রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫
রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫

ফারুকীর সিনেমা নিয়ে ছাড়পত্র রহস্য, কারণ জানে না কেউ

২০১৯ সালে সেন্সর বোর্ডের সনদ পাওয়ার সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলেও এখন পর্যন্ত আলোর মুখ দেখলো না মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সিনেমা ‘শনিবার বিকেল’। যারা বোর্ডের সদস্য ছিলেন তারা এখনও বলছেন, সিনেমা হিসেবে ছবিটি নিয়ে তাদের কোনও আপত্তি ছিল না। কিন্তু ‘অজানা’ কারণে সেটি আটকে আছে অন্ধকারে।

কারণ, ‘অজানা’ বললেও তারাই আবার নাম প্রকাশে অনিচ্ছা প্রকাশ করে বলছেন, ‘এই ঘটনা সামনে আসা নিয়ে প্রশাসনিক আপত্তি থাকতে পারে।’

সব মিলিয়ে বিশ্বের নানা দরবারে প্রশংসা কুড়ানো আন্তর্জাতিক মানের এই ছবিটি ছাড়পত্র পাওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা, কেন বোর্ডের হিমঘরে সাড়ে তিন বছর ধরে আটকে আছে; দায়িত্বশীল কারোর কাছ থেকে সেই উত্তর মেলেনি।

বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, এতে এমন কিছু থাকতে পারে, যা মুক্তি পেলে দেশের ‘ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ’ হতে পারে! এমন আশঙ্কায় ছবিটির মুক্তি আটকে দেয় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড। বিষয়টি এখন আপিল বিভাগে রয়েছে।

বাংলাদেশে সিনেমাটি মুক্তি না পেলেও এরইমধ্যে মিউনিখ, মস্কো, সিডনি, বুসান, প্যারিসসহ বিশ্বের বিভিন্ন নামজাদা চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত এবং প্রশংসিত হয়েছে। যার মধ্যে মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিয়ে দুটি ইন্ডিপেনডেন্ট জুরি পুরস্কার অর্জন করেছে ছবিটি।

নির্মাতা ফারুকী রবিবার (৭ আগস্ট) সকালে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসে লেখেন এভাবে, আজ সকাল সকাল মনটা খারাপ হয়ে গেলো! এরকম কত সকাল যে আমার গেছে। আমি একটা ছবি বানাইছি শনিবার বিকেল নামে। যেটা সেন্সর বোর্ড সদস্যরা দেখে বিভিন্ন পত্রিকায় ইন্টারভিউ দিয়ে বললেন, আমরা দ্রুতই সেন্সর সার্টিফিকেট দিয়ে দিচ্ছি। তারপর এক অদৃশ্য ইশারায় ছবিটার দ্বিতীয় শো করে তারা। এবং তারপর বলে দিলো, ছবি ব্যান! আমরা আপিল করলাম। আজকে সাড়ে তিন বছর হলো আপিলের। কোনও উত্তর নাই…।

ছবিটি প্রথম দেখার পরে সেন্সর বোর্ডর যে সদস্যরা বিভিন্ন পত্রিকায় ইন্টারভিউ দিয়ে বলেছিলেন, ‘আমরা দ্রুতই সেন্সর সার্টিফিকেট দিয়ে দিচ্ছি’; তাদের একজন নির্মাতা ও নেতা মুশফিকুর রহমান গুলজার। তিনিও জানেন না কেন সাড়ে তিন বছরেও ছাড়পত্র পেলো না ‘শনিবার বিকেল’! তার কাছে আটকে থাকা সিনেমাটির সর্বশেষ আপডেট জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে সিনেমাটির ব্যাপারে কোনও আপত্তি ছিল না। কিন্তু কী হলো বুঝতে পারছি না। রাষ্ট্রের কিছু ব্যাপার থাকতে পারে।’ সেন্সর বোর্ড যে ছবিটির সনদ দেওয়ার ঘোষণা গণমাধ্যমে দিলেন সেই ছবি নিয়ে কার বা কোন পক্ষের কী এমন আপত্তি হলো? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই সিনেমাটি যে ঘটনার ওপর নির্মিত সেটা সামনে আসা নিয়ে প্রশাসনিক আপত্তি থাকতে পারে।

