শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫
শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫

জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইসির অধীনে মাঠ প্রশাসন চায় ৭৮ ভাগ দল

নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে অংশ নেওয়া ৭৮ ভাগ দল চায় ভোটের সময় পুলিশ ও মাঠ প্রশাসন যেন সরাসরি ইসির নিয়ন্ত্রণে থাকে। সোমবার পর্যন্ত সংলাপে অংশ নেওয়া ১৮টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ১৪টিই এ বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে বলেছে। বিশেষ করে স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, প্রতিরক্ষা ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ইসির হাতে রাখতে আইন সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছে দলগুলোর নেতারা। কোনো কোনো রাজনৈতিক দল বলেছে, এজন্য সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হবে না, আইন সংশোধন করলেই চলবে।

 

এছাড়া অন্তত ১০টি রাজনৈতিক দল নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে প্রস্তাব দিয়েছে। তাদের মধ্যে চারটি রাজনৈতিক সংগঠন নিবন্ধিত দলগুলোর সমন্বয়ে সরকার গঠনের সুপারিশ করেছে। তিনটি রাজনৈতিক দল নিরপেক্ষ সরকার গঠন ও বাকি তিনটি দল সংবিধান অনুযায়ী বিদ্যমান সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার ওপর মত দিয়েছে। আর নির্বাচনের সময়ে ৬টি রাজনৈতিক দল সংসদ ভেঙে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। অন্তত আটটি রাজনৈতিক দল জেলা প্রশাসকদের নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের বিরোধিতা করেছে। তাদের মধ্যে ৬টি দলই ইসির জনবল থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের প্রস্তাব করে। বেশিরভাগ দলই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের বিরোধিতা করেছে। সংলাপে উঠে আসা প্রস্তাব পর্যালোচনা করে এসব তথ্য জানা গেছে।

সংলাপে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল নির্বাচনের সময়ে ইসির হাতে কয়েকটি মন্ত্রণালয় ন্যস্তের প্রস্তাব করলেও তাতে সংকট তৈরি হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। সোমবার বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সংলাপে এ প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, ‘ইসিকে শক্তিশালী করতে অনেকগুলো বিষয় কমিশনের ওপর ন্যস্ত করার কথা বলেছেন। সাংবিধানিকভাবে এটা গভর্মেন্ট ন্যস্ত করলেই যে আমি নিতে পারব-তা বলতে পারছি না। কারণ কেবিনেট ইন রিলেটেড বাই দ্য কন্সটিটিউশন। হ্যাঁ, সংবিধান ও আইনকানুন সংশোধন করে যদি আমাদের ওপর ন্যস্ত করা হয়, তাহলে লিগ্যালি নেওয়া যাবে। আদারওয়াইজ ইলিগ্যালি দিতে চাইলে যে আমরা নিতে পারব বা নেব এ বিষয়ে আশ্বাস দিতে পারি না।’ সিইসি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন ইজ নির্বাচন কমিশন, নির্বাচন কমিশন ইজ নট এ মিনিস্ট্রি-এটা আপনারা জানেন। আমি নির্বাচন কমিশনার হোম মিনিস্টার, ডিফেন্স মিনিস্টার বা ওই ধরনের কোনো মিনিস্টার হয়ে যাব-সেটা আরেকটা সংকট সৃষ্টি করতে পারে।’

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত ১৭ জুলাই থেকে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল পর্যন্ত সাত দিনে ১৮টি রাজনৈতিক দল ইসির আহবানে সাড়া দিয়ে সংলাপে এসেছে। বিএনপিসহ ৬টি দল সংলাপ বর্জন করেছে। আরও ১৪টি দলকে সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সংলাপের শেষ আগামী ৩১ জুলাই আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির সঙ্গে সংলাপে বসবে ইসি।

ইসির হাতে মন্ত্রণালয় ন্যস্ত : নির্বাচন কমিশনের প্রথম সংলাপ অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম’র সঙ্গে। একইদিন বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের সঙ্গেও সংলাপ হয়। বিএনএফ ছাড়া বাকি দুটি দল সংলাপে সুনির্দিষ্ট আকারে প্রস্তাব দেয়। প্রথম সংলাপেই এনডিএম তাদের সুপারিশে সিইসিকে সুপার প্রাইম মিনিস্টারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার প্রস্তাব করে। নির্বাচনের সময়ে জনপ্রশাসনকে ইসির নিয়ন্ত্রণে নেওয়া এবং রাজনৈতিক দলের দাবির প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ প্রশাসনে রদবদল আনার সুপারিশ করে। আর বাংলাদেশ কংগ্রেস নির্বাচনের সময়ে স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ইসির তত্ত্বাবধানে পরিচালনার প্রস্তাব করে।

দ্বিতীয় দিন থেকে বেশিরভাগ সংলাপেই নির্বাচনের সময় কয়েকটি মন্ত্রণালয় ইসির হাতে রাখার প্রস্তাব আসতে থাকে। জোটে আওয়ামী লীগের শরিক কয়েকটি দলও এ ধরনের প্রস্তাব দেয়। গতকাল সংলাপে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি নির্বাচনকালীন সময়ে স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে ন্যস্তের প্রস্তাব করে। ভোটের আগের তিন মাস ও পরের তিন মাস কর্মকর্তাদের বদলি, শাস্তি, পদোন্নতি বিষয়ে ইসি কর্তৃপক্ষ হিসাবে কাজ করবে বলেও তাদের প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়।

