সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫

আন্দোলনে গ্রেফতার নয়- এ বক্তব্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত : রাজনীতিবিদদের প্রতিক্রিয়া

‘যারা আন্দোলন করছেন তাদের কাউকে যেন গ্রেফতার করা না হয় বা ডিস্টার্ব করা না হয়’-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করছে দেশের প্রথম সারির বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। এসব দলের সিনিয়র নেতাদের মতে, নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারের এটি কোনো কৌশল হতে পারে। তবে প্রধানমন্ত্রী যদি তার কথায় সত্যিই আন্তরিক থাকেন, ভবিষ্যৎই তা প্রমাণ করবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কথায় আস্থা রাখতে পারছেন না তারা। কারণ এর আগেও একই ধরনের বক্তব্যের পর তারা কোনো প্রতিফলন দেখতে পাননি। বরং বাস্তবে মাঠের চিত্র পুরো উলটো। অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে ইতিবাচকও বলছেন কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের নেতারা। তাদের মতে, বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন করার অধিকার আছে। তাই প্রধানমন্ত্রী খুবই স্পষ্ট ও ন্যায্য কথাই বলেছেন। বিরোধীদের রাস্তায় নেমে কথা বলাকে স্বাভাবিকভাবে দেখার চেষ্টা করেছেন।

রোববার গণভবনে আওয়ামী লীগের আটটি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকদের সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিরোধী দল একটা সুযোগ পাচ্ছে, তারা আন্দোলন করবে, করুক। আমি আজকেও নির্দেশ দিয়েছি খবরদার যারা আন্দোলন করছে তাদের কাউকে যেন গ্রেফতার করা না হয় বা ডিস্টার্ব করা না হয়। তারা প্রধানমন্ত্রীর অফিসও ঘেরাও দেবে, আমি বলেছি হ্যাঁ আসতে দেব। কেননা আমরা যে আন্তরিকতার সঙ্গে দেশের জন্য কাজ করতে চেষ্টা করছি-দেশের মানুষ তো সেটা জানে।’

প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় সোমবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর  বলেন, ‘যারা আন্দোলন করছে তাদের কাউকে গ্রেফতার করা হবে না-এসব কথা প্রতারণা ও ভণ্ডামি ছাড়া আর কিছু নয়। প্রতিদিনই কোনো না কোনো জায়গায় বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে, হামলা করা হচ্ছে। ভোলায় আমাদের দুই নেতাকে পুলিশ গুলি করে মেরেছে। গত এক মাসেই একশ মিথ্যা মামলা হয়েছে, পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’ তিনি মনে করেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আসলে দেশের মানুষকে বোকা বানানোর জন্য এসব কথা বলছেন। বিশেষ করে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার এসেছেন বলে তিনি এসব বলছেন। তার কথা আসলে কেউ বিশ্বাস করে না।’

জাতীয় পার্টির মহাসচিব, সাবেক মন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে আমরা স্বাগত জানাই। নিঃসন্দেহে এটি রাজনীতির জন্য একটি ইতিবাচক দিক। তবে তার এই কথা সব সময়ের জন্য এবং সবার জন্য ঠিক থাকলে ভালো। আর যদি কোনো অবস্থা থেকে সাময়িক সময়ের জন্য বলে থাকেন, তাহলে এটি হবে দুঃখজনক।’

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কিছুদিন আগেও প্রায় একই কথা বলেছেন। কিন্তু বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন দেখিনি। এটা রাজনৈতিক স্টান্টবাজি হতে পারে। কারণ সম্প্রতি ভোলায় পুলিশ গুলি করে দুজনকে মেরে ফেলেছে। কীভাবে তার কথা আস্থায় নেব। তবে তার এই বক্তব্যের পেছনে কারণ আছে। সেটি হলো জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ঢাকা এসেছেন, তাকে দেখাতে এটা বলেছেন হয়তো।’ তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যদি তার কথায় আন্তরিক থাকেন, তাহলে ভবিষ্যৎই এই কথার প্রমাণ করবে। আর যদি প্রমাণ নাও করে, এসব কথা বলে আমাদের আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করার কোনো সুযোগ নেই।’

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কথা ইতিবাচক হিসেবে দেখতে চাই এজন্য যে, আগামীতে তো জাতীয় নির্বাচন। ফলে এ ধরনের বক্তব্যের পেছনে যেটা অনুমান করা যায় সেটি হলো বিরোধীদের ওপর নির্যাতনের কারণে সরকারের রাজনৈতিক ভাবমূর্তি বলতে কিছু থাকছে না। এটাকে কিছুটা মোচন করার জন্য হয়তো প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শকরা তাকে দিয়ে এ ধরনের কথা বলাতে পারেন। আমি মনে করি, সরকার যদি ন্যূনতম গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাস করেন, তারা যে গণতান্ত্রিক অধিকারগুলো ভোগ করেন, একই ধরনের অধিকার সব বিরোধী দল ও জনগণের জন্য নিশ্চিত করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কিন্তু এর আগেও একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছিলেন। তারপরই দেখলাম ভোলায় বিএনপির শান্তিপূর্ণ প্রোগ্রামে পুলিশের বাড়াবাড়ি, গুলিবর্ষণ, হত্যাকাণ্ড। জ্বালানির দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে শাহবাগে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর সমাবেশের শেষ পর্যায়ে পুলিশের হামলা, আক্রমণ, নিপীড়ন। তাই প্রধানমন্ত্রী যেটা বলছেন মাঠপর্যায়ে তার উলটো আচরণ দেখা যাচ্ছে।’

