সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫

দুর্নীতির আরেক পন্থা বদলি বাণিজ্যে

বদলি বাণিজ্যে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বরিশাল এলজিইডির (স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে।

এ কারণে তার বদলি করার ক্ষমতা রহিত করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। ১৬ নভেম্বর দেওয়া এক অফিস আদেশে এই নির্দেশ দেন এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী সেখ মোহাম্মদ মহসিন।

বরিশালের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় কর্মরত এলজিইডির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, ‘আড়াই মাস আগে যোগদান করা সাইফুল বদলি প্রশ্নে এমন কৌশল অবলম্বন করেন যে, তাকে ঘুস বাবদ লাখ লাখ টাকা দিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করতে হয়। এভাবে দেড়শর বেশি জনকে বদলির মাধ্যমে তিনি হাতিয়ে নেন কয়েক কোটি টাকা। তার গণবদলির আতঙ্কে বরিশালের বাকেরগঞ্জে এলজিইডির একজন কর্মচারীর মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে। তারপরও বন্ধ হয়নি তার বাণিজ্য। বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয় জানলে তার বদলির ক্ষমতা রহিত করা হয়। সাইফুল ইসলাম অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। অভিযোগ মিথ্যা আখ্যা দিয়ে ফোন কেটে দেন তিনি।

সেপ্টেম্বরে এলজিইডির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হিসাবে বরিশালে যোগদান করেন সাইফুল ইসলাম। এর কিছুদিন পর ২৯ সেপ্টেম্বর একই কর্মস্থলে ৩ বছরের বেশি কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলি করার জন্য একটি নির্দেশনা আসে প্রধান দপ্তর থেকে। প্রধান প্রকৌশলী স্বাক্ষরিত ওই নির্দেশনায় স্পষ্ট বলে দেওয়া হয়, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এবং নির্বাহী প্রকৌশলীরা পরস্পর সমন্বয় করে বদলি করবেন।

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বরিশাল এলজিইডির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী  বলেন, এই চিঠি আসার পরপরই বেপরোয়া হয়ে ওঠেন সাইফুল। কারও সঙ্গে কোনোরকম আলোচনা কিংবা সমন্বয় না করেই গণহারে বদলির আদেশ দিতে শুরু করেন তিনি। কর্মস্থলে ৩ বছরের বেশি সময় ধরে কর্মরতদের বদলির নির্দেশনা থাকলেও ৩/৪ মাস ধরে কাজ করছেন এমন কর্মকর্তা-কর্মচারীকেও তিনি বদলি করতে শুরু করেন। বদলি বাণিজ্য প্রশ্নে ঘৃণিত একটি কৌশলও অবলম্বন করেন তিনি। শুরুতে বর্তমান কর্মস্থল থেকে একেবারে প্রত্যন্ত এলাকা কিংবা সাগরপারের জেলা-উপজেলায় বদলি করা হয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।

পরে নিজস্ব দালালচক্রের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের অর্থ নিয়ে আবার তাদের নিয়ে আসা হয় পছন্দের জায়গায়। অবশ্য বদলি আদেশের শুরুতে যারা টাকা দিয়ে ম্যানেজ করেন, তাদের বদলি করা হয়নি। ফলে বদলি হতে হয়নি একই দপ্তরে ৭/৮ বছর ধরে কর্মরত অনেককেই। এমনকি তার দপ্তরে কর্মরত হিসাবরক্ষক হাবিবুর রহমান পর্যন্ত একই কর্মস্থলে কাজ করছেন ৭ বছরের বেশি।

