রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫
রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫

কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবার ইসলামী ব্যাংক থেকে বেনামি ঋণের খোঁজে

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড থেকে বেনামে বিপুল অঙ্কের ঋণ বের করে নেওয়ার অভিযোগের তদন্তে নেমেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন কোম্পানি খুলে কিংবা আগে থেকে ঋণ রয়েছে এমন কিছু প্রতিষ্ঠানের নামে বিপুল অঙ্কের ঋণের প্রকৃত সুবিধাভোগী কারা- তা খতিয়ে দেখবে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিশেষত নাবিল গ্রুপের ৭ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা ঋণের সুবিধাভোগী অন্য কোনো পক্ষ কিনা, তার তদন্ত হবে। এর আগে গত সেপ্টেম্বরে এ গ্রুপের বিষয়ে তদন্তের উদ্যোগ নিলেও অজ্ঞাত কারণে তা থেমে যায়। এখন নতুন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের তিন সদস্যের একটি তদন্ত দল গতকাল থেকে কাজ শুরু করেছে। আর আপাতত নাবিল গ্রুপের নামে ঋণছাড় স্থগিত রাখার মৌখিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, রাজশাহীকেন্দ্রিক নাবিল গ্রুপকে ইসলামী ব্যাংকের বাইরে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক গত জুনে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক গত মে মাসে ১ হাজার ১২০ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন করে। সব মিলিয়ে এ গ্রুপের নামে অনুমোদিত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা। চলতি বছরের মার্চে তাদের ঋণের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। অল্প সময়ের ব্যবধানে বিপুল অঙ্কের ঋণ বাড়ানোর বিষয়টি সন্দেহের চোখে দেখছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকের মালিকানায় থাকা কোনো পক্ষ বেনামে এসব ঋণ নিতে পারে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অফসাইট সুপারভিশন বিভাগের পর্যালোচনার ভিত্তিতে গত সেপ্টেম্বরে বিষয়টি অধিকতর তদন্তের জন্য পরিদর্শন সংশ্নিষ্ট দুটি বিভাগে পাঠানো হয়।

জানা গেছে, গতকাল ব্যাংক খাতের বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে সরকারের উচ্চপর্যায়ে আলোচনা হয়। এরপর ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুল মওলাকে জরুরিভাবে ডাকা হয় বাংলাদেশ ব্যাংকে। অফিস ছুটির পর রাত অবধি তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকেই ছিলেন। আর গতকাল সকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন অতিরিক্ত পরিচালকের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত দলও শুরুতে গিয়ে এমডির সঙ্গে বৈঠক করে।
সার্বিক বিষয়ে বক্তব্যের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক জি এম আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

জানা গেছে, নাবিল গ্রুপের এসব ঋণের সুবিধাভোগী ছাড়াও ইসলামী ব্যাংকের সব শাখা থেকে বিতরণ করা ৫০ কোটি টাকার বেশি ঋণের সুবিধাভোগী কারা- তা খতিয়ে দেখবে তদন্ত দল। ঋণের কোনো অর্থ পাচার হয়েছে কিনা, হুন্ডি কারবারে ব্যবহার হয়েছে কিনা- যাচাই করবে।
জানতে চাইলে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা  বলেন, ইসলামী ব্যাংক যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে ঋণ বিতরণ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক তদন্তের উদ্যোগ নিতে পারে। এ ক্ষেত্রে ইসলামী ব্যাংক পূর্ণ সহায়তা দেবে।
জানা গেছে, গত জুন পর্যন্ত এক বছরে ইসলামী ব্যাংকে ২৯ হাজার ৯৭২ কোটি টাকা ঋণ বেড়ে ১ লাখ ২৪ হাজার ৫৭২ কোটি টাকা হয়েছে। বিদ্যমান নিয়মে কোনো ব্যাংক একক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা গ্রুপকে তার মোট মূলধনের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ সমপরিমাণ ঋণ দিতে পারে। একক গ্রাহকের ঋণসীমা যা বিবেচিত। গত জুন পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংকের মূলধনের বিপরীতে একক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা গ্রুপকে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে ব্যাংকটি অনেক গ্রাহকের ক্ষেত্রে এ সীমা মানেনি। আর বেনামে ঋণ থাকলে একক গ্রুপ আসলে কত টাকা নিয়েছে, এখনই তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