এছাড়া বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট নির্বাচনের সময়ে স্থানীয় সরকার, জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, অর্থ, তথ্য ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ইসির প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে পরিচালনার প্রস্তাব করেছে। একইভাবে খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল-(এমএল), বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, গণফ্রন্ট, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগ প্রায় একই ধরনের প্রস্তাব করে। ভোটের সময় নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী নির্বাহী বিভাগকে তাদের অধীনে ন্যস্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ। একইসঙ্গে নির্বাহী বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্বাচনি আইন লংঘন ও অসদাচরণের দায়ে শাস্তি দিতে ইসিকে আহবান জানানো হয়।

 

নির্বাচনকালীন সরকার : ইসলামী ঐক্যজোট (আইওজে), বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এমএল) এবং বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের সময়ে বিদ্যমান সরকার ক্ষমতায় থাকবে বলে জানায়। তবে দল তিনটিই সরকারের কার্যক্রম সীমিত রাখার প্রস্তাব করেছে। ইসলামী ঐক্যজোট ও সাম্যবাদী দল বলেছে, বিদ্যমান সরকার শুধু রুটিন কাজ করবে। ওয়ার্কার্স পার্টি বলেছে, সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের সময়ে নির্বাচন হবে। সরকার যাতে নির্বাচনের ওপর প্রভাব ঘাটাতে না পারে সেজন্য দৈনন্দিন কাজ করবে এবং উন্নয়নমূলক কাজ করতে পারবে না। মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা প্রটোকল পাবেন না।

 

নিবন্ধিত সব দল নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি। দল নিরপেক্ষ বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পাটি, খেলাফত মজলিস ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন। সংসদে প্রতিনিধিত্বকারীদের নিয়ে সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে গণফ্রন্ট ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগ।

 

যদিও সংলাপে এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার গণফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আপনাদের (রাজনৈতিক দলের) মেসেজগুলো সরকারের কাছে পৌঁছে দেব। এটা সরকারই করতে পারবে। রাজনৈতিক দলের নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এটা নিয়ে রাজনৈতিক সংলাপের প্রয়োজন। আপনারা নিজেদের মধ্যে আলোচনার দরকার আছে। সরকার সমীপেও সে প্রস্তাব দেবেন। আমি বিশ্বাস করি, নির্বাচনের স্বার্থে সংবেদনশীল যে কোনো উপযুক্ত প্রস্তাব গ্রহণ করার মানসিকতা অবশ্যই যে কোনো দায়িত্বশীল সরকারের থাকবে।

সংসদ ভেঙে দেওয়া : সংলাপে ছয়টি রাজনৈতিক দল সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব করেছে। তাদের যুক্তি, মন্ত্রী ও এমপিরা পদে থেকে নির্বাচন করবে। এতে লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি হবে না। দলগুলো হচ্ছে-বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগ।

ইভিএম : সংলাপে ১০টি রাজনৈতিক দল আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার পক্ষে মত দিয়েছে। আর ৬টি রাজনৈতিক দল ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে মত দেয়। তাদের মধ্যে কয়েকটি দল শর্তসাপেক্ষে এ মত দেন। এ মেশিন ব্যবহারের পক্ষে মত দিয়ে এনডিএম বলেছে, এটি ব্যবহার করতে হলে পেপার অডিট ট্রেইল সংযুক্তি করতে হবে। শঙ্কা কাটলে ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে দেয় ইসলামী ঐক্যজোট (আইওজে)। তবে ইভিএম পদ্ধতি চালু সময়ের দাবি মন্তব্য করেছে বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এমএল)। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ ইভিএমের পক্ষে মত দিয়েছে। তবে দলটি ইভিএম-এর পাশাপাশি ব্যালট পেপারেও ভোট নেওয়ার প্রস্তাব করেছে। যান্ত্রিক ত্রুটি ও জটিলতা দূর করা ও ভোটারদের প্রশিক্ষণ দিয়ে ইভিএম ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ। গণতন্ত্রী পার্টি ইভিএমের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।

অপরদিকে ইভিএমের বিপক্ষে মত দিয়েছে, বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, গণফ্রন্ট, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ এবং বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি।

ইসির নিজস্ব কর্মকর্তা রিটার্নিং কর্মকর্তার নিয়োগ : সংলাপে আটটি রাজনৈতিক দল প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নির্বাচনে রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ না দেওয়ার প্রস্তাব করেছে। তাদের মধ্যে ছয়টি রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনের জনবল থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের কথা বলেছে। দলগুলো হচ্ছে-বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণফ্রন্ট, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ। এছাড়া জাতীয় গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগ জেলা জজদের রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের প্রস্তাব করেছে।

সংলাপে অংশ নেয়নি যে ৬টি দল : দলগুলো হচ্ছে-বাংলাদেশ জাতীয়বাদী দল-বিএনপি, বাংলদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি।

Facebook
X
WhatsApp
Email
Telegram
সর্বশেষ
ফেসবুক নেটওয়ার্ক ও পার্টনার পেজ
মিডিয়া
Cover for Table Talk Uk
595,824
Table Talk Uk

Table Talk Uk

Table Talk UK Discusses the political and social issues of the country. Our only purpose is to expose social inconsistencies and politics in the face of accountability on the path to democracy and talk about the rights of people.

This message is only visible to admins.
Problem displaying Facebook posts. Backup cache in use.
PPCA Error: Due to Facebook API changes it is no longer possible to display a feed from a Facebook Page you are not an admin of. The Facebook feed below is not using a valid Access Token for this Facebook page and so has stopped updating.

Smash Balloon Custom Facebook Feed WordPress Plugin The Custom Facebook Feed plugin

সর্বশেষ সংবাদ জানতে—এখনই সাবস্ক্রাইব করুন!
শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫
কপিরাইট © 2025 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত — লন্ডন মিরর।
সম্পাদক: হাসিনা আক্তার
সার্চ করুন
লগইন/সাইন আপ
সর্বশেষ সংবাদ জানতে—এখনই সাবস্ক্রাইব করুন!