সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫

ইবিতে আধিপত্য বিস্তারে দ্বন্দ্ব ও মারামারি আবাসিকতা দেয় হল, সিট দেয় ছাত্রলীগ!

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আবাসিক ছাত্র হলগুলোয় একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে আছে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ। কাগজে-কলমে হল প্রশাসন দায়িত্বে থাকলেও হলে শিক্ষার্থী তোলা ও সিট ছাড়ার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করেন ছাত্রলীগ নেতারা। হলগুলোয় প্রশাসন আবাসিকতা দিলেও অবৈধভাবে সিট দখল করে থাকা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বাধার মুখে আবাসিকতাপ্রাপ্ত সাধারণ শিক্ষার্থীদের সিটে তুলে দিতে পারছে না হল প্রশাসন।

ফলে ছাত্রলীগ নেতাদের অনুসারী নবীন শিক্ষার্থীরা আবাসিকতা ছাড়াই হলে জায়গা পেলেও আবাসিকতাপ্রাপ্ত সিনিয়র সাধারণ শিক্ষার্থীরা হলে থাকতে পারছেন না। এছাড়া শিক্ষাজীবন শেষ হওয়া সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা সিটের একটি অংশ দখল করে থাকছেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে হলগুলোয় শতভাগ বৈধ শিক্ষার্থী নিশ্চিতের কথা বলা হলেও তা বাস্তবে ফল দিচ্ছে না। উলটো ছাত্রলীগ নেতাদের কাছে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন হল প্রভোস্টরা। হলে আবাসিকতাপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের তুলতে প্রক্টোরিয়াল বডির সহায়তা নিয়ে অভিযান চালিয়েও কাজে আসছে না।

ক্যাম্পাস সূত্র জানায়, হলে আধিপত্য বিস্তার করতে সিট দখল নিয়ে প্রায়ই ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মাঝে দ্বন্দ্ব ও মারামারির ঘটনা ঘটে। নেতার কথার বাইরে গেলে কক্ষে ডেকে মারধর ও সিট থেকে নামিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি লালন শাহ হলের একটি কক্ষে শিক্ষার্থী তোলা নিয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মাঝে মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত হট্টগোল ও মারামারির ঘটনা ঘটে। হলটির ৪০৩ নম্বর কক্ষের বৈধ দুই সিনিয়র শিক্ষার্থী বেশির ভাগ সময় ক্যাম্পাসের বাইরে থাকায় ওই কক্ষে অবস্থানরত এক ছাত্রলীগ কর্মী তার বন্ধু ও জুনিয়রকে নিয়ে থাকতেন।

শনিবার রাতে ছাত্রলীগের এক নেতা কক্ষটিতে নবীন এক শিক্ষার্থীকে তুলতে গেলে ওই কক্ষে অবস্থানরতদের বাধার মুখে পড়েন। এ নিয়ে তাদের মাঝে প্রায় দুই ঘণ্টা বাগ্বিতণ্ডা হয়। এ ঘটনার জেরে রাত ৩টায় আবারও বাগ্বিতণ্ডার একপর্যায়ে মারধররের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে ভোর পর্যন্ত হট্টগোল চলে। পরে ভোর সাড়ে ৪টার দিকে প্রক্টরিয়াল বডি ও ছাত্রলীগের সিনিয়র নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এ ঘটনায় রোববার দুপুরে হল প্রভোস্ট উভয় পক্ষকে নিয়ে বসে মীমাংসা করে দেন।

জানা যায়, ইতঃপূর্বে একটি হল থেকে একই সঙ্গে ১৩ শিক্ষার্থীকে নামিয়ে দেওয়ার ঘটনায় দেশব্যাপী তীব্র সমালোচনার মুখে পড়লে আবারও ফিরিয়ে আনা হয় তাদের। এছাড়া হলের সিনিয়র শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন শেষ হওয়ার আগেই নতুন করে জুনিয়রকে সেই কক্ষে রেখে আসা ও সিট ছেড়ে দিতে চাপ প্রয়োগের অভিযোগ রয়েছে। সিট ফাঁকা হওয়ার আগে তা দখল নিয়ে একাধিক গ্রুপের মধ্যে মারামারির ঘটনাও ঘটে। এতে শেষ সময়ে এসে বিব্রত হয়ে ক্যাম্পাস ছাড়তে হয় সিনিয়ির শিক্ষার্থীদের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লালন শাহ হলে আবাসিকতার আবেদন নিয়ে দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে গত এপ্রিলে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থীকে আবাসিকতা দেওয়া হলেও ছাত্রলীগের বাধার মুখে শিক্ষার্থীদের সিটে তুলতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের নামিয়ে আবাসিকতাপ্রাপ্ত সিটে তুলতে প্রক্টরিয়াল বডিকে নিয়ে অভিযান চালিয়েও কাজ হয়নি। ছাত্রলীগ নেতারা দফায় দফায় সময় চেয়ে নিলেও শেষ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের তুলতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। একইভাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, জিয়াউর রহমান হল ও সাদ্দাম হোসেন হলে বিগত কয়েক বছর থেকে এলটমেন্ট দিলেও শিক্ষার্থীদের তুলতে পারছে না হল প্রশাসন।