নাবিল গ্রুপ বেশ আগে থেকে ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহক। দীর্ঘ সময় থেকে চলতি বছরের মার্চে গ্রুপটিকে ৭০০ কোটি টাকা দেওয়ার পর ঋণস্থিতি দাঁড়ায় ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা। এরপর ইসলামী ব্যাংকসহ তিনটি ব্যাংকে গ্রুপটির নামে হুহু করে ঋণ সৃষ্টি হতে থাকে।

গত আগস্টে অস্বাভাবিক ঋণ অনুমোদনের বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরে আসার পর ইসলামী ব্যাংকে তাদের মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৫০ কোটি টাকা। গত ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত তা আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা।

নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, বনানীর বি ব্লকের ২৩ নম্বর রোডের ৯ নম্বর বাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করে সৃষ্ট প্রতিষ্ঠান নাবিল গ্রেইন ক্রপসকে চলতি বছরের জুনে ৯৫০ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন করে ইসলামী ব্যাংক। অথচ গত ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটিকে দেওয়া হয়েছে ১ হাজার ১২ কোটি টাকা। একেবারে নতুন এ প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে ইসলামী ব্যাংক ঋণ দেওয়ার আগ পর্যন্ত মাত্র সাড়ে ৮ লাখ টাকা লেনদেন হয়। বনানীর ডি ব্লকের ১৭ নম্বর রোডের ১৩ নম্বর বাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করে মার্টস বিজনেস নামে অপর একটি প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ দেওয়া হয়েছে ৯৮১ কোটি টাকা। বাকি ছয় প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা রাজশাহীতে। এর মধ্যে রাজশাহীর পবা উপজেলার ঠিকানা ব্যবহার করে শিমুল এন্টারপ্রাইজের নামে ১ হাজার ৬৯৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা এবং আনোয়ারা ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের নামে ১ হাজার ৯০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। বোয়ালিয়ার ঠিকানা ব্যবহার করে সৃষ্ট নাবা এগ্রো ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের নামে ১ হাজার ২৪২ কোটি ২৪ লাখ টাকা, ইন্টারন্যাশনাল প্রোডাক্ট প্যালেসের নামে ৫৪৫ কোটি টাকা ও নাবিল ফিড মিলসের নামে ৬১ কোটি ১২ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। আর গোদাগাড়ীর নাবা ফার্মের নামে নেওয়া হয়েছে ৬৪০ কোটি টাকা।

ফার্স্ট সিকিউরিটি ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকেও বড় অঙ্কের ঋণ :ইসলামী ব্যাংক ছাড়াও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকেও নাবিল গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠানকে বিপুল অঙ্কের ঋণ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে গত ৩০ মে অনুষ্ঠিত এসআইবিএলের ৪৮১তম পর্ষদ সভায় প্রতিষ্ঠানটির নামে ১ হাজার ১২০ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন করা হয়। এর মাত্র ২৩ দিনের মাথায় ২৩ জুন ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ২৪৬তম পর্ষদ সভায় অনুমোদন হয় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যালোচনা প্রতিবেদনে বলা হয়, নাবিল নব ফুডের নামে সৃষ্ট ঋণ বেনামি বা অন্য কোনো ব্যাংকের পরিচালকদের স্বার্থসংশ্নিষ্ট কিনা, যাচাই করা আবশ্যক।

Facebook
X
WhatsApp
Email
Telegram
সর্বশেষ
ফেসবুক নেটওয়ার্ক ও পার্টনার পেজ
মিডিয়া
Cover for Table Talk Uk
595,824
Table Talk Uk

Table Talk Uk

Table Talk UK Discusses the political and social issues of the country. Our only purpose is to expose social inconsistencies and politics in the face of accountability on the path to democracy and talk about the rights of people.

This message is only visible to admins.
Problem displaying Facebook posts. Backup cache in use.
PPCA Error: Due to Facebook API changes it is no longer possible to display a feed from a Facebook Page you are not an admin of. The Facebook feed below is not using a valid Access Token for this Facebook page and so has stopped updating.

Smash Balloon Custom Facebook Feed WordPress Plugin The Custom Facebook Feed plugin

সর্বশেষ সংবাদ জানতে—এখনই সাবস্ক্রাইব করুন!
রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫
কপিরাইট © 2025 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত — লন্ডন মিরর।
সম্পাদক: হাসিনা আক্তার
সার্চ করুন
লগইন/সাইন আপ
সর্বশেষ সংবাদ জানতে—এখনই সাবস্ক্রাইব করুন!