সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫

ই-কমার্সের নামে ৪০০ জুয়ার সাইট

ই-কমার্সের নামে দেশে চলছে সর্বনাশা জুয়ার আসর। ডিজিটাল প্রতারণার ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব হারাচ্ছে অনেক তরুণ। তরুণদের ডিজিটাল প্রতারকদের খপ্পর থেকে রক্ষা করতে ৩৩১টি ওয়েবসাইট সম্প্রতি বন্ধ করেছে সরকার। আরো ৬৯টি নতুন জুয়ার ওয়েবসাইট বন্ধ করতে গোয়েন্দা সংস্থার কাছে তালিকা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ই-কমার্স সেলের টেকনিক্যাল কমিটি। অনলাইন জুয়া বন্ধে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ এখন জরুরি হয়ে পড়েছে বলেও জানিয়েছে কমিটি।

 

সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় ই-কমার্স সেলের টেকনিক্যাল কমিটির সদস্যরা সম্প্রতি এই তালিকা নিয়ে বৈঠক করেন। একই সঙ্গে ই-কমার্স গ্রাহকদের অর্থ ফেরতের ক্ষেত্রে কারিগরি সমস্যার কথাও বৈঠকে উঠে আসে। যেসব গ্রাহক তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে লেনদেন করেছেন, তাঁদের শনাক্ত করার উপায় নিয়েও আলোচনা হয়। অনলাইনে এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) চিঠিও দিয়েছেন।

 

যেভাবে প্রতারণা : 

দেশি-বিদেশি এসব সাইট বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে ডলারসহ বিদেশি মুদ্রার মাধ্যমে জুয়া খেলতে প্ররোচিত করে গ্রাহকদের। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান ২০০ ডলারের জন্য টাকা জমা দিলে ৫০০ ডলার ফেরত দেওয়ার লোভ দেখায়। বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো এ দেশে স্থানীয় এজেন্ট নিয়োগ করে। ওই এজেন্টরা জুয়ায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাদের ভার্চুয়াল চিপস সরবরাহ করে। সেই চিপস দিয়ে জুয়া খেলা হয়। কোনো কোনো এজেন্ট আবার স্থানীয় মুদ্রা টাকা গ্রহণ করে বিদেশে থাকা ব্যক্তির মাধ্যমে ডলার সাবমিট করে। আবার এই কাজে বিটকয়েন ব্যবহারের অভিযোগও পাওয়া গেছে।

 

যেসব ব্যবস্থা : 

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেসব অ্যাপ ও সাইটে জুয়া পরিচালনা করা হয়, তার বেশির ভাগই দেশের বাইরে থেকে নিবন্ধিত ও বিদেশি ব্যক্তির মাধ্যমে পরিচালিত। ফলে এসব অ্যাপস বা সাইট বন্ধ করাও এখন সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।

সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) এক প্রতিবেদনের তথ্যে দেখা গেছে, শতাধিক অ্যাপস ও ওয়েবসাইট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে সারা দেশে অবৈধ অনলাইন জুয়া কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর মধ্যে দেশি কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানও রয়েছে, যারা পণ্য বিক্রির কার্যক্রম পরিচালনা ছেড়ে এখন অবৈধ জুয়ায় নেমেছে। কিছু প্রতিষ্ঠান নিষিদ্ধ এমএলএম ব্যবসাও পরিচালনা করছে। এসব প্রতিষ্ঠানের অ্যাপস ও ওয়েবসাইট বন্ধের সুপারিশ করা হয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ওই প্রতিবেদনে।

