সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫

গাইবান্ধা ভোট: অনিয়মে জড়িত নির্বাচন কর্মকর্তারা

গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনের অনিয়মে একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বেশ কয়েকজন প্রিসাইডিং অফিসারের সম্পৃক্ততা পেয়েছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তদন্ত কমিটি। সেইসঙ্গে অনিয়মে বেশ কিছু পোলিং এজেন্টের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি উঠে এসেছে তদন্ত প্রতিবেদনে। গাইবান্ধা-৫ নির্বাচনি এলাকার ভোটার বা নাগরিক নন, এমন কিছু দায়ী ব্যক্তিকেও পেয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।

গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে অনিয়মের ঘটনায় নির্বাচন কমিশন গঠিত তদন্ত কমিটি বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। ইসির বেঁধে দেওয়া বর্ধিত সময়ের শেষ দিন সন্ধ্যায় ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথের নেতৃত্বে কমিটি প্রায় ৬শ’ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন ইসি সচিবের কাছে জমা দিয়েছে। এরমধ্যে সুপারিশসহ ৫০ পৃষ্ঠার মূল প্রতিবেদন এবং বাকি সাড়ে ৫শ’ পৃষ্ঠায় সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে।

অশোক কুমার দেবনাথকে আহ্বায়ক করে গত ১৩ অক্টোবর গঠিত তিন সদস্যের কমিটির অপর দুজন হলেন—ইসির যুগ্ম সচিব মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী ও মো. কামাল উদ্দিন বিশ্বাস। কমিটি গঠনের পর প্রতিবেদন জমা দিতে প্রথমে সাত কার্যদিবস সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হলেও পরে আরও তিন দিন বাড়ানো হয়।

এর আগে ১২ অক্টোবর অনুষ্ঠিত গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন ঢাকায় সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করে প্রথমে ৫১টি কেন্দ্রের ভোট বন্ধ করে ইসি। পরে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগে ভোট শেষের দেড়ঘণ্টা আগে পুরো ভোট বন্ধের ঘোষণা করে ইসি।

শুনানিতে সংশ্লিষ্টদের দেওয়া বক্তব্যের ভিত্তিতেই তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, বন্ধ ঘোষিত ভোটকেন্দ্রে সংঘটিত অনিয়মগুলো চিহ্নিত করতে সরেজমিন গাইবান্ধার সাঘাটা ও ফুলছড়িতে যান কমিটির তিন সদস্য। দুই উপজেলার ১৪৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে সাঘাটায় ৮৮টি এবং ফুলছড়িতে ৫৭টি কেন্দ্র ছিল। কমিটির পক্ষ থেকে তদন্তের সময় ৭ শতাধিক ব্যক্তিকে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হয়। ১৮ থেকে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত গাইবান্ধার ডিসি, এসপি, নির্বাচনের পাঁচ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, জেলা নির্বাচন অফিসার, ইউএনও, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, বিজিবি ও র‌্যাবের কমান্ডিং অফিসার, উপজেলা নির্বাচন অফিসার, শুরুতে বন্ধ করা ৫১টি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং এজেন্ট, স্থানীয় সাংবাদিক ও থানার ওসিসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ৬২২ জনের বক্তব্য নেন কমিটির সদস্যরা। তারা পোলিং এজেন্ট বা ভোটার ব্যতীত অন্যান্য ব্যক্তির গোপনকক্ষে প্রবেশ, গোপনকক্ষে ভোটদান প্রত্যক্ষকরণ, ভোটারদের কোন প্রার্থীকে ভোটদানে বাধ্যকরণ বা প্রভাবিতকরণ, মোবাইল ক্যামেরা দিয়ে গোপনকক্ষের ছবি ধারণ ইত্যাদি বিষয়ে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করে দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করেছেন। একইসঙ্গে দলীয় প্রতীক বা একই রঙের পোশাক পরে কোনও কোনও পোলিং এজেন্টের দায়িত্ব পালন বা ভোটকক্ষে ঘোরাফেরা, গোপনকক্ষে প্রবেশ ইত্যাদি ঘটনার রহস্য উদঘাটন করে কমিশনকে জানিয়েছে তদন্ত কমিটি। এছাড়া পোলিং এজেন্ট বা অবৈধ কোনও ব্যক্তি গোপনকক্ষে প্রবেশ করে নিজেই ভোটপ্রদান, ভোটার কোন প্রার্থীকে ভোট দিচ্ছেন, তা গোপন কক্ষে উঁকি দিয়ে বা ঢুকে অবলোকন করা, ভোটপ্রদানে বাধা প্রধান, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ভোটকক্ষে ঢুকে নিজেই ভোট দেওয়া বা ভোটারকে প্রভাবিত করা, অথবা পোলিং এজেন্ট নয়—এ ধরনের ব্যক্তি ভোটদানে ভোটারকে প্রভাবিত করার বিষয়ে দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্ত করা হয়েছে মূল তদন্ত প্রতিবেদনে। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের অনিয়মে সম্পৃক্ত থাকার তথ্য-উপাত্তসহ কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

