রোবাংলা বলছে, তাদের কাছে কোনো টাকা নেই। ফলে এনবিআরের দাবি করা ভ্যাট পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না / ঢাকা পোস্ট

এছাড়া অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাহায্য নিয়েও রাজস্ব পরিশোধের একটি উপায় বের করতে পারে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু বারবার তাগাদা দিয়েও রাজস্ব আদায় হচ্ছে না বলে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র  জানিয়েছে।

বকেয়া অর্থ কেন পরিশোধ হচ্ছে না— এমন প্রশ্নের জবাবে পেট্রোবাংলার মহাব্যবস্থাপক (এফএমডি) মো. গোলাম মোর্তযা  বলেন, বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির বকেয়া পরিশোধের ক্ষমতা নেই। আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়কে অ্যাডজাস্টমেন্ট (সমন্বয়) করার জন্য অনুরোধ করেছি। এনবিআর কর্তৃপক্ষ যে স্থিতির (ব্যাংক) কথা বলছে, আসলে বর্তমানে আমাদের হিসাবে জমা টাকা নেই। যা ছিল এলএনজি খাতে বিনিয়োগে ব্যয় হয়েছে। এখন বরং আমাদের বিভিন্ন বিল সরকার থেকে এনে পরিশোধ করতে হচ্ছে।

 

সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত পেট্রোবাংলার কাছে নিরঙ্কুশ বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার ৬০১ কোটি ৪ লাখ টাকা। এর সঙ্গে চলতি অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত বকেয়া ৩৭৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকা যোগ করলে বকেয়া ভ্যাটের পরিমাণ দাঁড়ায় ২২ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা

‘এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের (জ্বালানি মন্ত্রণালয়) মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয়কে ভর্তুকি হিসেবে দেখানোর জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। অ্যাডজাস্টমেন্ট না হওয়া পর্যন্ত ভ্যাট কর্তৃপক্ষের দাবিনামা থাকবেই। কিন্তু আমাদের টাকা দেওয়ার ক্ষমতা নেই।’

 

অন্যদিকে, এনবিআরের ভ্যাট বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, পেট্রোবাংলা একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। ভ্যাট আইন অনুসারে তাদের বারবার দাবিনামা ও তাগাদা দিয়ে যাচ্ছি বকেয়া রাজস্ব সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার জন্য। এছাড়া কী করতে পারি, তাদের ব্যাংক হিসাব তো আমরা ফ্রিজ করতে পারি না। তাদের গাফিলতির কারণে প্রতি বছর আমাদের বড় অঙ্কের রাজস্ব ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠান হিসেবে এনবিআর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর সমাধান হওয়া দরকার।

এফএমডি) বরাবর বকেয়া পরিশোধে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, পেট্রোবাংলার নিকট পূর্বের অর্থাৎ ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত মোট বকেয়ার পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৬০১ কোটি ৪ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত বকেয়া ৩৭৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। বকেয়া পাওনা আদায়ে পেট্রোবাংলা দপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধির সঙ্গে টেলিফোনে আলোচনাসহ বৃহৎ করদাতা ইউনিট (মূসক) দপ্তর ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত সভায় চলতি অর্থবছরে পেট্রোবাংলা বৃহৎ করদাতা ইউনিটের কোনো মূসক ও সম্পূরক শুল্ক বকেয়া রাখবে না বলে জানায়। পেট্রোবাংলা কর্তৃপক্ষ পূর্বের বকেয়া ২২ হাজার ৬০১ কোটি ৪ লাখ টাকা বুক অ্যাডজাস্টমেন্ট (কাগজে-কলমে প্রাপ্তি) করার মাধ্যমে পরিশোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলেও সম্মতি দিয়েছিল। কিন্তু বকেয়া পাওনা পরিশোধ করা হচ্ছে না।

পেট্রোবাংলার ব্যাংকে জমা করা টাকার পরিসংখ্যান তুলে ধরে চিঠিতে বলা হয়, পেট্রোবাংলার ওয়েবসাইট হতে পাওয়া তথ্যানুসারে প্রতিষ্ঠানটির ২০১৯-২০ অর্থবছরের সিএ ফার্ম কর্তৃক সম্পাদিত বার্ষিক নিরীক্ষা প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, উক্ত অডিট রিপোর্টের পাতা- ২০ অনুযায়ী ৩৯টি এসটিডি ব্যাংক হিসাবের বিপরীতে প্রায় ১০ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা স্থিতি রয়েছে। পৃষ্ঠার ২৫-৩২ অনুযায়ী ৩৮২টি এফডিআর ব্যাংক হিসাবের বিপরীতে প্রায় সাত হাজার ১১১ কোটি টাকা পেট্রোবাংলার ব্যাংক হিসাবে স্থিতি রয়েছে।

এছাড়া অডিট রিপোর্টের পাতা- ২২ অনুযায়ী শুল্ক ও ভ্যাটের হিসাবে সুদবাবদ ৩ কোটি টাকা আয় প্রদর্শিত আছে। পেট্রোবাংলা শুল্ক ও ভ্যাট খাতের টাকা যথাসময়ে সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান না করে উক্ত অর্থ এফডিআর ও এসটিডি লগ্নি করে তার ওপর সুদ হিসাবে আয় করছে। কিন্তু মূসকের পাওনা জমা প্রদান করছে না। অথচ আর্থিক সংস্থান না থাকায় বকেয়া মূসক পরিশোধ করা হচ্ছে না বলে বিভিন্ন সময়ে ভ্যাট বিভাগকে অবহিত করা হয়েছে। যদিও সিএ ফার্ম কর্তৃক সম্পাদিত বার্ষিক নিরীক্ষা প্রতিবেদন বিশ্লেষণ অনুযায়ী পেট্রোবাংলার সরকারি নিরঙ্কুশ বকেয়া রাজস্ব পরিশোধের সক্ষমতা রয়েছে। তারপরও উল্লিখিত বকেয়া মূসক পরিশোধ না করা অনভিপ্রেত।

Facebook
X
WhatsApp
Email
Telegram
সর্বশেষ
ফেসবুক নেটওয়ার্ক ও পার্টনার পেজ
মিডিয়া
Cover for Table Talk Uk
595,824
Table Talk Uk

Table Talk Uk

Table Talk UK Discusses the political and social issues of the country. Our only purpose is to expose social inconsistencies and politics in the face of accountability on the path to democracy and talk about the rights of people.

This message is only visible to admins.
Problem displaying Facebook posts. Backup cache in use.
PPCA Error: Due to Facebook API changes it is no longer possible to display a feed from a Facebook Page you are not an admin of. The Facebook feed below is not using a valid Access Token for this Facebook page and so has stopped updating.

Smash Balloon Custom Facebook Feed WordPress Plugin The Custom Facebook Feed plugin

সর্বশেষ সংবাদ জানতে—এখনই সাবস্ক্রাইব করুন!
শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫
কপিরাইট © 2025 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত — লন্ডন মিরর।
সম্পাদক: হাসিনা আক্তার
সার্চ করুন
লগইন/সাইন আপ
সর্বশেষ সংবাদ জানতে—এখনই সাবস্ক্রাইব করুন!