টাঙ্গাইলের আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনিরের বিরুদ্ধে দায়ের করা ধর্ষণ মামলার বাদি এশার মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশ জানায়, এশা আত্মহত্যা করেছে, না তাকে হত্যা করা হয়েছে তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে। এর আগে বড় মনিরের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতা আমানুর রহমান রানাকে খুনের পরিকল্পনার অভিযোগ ওঠে।
চলতি বছরের ৫ এপ্রিল রাতে টাঙ্গাইল সদর থানায় বড় মনিরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন এশা নামের এক তরুনী। মামলায় এশা অন্তঃসত্ত্বা হয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়। ওই মামলায় গ্রেপ্তার টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি গোলাম কিবরিয়া বড় মনিরকে কারাগারে পাঠায় আদালত।
সম্প্রতি র্যাব জানায়, বড় মনির কারাগারে বসে আরেক আওয়ামী লীগ নেতা আমানুর রহমান খান রানাকে খুনের পরিকল্পনা করেন। মধুপুরে চার খুনের আসামি সাগর টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে বন্দি ছিলেন। সেখানেই বড় মনিরের সাথে তার পরিচয়। সাবেক এমপি রানাকে হত্যার শর্তে ২৬ লাখ টাকা খরচ করে সাগরকে জামিনে মুক্ত করান বড় মনির।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, কারাগারে থাকা অবস্থায় সাগরের সাথে একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির পরিচয় হয়। তিনি রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট বলেও সাগর আমাদের তথ্য দিয়েছেন। মূলত ওই প্রভাবশালী ব্যক্তির প্রস্তাবটি এমন ছিলো যে, সাগরকে যদি সে কারাগার থেকে জামিনে বের করে দিতে পারে তাহলে কারাগারে অবস্থান করা ওই ব্যক্তির রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ রয়েছে তাকে হত্যা করতে হবে।
কিন্তু মুক্ত হয়েই আশুলিয়ায় একই পরিবারের তিনজনকে হত্যার ঘটনায় আটক হয় সাগর। জিজ্ঞাসাবাদে সাগর জানায়, মুক্ত হবার পর বড় মনিরের লোকজন তাকে আরও তিন লাখ টাকা দেয়।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া পরিচালক আরও বলেন, কারাগার থেকে মুক্ত হবার পর সেই ব্যক্তির অনুসারীরা সাগরকে গাড়িতে করে নিয়ে যায় এবং হত্যা সংঘটিত করার জন্য সাগরকে তিন লাখ টাকা দেয়।
ঘটনা জানার পর থেকে আতঙ্কে আছেন সাবেক এমপি রানা।
টাঙ্গাইল-৩ আসনের সাবেক এমপি আমানুর রহমান খান রানা বলেন, মনির গংরা জেলখানায় বসে দাগি খুনিদের সাথে চুক্তির মাধ্যমে আমাকে হত্যার জন্য ষড়যন্ত্র করছে। আমি এবং আমার পরিবার শঙ্কিত। এমন কোনো কাজ নেই যা তারা টাঙ্গাইলে তারা করতে পারবে না।
ধর্ষণের অভিযোগ আনা এশা তার সন্তানের পিতা হিসেবে বড় মনিরকে দাবি করার পর আদালতের নির্দেশে সিআইডি ডিএনএ পরীক্ষা করে। সে সময় এশা অভিযোগ করেন, বড় মনিরের স্বজনরা কোটি টাকার বিনিময়ে ডিএনএ পরিবর্তনের কথা তাকে বলেছিলো।
ভুক্তভোগী এশা জানিয়েছিলেন, তারা বলে, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দ্বারা ডিএনএ রিপোর্ট পরিবর্তন করাবে, তাদের অনেক ক্ষমতা। তাদের জন্য এটা কোনো ব্যাপার না। খুন, ধর্ষণ এসব মামলা কিছুই করতে পারবে না। আমি কিছুই করতে পারবো না। জামিনে বের হলে আমাকে আর আমার বাচ্চাকে তারা মেরে ফেলবে। আর তারা নাকি জামিনে বের হবেই।
গত ৯ অক্টোবর আপিল বিভাগে ডিএনএ টেস্ট রিপোর্ট বড় মনিরের পক্ষে আসলে কারাগার থেকে মুক্তি পায় সে। এর এশা বলেছিলেন, ডিএনএ টেস্ট রিপোর্টের বিরুদ্ধে আমি আদালতে নারাজি দিয়ে এসেছি। এই রিপোর্টকে আমি গ্রহণযোগ্য মনে করি না। তদন্ত সুষ্ঠু হয়নি।
শনিবার বিকেলে বড় মনির বিরুদ্ধে দায়ের করা ধর্ষণ মামলার বাদী এশার মরদেহ টাঙ্গাইল শহরের বাসা থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মাহমুদ কায়সার বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা যে অবস্থায় মরদেহ পেয়েছিলাম তাতে মনে হয়েছে এটা আত্মহত্যা। তারপরও অধিক নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমরা ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছিলাম, যাতে কোনো তথ্য-প্রমাণ নষ্ট না হয়।
বড় মনিরের ছোট ভাই ছোট মনিরও স্থানীয় নিক্সন হত্যায় জড়িত বলে অভিযোগ নিহতের পরিবারের।