সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫

বাজেট ২০২২–২৩ ব্যবসাবান্ধব বেশি, জনবান্ধব কম

রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘অল্প লইয়া থাকি, তাই মোর যাহা যায় তাহা যায়।/ কণাটুকু যদি হারায় তা লয়ে প্রাণ করে হায় হায়।’ মূল্যস্ফীতির চাপে পিষ্ট সাধারণ মানুষের দশা আসলে এ রকমই। দুই বছরের করোনার প্রাদুর্ভাবে পর যখন উঠে দাঁড়ানোর পালা, তখনই বিশ্বজুড়ে অর্থনীতিতে নতুন সংকট।

অতিমারির পর এখন উদ্বেগ অতি মূল্যস্ফীতি। নতুন বাজেটে অর্থমন্ত্রী মূল্যস্ফীতির চাপের কথা স্বীকার করেছেন ঠিকই। কমানোর কথাও বলেছেন। কিন্তু স্বস্তি দেওয়ার মতো কোনো পথ দেখাননি।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল তাঁর নিজের ছাতার নিচে সবাইকে সমানভাবে আশ্রয় দেননি, বরং ছাতাটা তুলে দিয়েছেন ব্যবসায়ীদের হাতেই। নানাভাবে তাঁদের কর ছাড় দেওয়া হয়েছে।

 

স্থানীয় শিল্পকে সংরক্ষণের যে নীতি তিনি নিয়েছিলেন, তা আরও জোরদার করেছেন। আবারও প্রণোদনার কথা বলেছেন। অর্থমন্ত্রীর আশা অনেকটা এ রকম—এই পথে বিনিয়োগ বাড়বে, তাতে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, মানুষ কাজ পাবে, আয় বাড়বে

এতেই স্বস্তি ফিরবে মানুষের জীবনে। অনেকটা সেই পুরোনো আমলের বাতিল হওয়া উপচে পড়া তত্ত্বের মতো। ফলে ২০২২-২৩ অর্থবছরের নতুন বাজেট অনেক বেশি ব্যবসায়ীবান্ধব হলেও সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেওয়ার বা জনবান্ধব ততটা হতে পারেনি।

সংকটের স্বীকৃতি আছে

বিশ্ব পরিস্থিতি অবশ্য এখন রবীন্দ্রনাথের দুঃসময় কবিতাটার মতোই, ‘মহা আশঙ্কা জপিছে মৌন মন্তরে, দিক-দিগন্ত অবগুণ্ঠনে ঢাকা’। আর এই মহাসংকটের স্বীকৃতি অর্থমন্ত্রী বাজেটে ভালোভাবেই দিয়েছেন। ‘বৈশ্বিক সংকট ও বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ’ অধ্যায়ে একে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে’ বলে উল্লেখ করেছেন। অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, এর ফলে আমদানি ব্যয় বেড়েছে, কমেছে প্রবাসী আয়, ঘটেছে মূল্যস্ফীতি, সরকারের ভর্তুকি ব্যবস্থাপনার ওপর সৃষ্টি হয়েছে স্মরণকালের চাপ। সংকট থেকে উত্তরণে কয়েকটি কৌশলের কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। তবে সব সংশয় এর বাস্তবায়ন নিয়েই।

অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় এ নিয়ে বলেছেন যে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অত্যন্ত কৌশলী হতে হবে, কেননা কোনো একটি সমস্যা সঠিকভাবে সমাধান করা না গেলে তা সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করতে পারে। অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মূল কৌশল হবে বিদ্যমান চাহিদার প্রবৃদ্ধি কমিয়ে সরবরাহ বৃদ্ধি করা। সে লক্ষ্যে আমদানিনির্ভর ও কম গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ব্যয় বন্ধ রাখা অথবা হ্রাস করা হবে।

নিম্ন অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্পসমূহের বাস্তবায়নের গতি হ্রাস করা হবে এবং একই সময়ে উচ্চ ও মধ্যম অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্পসমূহের বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করা হবে। জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও সারের বিক্রয়মূল্য পর্যায়ক্রমে ও স্বল্প আকারে সমন্বয় করা হবে। রাজস্ব আহরণ কার্যক্রম জোরদার করার লক্ষ্যে কর সংগ্রহে অটোমেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। মূল্য সংযোজন কর ও আয়করের নেট বৃদ্ধি করা হবে। বিলাসী ও অপ্রয়োজনীয় আমদানি নিরুৎসাহিত করা হবে এবং আন্ডার ও ওভার ইনভয়েসিংয়ের বিষয়টি সতর্ক পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার প্রতিযোগিতামূলক রাখা হবে।’