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘আমি প্রশ্ন করতে চাই আন্দোলন করলে কি তাহলে গ্রেফতার করা হতো? আন্দোলন করার অধিকার, কথা বলার অধিকার, এটা আমার গণতান্ত্রিক অধিকার। যা সংবিধানে স্বীকৃত আছে। তাই প্রধানমন্ত্রী কথাটা আমার বোধগম্য নয়।’ তিনি বলেন, ‘কোনো কারণে যদি আইনশৃঙ্খলার অবনতি কেউ না ঘটায়, কারোর গ্রেফতার করার অধিকার নেই। সুতরাং একথা নতুন করে বলার কোনো কারণ দেখি না।’

বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, ‘আমার ধারণা সরকার যদি আসলেই আন্তরিকভাবে চায় সবাই নির্বাচনে আসুক, লেভেল প্লেয়িং তৈরি হোক। প্রধানমন্ত্রী বলল সেটা না, রাজনৈতিকভাবে আমার মনে হয় বিরোধী দলের এই স্পেসটা থাকা উচিত- যেখানে বিরোধী দল গঠনমূলক সমালোচনা করতে পারবে, গণতন্ত্র আমাদের যেভাবে সুযোগ দেয়, সেভাবেই যেন বিরোধী দল তাদের ভূমিকাটা পালন করতে পারে।’

খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমেদ আব্দুল কাদের বলেন, ‘এর আগেও প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন মিছিল করে আসেন, চা খেয়ে যাবেন। এরপরই তো ভোলায় পুলিশের গুলিতে বিএনপির অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের দুই নেতা মারা গেল। কাজেই এসব কথা আমার কাছে অর্থবহ মনে হয় না। এটা তিনি কথার কথা বলেছেন। বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেফতার-হামলা তো চলছেই। ফলে এসব কথার কোনো বাস্তব প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি না।’

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করিম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ইতিবাচক। যদি এ রকম হয় তাহলে ভালো, জাতির জন্য কল্যাণকর। কিন্তু আমাদের বোধগম্য নয় যে, হঠাৎ করে তিনি এ রকম সুফি হলেন কীভাবে। কয়েকদিন আগেও ভোলায় আন্দোলনরত মানুষদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে দুজনকে হত্যা করেছে। সেখানে হঠাৎ করে প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের আড়ালে কী আছে, এটা কি সরকারের দুর্বলতা, নাকি অন্য কোনো চিন্তা-ভাবনা, না জনগণের দৃষ্টি ভিন্নদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা, তা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়।’

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যকে ইতিবাচক হিসাবে দেখছে কোনো কোনো রাজনৈদিক দল। আওয়ামী নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা  বলেন, ‘বিএনপি বলেছে তারা নির্বাচনে যাবে না। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকার পরিবর্তন করবে। বাস্তবতা হলো বিএনপি কখনোই জনগণের একেবারেই প্রাণের দাবি নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম করেনি। আন্দোলনের মাঠে সফলতার প্রমাণও রাখেনি। আন্দোলন করে সরকার পরিবর্তন করার অভিজ্ঞতা বা নজির বিএনপির নেই। সেই জায়গা থেকে প্রধানমন্ত্রী হয়তো মনে করেছেন, তারা কিছু কথা বলতে চাচ্ছে, বলুক। কিন্তু তারা সরকার পরিবর্তনের মতো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারবে বলে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বোধ করেন না। আমি মনে করি-প্রধানমন্ত্রীর উপলব্ধি অনেকটা সঠিক।’

আরেক শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যকে সাধারণভাবেই দেখছি। উনি দেশের প্রধানমন্ত্রী। স্বাভাবিকভাবেই তিনি এসব কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করলে কোনো সমস্যা নেই। সেগুলোতে কোনো বাধা দেওয়ার ব্যাপারও নেই। কিন্তু এরপরই প্রধানমন্ত্রী বলেছেন-যদি বাড়াবাড়ি হয়, সেটা দেখা হবে। সুতরাং আমরা মনে করি প্রধানমন্ত্রী খুবই স্পষ্ট ও ন্যায্য কথাই বলেছেন।’

Facebook
X
WhatsApp
Email
Telegram
সর্বশেষ
ফেসবুক নেটওয়ার্ক ও পার্টনার পেজ
মিডিয়া
Cover for Table Talk Uk
595,824
Table Talk Uk

Table Talk Uk

Table Talk UK Discusses the political and social issues of the country. Our only purpose is to expose social inconsistencies and politics in the face of accountability on the path to democracy and talk about the rights of people.

This message is only visible to admins.
Problem displaying Facebook posts. Backup cache in use.
PPCA Error: Due to Facebook API changes it is no longer possible to display a feed from a Facebook Page you are not an admin of. The Facebook feed below is not using a valid Access Token for this Facebook page and so has stopped updating.

Smash Balloon Custom Facebook Feed WordPress Plugin The Custom Facebook Feed plugin

সর্বশেষ সংবাদ জানতে—এখনই সাবস্ক্রাইব করুন!
সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
কপিরাইট © 2025 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত — লন্ডন মিরর।
সম্পাদক: হাসিনা আক্তার
সার্চ করুন
লগইন/সাইন আপ
সর্বশেষ সংবাদ জানতে—এখনই সাবস্ক্রাইব করুন!