হল প্রভোস্ট বা প্রশাসনের নিকটাত্মীয় কাউকে হলে তুলতেও হল প্রশাসনকে ধরনা দিতে হয় ছাত্রলীগ নেতাদের কাছে। আবাসিকতা নিশ্চিত করতে প্রভোস্টদের পক্ষ থেকে বাধ্য হয়ে যে যেখানে অবস্থান করছে অ্যাটাচমেন্ট পরিবর্তন করে সেই হলে আবাসিকতা নেওয়ার নির্দেশনা দিলেও কাজে আসছে না। ফলে নিয়মিত আবাসিক ফি দিয়েও ছাত্রজীবনে হলে থাকার সুযোগ হচ্ছে না অনেক সাধারণ শিক্ষার্থীর। হলে মাদকের আসরসহ অনৈতিক কাজ বৃদ্ধির পেছনে অবৈধভাবে হলে থাকাকে দায়ী করেন একাধিক প্রভোস্ট।

লালন শাহ হল প্রভোস্ট প্রফেসর ড. ওবায়দুল ইসলাম বলেন, আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করেও ছাত্রদের সিটে তুলতে পারছি না। মাঝেমধ্যে খুব অসহায় মনে হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. মাহবুবুল আরফিন  বলেন, হলে শতভাগ বৈধ শিক্ষার্থী নিশ্চিত করতে ও মাদক নির্মূলে কাজ করছি। নোটিশ দেওয়া হয়েছে। হলে অছাত্ররা থাকতে পারবে না। প্রভোস্ট কাউন্সিলের সভাপতি প্রফেসর ড. ইয়াসমিন আরা সাথী  বলেন, হলের সিট বরাদ্দের বিষয়গুলো কর্তৃপক্ষের এখতিয়ারাধীন। এ বিষয়ে কোনো শিক্ষার্থী বা ছাত্রসংগঠনের হস্তক্ষেপের এখতিয়ার নেই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা প্রফেসর ড. শেলীনা নাসরিন  বলেন, বৈধ শিক্ষার্থীরা সিটে থাকতে পারবে না, এটা দুঃখজনক। এটা আমাদের ব্যর্থতা। এগুলো নিরসন হওয়া দরকার। না হলে মেধাবী, অসচ্ছল শিক্ষার্থীরা থাকতে পারবে না। সবকিছু নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে মোটিভেশনের পাশাপাশি কঠোরতাও দরকার।

Facebook
X
WhatsApp
Email
Telegram
সর্বশেষ
ফেসবুক নেটওয়ার্ক ও পার্টনার পেজ
মিডিয়া
Cover for Table Talk Uk
595,824
Table Talk Uk

Table Talk Uk

Table Talk UK Discusses the political and social issues of the country. Our only purpose is to expose social inconsistencies and politics in the face of accountability on the path to democracy and talk about the rights of people.

This message is only visible to admins.
Problem displaying Facebook posts. Backup cache in use.
PPCA Error: Due to Facebook API changes it is no longer possible to display a feed from a Facebook Page you are not an admin of. The Facebook feed below is not using a valid Access Token for this Facebook page and so has stopped updating.

Smash Balloon Custom Facebook Feed WordPress Plugin The Custom Facebook Feed plugin

সর্বশেষ সংবাদ জানতে—এখনই সাবস্ক্রাইব করুন!
সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
কপিরাইট © 2025 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত — লন্ডন মিরর।
সম্পাদক: হাসিনা আক্তার
সার্চ করুন
লগইন/সাইন আপ
সর্বশেষ সংবাদ জানতে—এখনই সাবস্ক্রাইব করুন!