বর্তমান বিশ্ব সংকট সরবরাহ থেকে তৈরি। আর মূল্যস্ফীতি বেড়েছে সরবরাহ সংকট ও ব্যয়ের কারণে। সুতরাং চাহিদার প্রবৃদ্ধি কমিয়ে সংকটের উত্তরণ কীভাবে হবে, তার ব্যাখ্যা অর্থমন্ত্রী দেননি। অন্যদিকে চাহিদা কমানো হলে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) যে সাড়ে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য অর্থমন্ত্রী দিয়েছেন, তার অর্জন নিয়েও সংশয় তৈরি হবে। কেননা দেশের জিডিপির ভিত্তিই তো খরচ আর ভোগ।

ব্যয়ের চাপে বিশাল বাজেট

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত বছর বাজেট দেওয়ার দিন টুইট করে লিখেছিলেন, ‘ডোন্ট টেল মি হোয়াট ইয়োর ভ্যালু, শো মি ইয়োর বাজেট অ্যান্ড আই উইল টেল ইউ হোয়াট ইউ ভ্যালু’। অর্থাৎ ‘আপনি কতটা মূল্যবান, তা মুখে বলার দরকার নেই। আপনার বাজেটটা দেখান—আমিই বলে দেব আদতে আপনি কতটা মূল্যবান।’ এর ব্যাখ্যা হচ্ছে, বাজেট দিলেই হবে না, অর্থ আসলে কোথায় খরচ করা হচ্ছে, কী কাজে লাগছে, সেটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের অর্থমন্ত্রীর সংকট এখানেই।

বেতন-ভাতা, মঞ্জুরি ও সাহায্য, ভর্তুকি ও সুদ পরিশোধেই চলে যায় রাজস্ব ব্যয়ের প্রায় সবটা। আর এবার তো ভর্তুকি নিয়েই হিমশিম খেতে হচ্ছে অর্থমন্ত্রীকে। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে ভর্তুকি খাতে বরাদ্দ ছিল ৫৩ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার কারণে তেল, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারে ভর্তুকি ব্যয় বেড়ে গেছে। ফলে সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ থাকছে ৬৬ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা। আর নতুন অর্থবছরে তা আরও বেড়ে হবে ৮২ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বর্তমান যে প্রবণতা, এ খাতে ব্যয় আরও ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। এটিকে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ বলেও মানছেন অর্থমন্ত্রী।

ব্যয়ের চাপে আবারও বিশাল একটি বাজেট দিতে হয়েছে অর্থমন্ত্রীকে। প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে অনুন্নয়ন ব্যয়ই ৪ লাখ ১১ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা, বাকি ২ লাখ ৫৯ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা হচ্ছে উন্নয়ন ব্যয়। অর্থমন্ত্রীর বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি হচ্ছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর বড় অংশই আসবে অভ্যন্তরীণ থেকে। এর মধ্যে ব্যাংকব্যবস্থা থেকেই নেওয়া হবে সর্বোচ্চ ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ঋণ নেওয়ার কথা ছিল ৮৭ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা। ব্যাংকব্যবস্থা থেকে এত অর্থ সরকার নিলে বেসরকারি খাতের ভাগে কতটা পড়বে, সেটিও এখন বড় প্রশ্ন।

Facebook
X
WhatsApp
Email
Telegram
সর্বশেষ
ফেসবুক নেটওয়ার্ক ও পার্টনার পেজ
মিডিয়া
Cover for Table Talk Uk
595,824
Table Talk Uk

Table Talk Uk

Table Talk UK Discusses the political and social issues of the country. Our only purpose is to expose social inconsistencies and politics in the face of accountability on the path to democracy and talk about the rights of people.

This message is only visible to admins.
Problem displaying Facebook posts. Backup cache in use.
PPCA Error: Due to Facebook API changes it is no longer possible to display a feed from a Facebook Page you are not an admin of. The Facebook feed below is not using a valid Access Token for this Facebook page and so has stopped updating.

Smash Balloon Custom Facebook Feed WordPress Plugin The Custom Facebook Feed plugin

সর্বশেষ সংবাদ জানতে—এখনই সাবস্ক্রাইব করুন!
সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
কপিরাইট © 2025 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত — লন্ডন মিরর।
সম্পাদক: হাসিনা আক্তার
সার্চ করুন
লগইন/সাইন আপ
সর্বশেষ সংবাদ জানতে—এখনই সাবস্ক্রাইব করুন!