আশা ছিল ১২০-১২৫ এর মধ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বেধে ফেলবে বাংলাদেশ। মিরাজ- শরীফুলের বোলিং নৈপুণ্যে ১০০ রানের আগেই ৭ উইকেট হারিয়ে ফেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু তা আর হলো না। শেষ উইকেটে ফিলিপ-সিলিসের ৩৯ রানের জুটিতে ১৪৯ রান সংগ্রহ করে ক্যারিবীয়রা।
কার্টল ৪১ ওভারের জন্য দেড়শ রান টার্গেট বাংলাদেশের জন্য অতোটা সহজ লক্ষ্যও ছিল না।
তবে সেই লক্ষ্য সহজের পূরণ করেছে বাংলাদেশ। তা অর্জনে উইকেট বিসর্জন দিতে হয়েছে ৪টি।
গয়ানায় তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটি ৫৫ বল হাতে রেখেই ৬ উইকেটে জিতল বাংলাদেশ।
তিন ম্যাচের সিরিজটি ১-০ তে এগিয়ে গেল তামিম বাহিনী।
টেস্টে হোয়াইটওয়াশ আর বৃষ্টির কল্যাণে টি-টোয়েন্টিতে সিরিজ হারের পর ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে প্রথম জয়ের দেখা পেল টাইগাররা।
শুরুতে স্পিনার আকিল হোসেনের বলে এলবিডব্লিউয়ের শিকার হন ওপেনার লিটন দাস। ৯ বলে মাত্র ১ রান করেন। যদিও আম্পায়ার্স কলে সন্তুষ্ট নন তিনি। রাগে গজগজ করতে করতে মাঠ ছাড়েন।
লিটনকে শুরুতেই হারিয়েও ব্যাট চালানো থামাননি অধিনায়ক তামিম। ৪ বাউন্ডারি ও এক ছক্কায় ২৫ বলে ৩৩ রানও করে ফেলেন।
কিন্তু ৭.৪ ওভারে শেফার্ডের বলে রান নিতে গিয়ে রানআউটের শিকার হয়ে ফেরেন তামিম।
এরপর দলের হাল ধরেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ২০তম ওভার পর্যন্ত টেনে নিয়ে যান খেলাকে। ১৯.৩ ওভারে গুডাকেশ মতির ফ্লাইটেড ডেলিভারিতে পুরানের হাতে ক্যাচ তুলে দেন শান্ত। ৫ বাউন্ডারিতে ৪৬ বলে ৩৭ রানে থামে তার ইনিংস।
তিন উইকেটে ১০০ পার করে বাংলাদেশ।
২১তম ওভারে ব্যক্তিগত ২০ রানের মাথায় জীবন পান মাহমুদউল্লাহ। পুরানের তৃতীয় ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে যান তিনি। কিন্তু আম্পায়ার নো বল ডাকায় রক্ষা পান মাহমুদউল্লাহ।
দ্বিতীয় জীবনের মূল্য রাখেন টি-টোয়েন্টির অধিনায়ক। প্রথমে আফিফ ও পরে নুরুল হাসান সোহানকে সঙ্গে নিয়ে খেলা শেষ করে মাঠ ছাড়েন।
আফিফ ১৭ বলে ৯ রান করে আউট হয়ে গেলেও ভালো খেলেছেন সোহান। একটি করে বাউন্ডারি আর ছক্কায় ২৭ বলে ২০ রান করেছেন।
অন্যদিকে দুটি বাউন্ডারি আর একটি ছক্কা হাঁকিয়ে ৬৯ বলে ৪১ রানের ধৈর্যশীল ইনিংস খেলেছেন মাহমুদউল্লাহ।
শেষ ১১ ওভারে প্রয়োজন পড়ে ১১ রানের। সেই ১১ রান করতে তিন ওভার খরচ করেছেন মাহমুদউল্লাহ-সোহান জুটি।
৩২তম ওভারের ৫ম বলটি চার হাঁকিয়ে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন মাহমুদউল্লাহ।
উইন্ডিজ বোলারদের পক্ষে ১টি করে উইকেট শিকার করেছেন আকিল হোসেন, গুদাকেশ মতি ও নিকোলাস পুরান।
এর আগে কার্টেল ওভারের প্রথম ওয়ানডেতে দারুণ বোলিং করে বাংলাদেশ।
সকালের বৃষ্টিতে মাঠ ভেজা থাকায় সোয়া দুই ঘণ্টা দেরিতে শুরু হওয়া ম্যাচ নেমে আসে ৪১ ওভারে।