ঘুস বাণিজ্যের টার্গেটে বদলির শিকার এক উপসহকারী প্রকৌশলী বলেন, ‘আমাকে বরিশাল থেকে বদলি করা হয় পিরোজপুর জেলার একটি প্রত্যন্ত উপজেলায়। সেখানে মাসখানেক থাকার পর প্রস্তাব পাই বরিশাল সদরে আসার। অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর কাছের লোক হিসাবে পরিচিত একজন জানান, আড়াই লাখ টাকা দিলে বরিশালে আসা যাবে। বহু কষ্টে টাকা জোগার করে দেওয়ার পর আবার আমাকে বরিশালে আনা হয়।’ বরিশাল থেকে ভোলায় বদলি করা আরেক উপসহকারী প্রকৌশলী বলেন, ‘ভোলার মেঘনাপারের একটি উপজেলায় বদলি করা হয় আমাকে। পরে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর ড্রাইভার জলিলকে ২ লাখ টাকা দিলে আবার বরিশালে আসার সুযোগ হয় আমার।’ বরিশালের আরেক উপসহকারী প্রকৌশলী বলেন, ‘আমাকে পটুয়াখালী এস ই অফিসে বদলি করা হয়েছিল। কীভাবে আবার এখানে এসেছি, তা নাইবা বললাম।’ এভাবে ঘূর্ণায়মান বদলি ও লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে আগের স্থান কিংবা তার কাছাকাছি ফিরে আসার অভিজ্ঞতা জানান আরও বেশ কয়েকজন। বরিশাল সদর থেকে বাবুগঞ্জ উপজেলায় বদলি হওয়া এক কর্মকর্তা বলেন, ‘নির্দেশ ছিল একই কর্মস্থলে ৩ বছরের বেশি কর্মরতদের বদলি করার, অথচ আমাকে বদলি করা হয় ৯ মাসের মাথায়। বহু অনুরোধ করেছি, কাজ হয়নি।’ পিরোজপুর থেকে পটুয়াখালীতে বদলি করা আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘মাত্র ৭ মাসের মাথায় বদলি করা হয় আমাকে। এরকম আরও অন্তত ২০/২৫ জন আছেন, যাদের নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই বদলি করা হয় ঘুসের বিনিময়ে অন্যদের পছন্দের জায়গায় পোস্টিং দিতে।’ নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, বদলি বাণিজ্য প্রশ্নে হিসাবরক্ষক হাবিবুর, উপসহকারী প্রকৌশলী মিরাজ এবং ব্যক্তিগত ড্রাইভার জলিলের মাধ্যমে লেনদেন করতেন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী। পরে বিষয়টি নিয়ে ঢাকায় এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরসহ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ গেলে বদলি করার ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয় সাইফুলের। ১৬ নভেম্বর পাঠানো এ সংক্রান্ত নির্দেশনায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় অযৌক্তিক বদলির। মূলত এরপর বন্ধ হয় তার বদলি বাণিজ্য।

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ‘সবকিছু মিথ্যা’, এটুকু বলেই ফোন কেটে দেন সাইফুল ইসলাম। আরও বিস্তারিত কথা বলার জন্য পরে বেশ কয়েকবার ফোন এবং মোবাইল ফোনে খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি জবাব দেননি।

এলজিইডি বরিশালের নির্বাহী প্রকৌশলী শরীফ জামালউদ্দিন বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা ছিল বদলি প্রশ্নে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এবং নির্বাহী প্রকৌশলীদের সঙ্গে সমন্বয় করবেন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী। কিন্তু এটুকু বলতে পারি যে ওনার (তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী) নির্দেশে যত বদলি হয়েছে, তার কোনোটির ব্যাপারেই তিনি আমার সঙ্গে কোনো আলোচনা কিংবা সমন্বয় করেননি।’

সব অভিযোগ অস্বীকার করে হিসাবরক্ষক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘দেড় শতাধিক নয়, আমি যতদূর জানি শ খানেক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলি করা হয়েছে। তবে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে আমি জড়িত ছিলাম না। পুরো বিষয়টিই দেখভাল করেছেন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী স্যার। এ নিয়ে তিনি আকয়েক কোটি টাকা লেনদেন সঙ্গে কোনোরকম আলোচনা করেননি। তাছাড়া আমার মাধ্যমে টাকা লেনদেনের অভিযোগও সত্য নয়।’

উপসহকারী প্রকৌশলী মিরাজ হোসেন বলেন, ‘আমার মাধ্যমে ঘুসের টাকা লেনদেনের যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা সত্য নয়। এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।’

Facebook
X
WhatsApp
Email
Telegram
সর্বশেষ
ফেসবুক নেটওয়ার্ক ও পার্টনার পেজ
মিডিয়া
Cover for Table Talk Uk
595,824
Table Talk Uk

Table Talk Uk

Table Talk UK Discusses the political and social issues of the country. Our only purpose is to expose social inconsistencies and politics in the face of accountability on the path to democracy and talk about the rights of people.

This message is only visible to admins.
Problem displaying Facebook posts. Backup cache in use.
PPCA Error: Due to Facebook API changes it is no longer possible to display a feed from a Facebook Page you are not an admin of. The Facebook feed below is not using a valid Access Token for this Facebook page and so has stopped updating.

Smash Balloon Custom Facebook Feed WordPress Plugin The Custom Facebook Feed plugin

সর্বশেষ সংবাদ জানতে—এখনই সাবস্ক্রাইব করুন!
সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
কপিরাইট © 2025 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত — লন্ডন মিরর।
সম্পাদক: হাসিনা আক্তার
সার্চ করুন
লগইন/সাইন আপ
সর্বশেষ সংবাদ জানতে—এখনই সাবস্ক্রাইব করুন!