এ বিষয়ে আমাদের কিছু বলার নেই। এটুকু বলতে পারি, সিনেমা হিসেবে আমার চোখে আপত্তিকর কিছু লাগেনি। তবে সাবজেক্ট বিষয়ে প্রশাসনিক বা আন্তর্জাতিক কোনও রেশ থাকলে আমাদের কিছু বলারও নেই।’ চলচ্চিত্রটি নিয়ে গত সাড়ে তিন বছরে যে সাপলুডু খেলা হলো, সেটির বয়ান দিতে গিয়ে নির্মাতা ফারুকী বলেন, ‘আমার ধারণা বড়সড় কোনও গেম চলছে।

২০১৯-এর ৯ জানুয়ারি ছবিটি দেখে সেন্সর বোর্ডের অনেকে পত্রিকায় সাক্ষাৎকার দিয়ে বলেছেন, ছবিটি মুক্তির সনদ দেওয়া হবে। বোর্ডের অনেকে আমাকে পারসোনালি বলেছেন, ছবিটি দেখে তাদের ভালো লেগেছে। এর পরদিনই ১০ তারিখে অনলাইনকে ব্যবহার করে এমন কিছু পরিস্থিতি তৈরি করা হয় এবং জাহিদ হাসান ও তিশার স্টিল ছবি ব্যবহার করে কিছু কনটেন্ট আপ করা হয়, যেখানে ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ তোলা হয়! অথচ তারা জানেও না, ছবিতে তিশা বা জাহিদ হাসান কোন চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এর পরের দিন ১১ তারিখে সেন্সর বোর্ড ছবিটি রি-কল করে দ্বিতীয়বার দেখতে চাইলো এবং দেখলো। দেখে তারা এবার সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ না করে ঢালাও কিছু অভিযোগ করে জানালো, সনদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়েছে! এরপর আপিল করা হয়েছে আমাদের পক্ষ থেকে। কিন্তু কোনও জবাব মেলেনি। পরবর্তী সময়ে নির্মাতা ও সংস্কৃতিকর্মী নাসিরুদ্দিন ইউসুফ, মোরশেদুল ইসলাম- এনাদের ডেকে ছবিটি দেখানো হয়েছে। তারা এরমধ্যে এমন কোনও রাষ্ট্র বা ইসলামবিরোধী বিষয় খুঁজে পাননি, যার কারণে এটিকে আটকানো যেতে পারে।’

‘শনিবার বিকেল’ সিনেমাটি দেখে আটকানোর কোনও কারণ খুঁজে পেয়েছেন কিনা; এমন প্রশ্নে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসিরুদ্দিন ইউসুফ  বলেন, ‘তেমন কিছু নেই দেখেই তো আমি ফারুকীর পক্ষে দাঁড়ালাম। আমি আপিল বোর্ডের সামনে গিয়ে সিনেমাটির যথার্থতা প্রমাণ করতে পেরেছিলাম। এই সিনেমাটিতে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ভূমিকা আছে, সেটি বুঝাতে পেরেছিলাম। একই সাথে চলচ্চিত্র হিসেবেও এটি উৎকৃষ্ট বলে দাবি করেছিলাম। সব শুনে-টুনেও আমাদের জানানো হয়েছিল যে রাজনৈতিক বিবেচনায় আরও ওপরের সম্মতি লাগবে! সেখানেই বিষয়টি আটকে গেলো।’

এদিকে সিনেমাটি কেন এখনও ছাড়পত্র পেলো না, এমন প্রশ্নে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব খাদিজা বেগম জানান, বিষয়টি তার নলেজে নেই! সেন্সর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যানের কাছ থেকেও তেমন কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি এ সম্পর্কে।