টসে জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম ইকবাল।
ম্যাচ শুরুতে স্পিনজাদুতে নিজের প্রথম ওভারে কোনো রানই দেননি নাসুম আহমেদ। এরপর নিজের প্রথম ওভারেই মারকুটে ব্যাটার শাই হোপের স্টাম্প ভেঙে দেন পেসার মোস্তাফিজুর রহমান। শাই হোপকে রানের খাতাই খুলতে দেননি কাটার মাস্টার।
১২তম ওভারে অবিশ্বাস্য এক ডেলিভারিতে কাইল মায়ার্সকে বোল্ড করেন দেন মিরাজ। মায়ার্স থামেন ২৭ বলে ১০ রানে।
ব্রান্ডন কিংকে নিয়ে শামারাহ ব্রুকস দলকে সামলে নিয়ে যাচ্ছিলেন ভালোই। কিন্তু ২১তম ওভারে গিয়ে ভেলকি দেখান পেসার শরীফুল ।
পর পর দুই বলে তুলে নেন কিং ও ব্রুকসকে। শরীফুলের হ্যাটট্রিক চান্সটি মিস করে দেন রভম্যান পাওয়েল।
২১তম ওভারটি মেডেন ও দুই উইকেট শিকার করেন শরীফুল।
ওভারের ৪র্থ বলটি স্টাম্পের উপর গুড লেন্থে করেন শরীফুল। যা তুলে মারতে গিয়ে মিডঅফে এনামুল হকের তালুবন্দি হন কিং। ৩১ বলে ৮ রান করে ফেরেন কিং।
শরীফুলের পরের বলটি পয়েন্টে মারতে গিয়ে ঠিকভাবে খেলতে পারেননি ব্রুকস। উইকেটকিপার নুরুল হাসান সোহানের গ্লাভসে ধরা পড়েন। শেষ হয় তার ৬৬ বলে ৩৩ রানের ইনিংস।
ওভারের শেষ বল তথা হ্যাটট্রিক চান্সের ডেলিভারিটি পা বাড়িয়ে প্যাডে প্রতিহত করেন পাওয়েল। হালকা আবেদন করেন ফিল্ডাররা। তবে আম্পায়ার তাতে সাড়া দেননি।
তবে পাওয়েলকে বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকতে দেননি মিরাজ।
শরীফুলকে হতাশ করলেও মিরাজের ভেলকি থেকে বাঁচেননি এ ক্যারিবীয় ব্যাটার। ২৫.৩ ওভারে মিরাজের গুড লেন্থের বলটি টার্ন করে স্টাম্পে ঢোকে। পাওয়েল পরাস্ত হন। তার সামনের পায়ে লাগলে লেগ বিফরের আবেদন জানান মিরাজ। আম্পায়ার উইলসন আঙুল তুলে দেন। কিন্তু পাওয়েল রিভিউ নেন। তবে রক্ষা হয়নি তার। রিভিউতে দেখা যায় লেগ স্টাম্প উড়ে যেত পাওয়েলের।
১১ বলে ৯ রান করে সাজঘরে ফেরেন পাওয়েল।
এ দুই বোলার পেস ও স্পিনজাদুতে ১০০ রান করার আগেই ৭ উইকেট হাওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের।
২৮তম ওভারে নিকোলাস পুরান বোল্ড করেন মিরাজ। ২৪ বলে ১৮ রান করে সাজঘরে ফেরেন ক্যারিবীয় এই মারকুটে ব্যাটার।
এরপর ৩১তম ওভারে সেই মিরাজের কীর্তিতে রানআউট হয়ে ফেরেন আকিল হোসেন। ১২ বলে মাত্র ৩ রান করতে পারেন আকিল।
৩১ ওভারে ৯৭ রানেই ৭ উইকেট হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
এমন বিপর্যয়ে দলের হাল ধরতে চেষ্টা করেন রোমারিয় শেফার্ড ও গুডাকেশ মতি। কিন্তু ব্যর্থ হন তারা সেই মিরাজ ও শরীফুলের কারণে।
৩৪তম ওভারে ফের দুটি উইকেট তুলে নেন শরীফুল। প্রথম বলে আফিফের হাতে শেফার্ড আর ৪র্থ বলে মিরাজের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মতি।
শেফার্ড ১৮ বলে ১৬ রান করেন আর মতি ১১ বলে ৭ রান।
শেষ দিকে ফিলিপের ২২ বলে ২১ ও সিলিসের ২৩ বলে ১৬ রানের সুবাদে ১৪৯ রান পর্যন্ত যেতে পারে ক্যারিবীয়রা।