শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫
শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫

ক্যাপাসিটি চার্জের শক: তিন বছরে হাওয়া ৫৪ হাজার কোটি টাকা

বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভাড়া (ক্যাপাসিটি চার্জ) এখন দেশের অর্থনীতির গলার কাঁটা হয়ে দাড়িয়েছে। সংসদীয় কমিটির কাছে দেয়া প্রতিবেদনে ৯ মাসে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা চার্জ দেয়ার কথা জানিয়েছে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয় জানিয়েছে গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত সরকারি বেসরকারি মিলিয়ে মোট ৯০টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে ১৬ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা ভাড়া দেয়া হয়েছে। প্রতি মাসে গড়ে দেয়া হয়েছে এক হাজার ৬৮৫ কেটি টাকা।

পদ্মা সেতুর চেয়ে খরচ বেশি:

এর আগে ২০২০-২১ অর্থ বছরে ১৮ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা এবং ২০২১-২২ অর্থ বছরে ১৮ হাজার ১২৩ কোটি টাকা। প্রায় তিন বছরে মোট ভাড়া দেয়া হয়েছে ৫৩ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। আর পদ্মা সেতু তৈরি করকে খরচ হয়েছে ৩০ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর এই ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়া হয় ২১ হাজার ৩৯৬ মেগাওয়ট হিসবে। কিন্তু  গত এপ্রিলে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদ হয়েছিলো ১৪ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াট। এর এখন উৎপাদিত হচ্ছে কম বেশি ১৩ হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু ক্যাপাসিটি চার্জ সমানই আছে। এই ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়া হয়  ভাড়া ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র- রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল, আমাদানি করা বিদ্যুৎ এবং ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারদের(আইপিপি)।

বসিয়ে  রেখে ভাড়া দেয়া:

ভারতের আদানি গ্রুপ এখনো বিদ্যুৎ উৎপাদনে যায়নি। ২০১৭ সালে পিডিবি তাদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি করে। ওই চুক্তির কারণে এপর্যন্ত বাংলাদেশের কাছে তাদের পাওনা হয়েছে এক হাজার ২১৯ কোটি টাকা।

কেরানীগঞ্জের পানগাঁওয়ের এপিআর এনার্জি বিদুৎ কেন্দ্রটির ক্ষমতা ৩০০ মেগাওয়াট। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে কেন্দ্রটি থেকে মাত্র ৩৪ লাখ ৪৮ হাজার কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। যা সক্ষমতার এক শতাংশেরও কম। কিন্তু কেন্দ্রটিকে ৫৩২ কোটি ৯১ লাখ টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়া হয়। ফলে আইপিপি কেন্দ্রটির প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় পড়ে এক হাজার ৫৭৯ টাকা ৫৭ পয়সা। যা দেশে সর্বোচ্চ রেকর্ড গড়ে। ২০২০-২১ অর্থ বছরে একই বিদ্যুৎ কেন্দ্র সাত কোটি ৭২ লাখ ইউনিট উৎপাদন করায় প্রতি ইউনিটের খরচ পড়েছে ৮৯ টাকা। এই অর্থ বছরে সবচেয়ে বেশি দাম পড়েছে ২০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার সিরাজগঞ্জের প্যারামাউন্ট বিট্যাক এনার্জি লিমিটেডের উৎপাদিত বিদ্যুতের। প্রতি ইউনিটের দাম পড়েছে ১৮০ টাকা। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন সক্ষমতার ৪০ থেকে ৪৮ ভাগ গড়ে অব্যবহৃত থাকে। কিন্তু তাদের ভাড়া দিতে হয়। ফলে ইউনিট প্রতি বিদ্যুতের অনেক দাম পড়ে যায়।

বিশ্লেষকেরা যা বলছেন:

সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন,” ২০০৯-১০ সালের বিদ্যুৎখাত এবং এখনকার বিদ্যুৎ খাত এক নয়। তখন জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ভাড়াভিত্তিক বিদুৎ কেন্দ্র গুলির সাথে চুক্তি করা হয়েছিলো। চুক্তিগুলো ছিলো তিন থেকে পাঁচ বছরের। কিন্তু এরপর এগুলোর সঙ্গে একই শর্তে কেন চুক্তি নবায়ন করা হলো আমি বুঝতে পারছি না। সম্প্রতি আরো পাঁচটির সাথে চুক্তি করা হয়েছে। এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সুবিধা দিতে করা হয়েছে।”

যখন দেখা গেলো চাহিদার চেয়ে ৪০ থেকে ৪৮ ভাগ ক্যাপাসিটি বেশি তখনই তো সিদ্ধান্ত নেয়ার দরকার ছিল। দেশ এখন একটি অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এখন এইগুলোকে বসিয়ে বসিয়ে ভাড়া দেয়া অর্থনীতির বড় বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে বলে তিনি মনে করেন।

তিনি বলেন,”যদিও আমরা বলে থাকি প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে আমাদের গড়ে সাড়ে সাত থেকে আট টাকা যায়। কিন্তু বাস্তবে কেন্দ্র ভিত্তিক হিসাবের সাথে কুইক রেন্টাল যুক্ত করা হয় তাহলে কোনো কোনো কেন্দ্র থেকে সরকারকে প্রতি কিলোওয়াট আওয়ার বিদুৎ কিনতে হয় ৬০০ টাকায়। এটা বসিয়ে রেখে ভাড়া দেয়ার কারণে হচ্ছে। আর এর চাপ কিন্তু দেশের মানুষকে নিতে হচ্ছে।”  তাই সরকারকে এখন চুক্তি বাতিল করতে হবে বা চুক্তি নবায়ন বন্ধ রাখতে হবে বলে তিনি মনে করেন।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. শামসুল আলম বলেন,”বিদ্যুতের ক্ষেত্রে ক্যাপাসিটি চার্জ একটা স্বীকৃত পদ্ধতি। কিন্তু বাংলাদেশে যা হয়েছে তা কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে লাভবান করার জন্য করা হয়েছে। প্রথমত, ক্যাপাসিটি চার্জ অনেক বেশি ধরা হয়েছে। দ্বিতীয়ত অপ্রয়োজনে চুক্তি করা হয়েছে। বিশেষ করে কুইক রেন্টালের ক্ষেত্রে রীতিমত লুটপাট করা হয়েছে।”

তিনি বলেন,”বিদ্যুতের চাহিদাই সঠিকভাবে নির্ধারণ করা হয়নি। ফলে চাহিদার তুলনায় অকে বেশি পাওয়ার প্ল্যান্টের সাথে চুক্তি করা হয়েছে। এগুলো বিদ্যুতের জন্য করা হয়নি। ব্যবসা দেয়ার জন্য করা হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন না করে সরকারের টাকা নেয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে।”

Facebook
X
WhatsApp
Email
Telegram
সর্বশেষ
ফেসবুক নেটওয়ার্ক ও পার্টনার পেজ
মিডিয়া
Cover for Table Talk Uk
595,824
Table Talk Uk

Table Talk Uk

Table Talk UK Discusses the political and social issues of the country. Our only purpose is to expose social inconsistencies and politics in the face of accountability on the path to democracy and talk about the rights of people.

This message is only visible to admins.
Problem displaying Facebook posts. Backup cache in use.
PPCA Error: Due to Facebook API changes it is no longer possible to display a feed from a Facebook Page you are not an admin of. The Facebook feed below is not using a valid Access Token for this Facebook page and so has stopped updating.

Smash Balloon Custom Facebook Feed WordPress Plugin The Custom Facebook Feed plugin

সর্বশেষ সংবাদ জানতে—এখনই সাবস্ক্রাইব করুন!
শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫
কপিরাইট © 2025 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত — লন্ডন মিরর।
সম্পাদক: হাসিনা আক্তার
সার্চ করুন
লগইন/সাইন আপ
সর্বশেষ সংবাদ জানতে—এখনই সাবস্ক্রাইব করুন!