মোস্তফা সরয়ার ফারুকীমোস্তফা সরয়ার ফারুকীএদিকে ছাড়পত্র সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি সম্পর্কে ‘রহস্য’ ছড়ালেও, ক্রমশ উত্তাল হয়ে উঠছে সোশাল হ্যান্ডেল। নির্মাতা, শিল্পী, সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষরাও ছবিটি মুক্তির আহ্বান ও আটকে রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। ৫০ বছরের বাংলাদেশে এর আগে এমন সমষ্টিগত প্রতিবাদ অন্য কোনও আটকে পড়া সিনেমার জন্য ঘটেনি।

নির্মাতা অনিমেষ আইচ ক্ষোভ প্রকাশ করে ফেসবুকে লেখেন, ‘লাইভে এসে আত্মহত্যা দেখি, বিডিআর বিদ্রোহ লাইভ দেখি, বিশ্বজিৎকে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে মেরে ফেলতে দেখি, পি কে হালদারের দুর্নীতি তাও দেখি শান্ত দু’চোখে। একটা সিনেমা দেখতে গেলেই হয়তো আমাদের ঘুমিয়ে থাকা গতজন্মে মৃত আত্মা জেগে উঠবে। তাই দেখি না, দেখাতে পারি না। #saturdayafternoon শনিবারের বিকেল Mostofa Sarwar Farooki নির্মিত একটি সিনেমা, তিন বছর ধরে পড়ে আছে তিমিরে। সিনেমার সঙ্গে কেন এমন ফ্যাসিস্ট আচরণ?’

হালের ‘হাওয়া’-খ্যাত নির্মাতা মেজবাউর রহমান সুমন লেখেন সুমনের সুরে, ‘আঁকো ফুল আঁকো প্রজাপতি/ এঁকো না কখনও স্বদেশের মুখ/ তোবড়ানো গাল ভেঙে যাওয়া বুক/ শনিবার বিকেল মুক্তি পাক।’

‘শনিবার বিকেল’ নিয়ে এমন অজস্র পোস্ট প্রতিবাদ হয়ে ঢেউ তুলেছে ‘পরাণ’ জুড়ানো ‘হাওয়া’র দেশে। কারণ, বেশিরভাগ নির্মাতা-শিল্পী-কুশলী মনে করেন, বহুদিন পর ফের সিনেমা হলে ফিরছেন মানুষ। গল্পের সিনেমাকে স্বাগত জানিয়েছেন দর্শক। এই সময়ে ‘শনিবার বিকেল’টাও মুক্তি পেলে বাড়তি হাওয়ার জোগান দেবে ঢালিউডের ছেঁড়া পালে।

জাজ মাল্টিমিডিয়া, ছবিয়াল ও ট্যানডেম প্রোডাকশন প্রযোজিত ‘শনিবার বিকেল’-এর বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন ১২টি দেশের স্বনামধন্য অভিনেতারা। যার মধ্যে আছেন ফিলিস্তিনের ইয়াদ হুরানি, ইউরোপের এলি পুসো, সেলিনা ব্ল্যাক, বাংলাদেশের মামুনুর রশীদ, জাহিদ হাসান, নুসরাত ইমরোজ তিশা, ভারতের পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ।

Facebook
X
WhatsApp
Email
Telegram
সর্বশেষ
ফেসবুক নেটওয়ার্ক ও পার্টনার পেজ
মিডিয়া
Cover for Table Talk Uk
595,824
Table Talk Uk

Table Talk Uk

Table Talk UK Discusses the political and social issues of the country. Our only purpose is to expose social inconsistencies and politics in the face of accountability on the path to democracy and talk about the rights of people.

This message is only visible to admins.
Problem displaying Facebook posts. Backup cache in use.
PPCA Error: Due to Facebook API changes it is no longer possible to display a feed from a Facebook Page you are not an admin of. The Facebook feed below is not using a valid Access Token for this Facebook page and so has stopped updating.

Smash Balloon Custom Facebook Feed WordPress Plugin The Custom Facebook Feed plugin

সর্বশেষ সংবাদ জানতে—এখনই সাবস্ক্রাইব করুন!
রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫
কপিরাইট © 2025 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত — লন্ডন মিরর।
সম্পাদক: হাসিনা আক্তার
সার্চ করুন
লগইন/সাইন আপ
সর্বশেষ সংবাদ জানতে—এখনই সাবস্ক্রাইব করুন!