তবে বিদেশি সাইটগুলোর বিরুদ্ধে তারা কোনো ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারছে না। এসব সাইট বন্ধের বিষয়টি নিয়েও টেকনিক্যাল কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার গতকাল  বলেন, ‘দেশের বাইরে থেকে যেসব জুয়ার ওয়েবসাইট পরিচালিত হচ্ছে, তা দেশে দেখা যাবে না, সেই ব্যবস্থা আমরা করতে পারি। দেশের ভেতর কিংবা বাইরে সেটা কোনো সমস্যা নয়। আমাদের কাছে কোনো সংস্থা যদি বলে এটা জুয়ার সাইট এবং আমরা দেখি এটা জুয়ার সাইট, তা বন্ধ করে দিচ্ছি। আমাদের রিপোর্টিং সিস্টেম আছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী, তথ্য মন্ত্রণালয়, আইসিটি বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা রিপোর্ট করে। এরপর আমরা যাচাই করে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

এ ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেল) মুহাম্মদ সাঈদ আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ই-কমার্সের নামে ডিজিটাল প্ল্যাটফরমে জুয়া বন্ধে আমরা নিয়মিত নজরদারি রাখছি। অভিযুক্ত ৩৩১টি ওয়েবসাইট বন্ধ করা হয়েছে। আরো ৬৯টি ওয়েবসাইটের নাম পাওয়া গেছে, যা গোয়েন্দা সংস্থাকে তদন্তের জন্য দেওয়া হয়েছে।’

ই-কমার্সের নামে জুয়া চলতে থাকলে খাতটি আরো ইমেজ সংকটে পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এ ব্যাপারে ই-ক্যাবের নির্বাহী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম শোভন  বলেন, ‘ই-কমার্সের নামে জুয়া, বেটিং, গেম, এমএলএম করছে কেউ কেউ। এ কারণে আমরা উদ্বেগ জানিয়েছি। এগুলো যদি চলতে থাকে, তাহলে এই খাতে মানুষের আস্থা কমবে। সাধারণ মানুষ ই-কমার্স কী, জুয়া-বেটিং কী, এগুলো সম্পর্কে খুব বেশি সচেতন নয়। আমরা কিছু নাম দিয়েছি। এ ছাড়া অনুসন্ধানের মাধ্যমে আরো কিছু নতুন নাম উঠে এসেছে। তাই আমরা ডিজিটাল কমার্স সেলের কাছে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সব পক্ষের সমন্বিত উদ্যোগে ই-কমার্স খাত আবার ঘুরে দাঁড়াবে বলে আাাশা করি।’

ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) তথ্য মতে, সব মিলিয়ে দেশে প্রায় আড়াই হাজার ই-কমার্স সাইট আছে। ফেসবুকভিত্তিক বিভিন্ন ব্যাবসায়িক উদ্যোগ রয়েছে দেড় লাখের বেশি। অনেক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান শুধু ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে পরিচালনা করছে। বর্তমানে ই-কমার্স খাতের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ৪০ শতাংশ। ২০২২ সালে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার মতো লেনদেন হয়েছে। করোনার আগে খাতটিতে ৩০০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ছিল।

Facebook
X
WhatsApp
Email
Telegram
সর্বশেষ
ফেসবুক নেটওয়ার্ক ও পার্টনার পেজ
মিডিয়া
Cover for Table Talk Uk
595,824
Table Talk Uk

Table Talk Uk

Table Talk UK Discusses the political and social issues of the country. Our only purpose is to expose social inconsistencies and politics in the face of accountability on the path to democracy and talk about the rights of people.

This message is only visible to admins.
Problem displaying Facebook posts. Backup cache in use.
PPCA Error: Due to Facebook API changes it is no longer possible to display a feed from a Facebook Page you are not an admin of. The Facebook feed below is not using a valid Access Token for this Facebook page and so has stopped updating.

Smash Balloon Custom Facebook Feed WordPress Plugin The Custom Facebook Feed plugin

সর্বশেষ সংবাদ জানতে—এখনই সাবস্ক্রাইব করুন!
সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
কপিরাইট © 2025 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত — লন্ডন মিরর।
সম্পাদক: হাসিনা আক্তার
সার্চ করুন
লগইন/সাইন আপ
সর্বশেষ সংবাদ জানতে—এখনই সাবস্ক্রাইব করুন!