তদন্ত কমিটি সূত্র জানায়, শুনানিতে অংশ নেওয়া মাঠ প্রশাসন, ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের অনেকেই ভোটের দিন নানা ধরনের চাপে নিরূপায় ছিলেন বলে তাদের অসহায়ত্বের কথা তদন্তকালে জানিয়েছেন। সেদিনের ঘটনা তুলে ধরে তদন্ত প্রিসাইডিং অফিসাররা বলেন, ভোটের পরিবেশ তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল না। কেন্দ্র দখল ও প্রভাব বিস্তার ছাড়াও অন্যের ভোট জোর করে নির্দিষ্ট প্রতীকে দিতে বাধ্য করা হয় অনেক ভোটারকে। এ অবস্থায় কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিতে একপর্যায়ে বাধ্য হন তারা। তারপরও ভোট সুষ্ঠু হয়েছে বলে কাগজে সই দিতে বাধ্য করা হয়েছে তাদের। এসবের জন্য কয়েকজন প্রিসাইডিং অফিসার ইসির তদন্ত কমিটির কাছে লিখিতভাবে ক্ষমাও চেয়েছেন বলে জানা গেছে।

তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা গেছে, সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে তারা কয়েকজন প্রিসাইডিং অফিসার এবং সাঘাটার ইউএনওসহ নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট প্রায় শ’খানেক ব্যক্তির সম্পৃক্ততা পেয়েছে। সাঘাটার ইউএনও ভোট সুষ্ঠু হয়েছে মর্মে সাদা কাগজে প্রিসাইডিং অফিসারদের লিখিত দিতে বাধ্য করেছেন বলে কমিটি প্রমাণ পেয়েছে। এছাড়া বেশ কিছু কেন্দ্রে অনিয়মের জন্য একজন প্রার্থীর পোলিং এজেন্টদের সম্পৃক্ততা পেয়েছে তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটি সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ওইসব পোলিং এজেন্টের বেশিরভাগ প্রথমে অনিয়মে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করলেও তাদের সিসিটিভি ফুটেজ দেখানোর পরে স্বীকার করেন। কমিটি অনিয়মের সঙ্গে জড়িত কিছু ব্যক্তির সন্ধান পেয়েছে, যারা গাইবান্ধা-৫ নির্বাচনি এলাকার ভোটার বা নাগরিক নন। নির্বাচনি আচরণবিধি অনুযায়ী, ভোটের দিন বহিরাগতদের নির্বাচনি এলাকায় থাকার কোনও সুযোগ নেই। এদিকে কয়েক ব্যক্তিকে তদন্ত কমিটি ডাকলেও তারা সাড়া দেননি বলেও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

তদন্ত কমিটির কাছে ভোটকে সুষ্ঠু অবাধ ও নিরপেক্ষ বলে দাবি করেছেন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার। সেটিও প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে বলে জানায় সূত্রটি। তবে বিষয়টি তদন্ত কমিটির কাছে সন্তোষজনক মনে হয়নি বলেও তারা উল্লেখ করেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির প্রধান অশোক কুমার দেবনাথ বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে বলেন, ‘আমরা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। এই প্রতিবেদনের বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। এটি এখন নির্বাচন কমিশনের সম্পত্তি। প্রকাশ করা না করার বিষয়ে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।’

Facebook
X
WhatsApp
Email
Telegram
সর্বশেষ
ফেসবুক নেটওয়ার্ক ও পার্টনার পেজ
মিডিয়া
Cover for Table Talk Uk
595,824
Table Talk Uk

Table Talk Uk

Table Talk UK Discusses the political and social issues of the country. Our only purpose is to expose social inconsistencies and politics in the face of accountability on the path to democracy and talk about the rights of people.

This message is only visible to admins.
Problem displaying Facebook posts. Backup cache in use.
PPCA Error: Due to Facebook API changes it is no longer possible to display a feed from a Facebook Page you are not an admin of. The Facebook feed below is not using a valid Access Token for this Facebook page and so has stopped updating.

Smash Balloon Custom Facebook Feed WordPress Plugin The Custom Facebook Feed plugin

সর্বশেষ সংবাদ জানতে—এখনই সাবস্ক্রাইব করুন!
সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
কপিরাইট © 2025 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত — লন্ডন মিরর।
সম্পাদক: হাসিনা আক্তার
সার্চ করুন
লগইন/সাইন আপ
সর্বশেষ সংবাদ জানতে—এখনই সাবস্ক্রাইব করুন!