সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫

বিএনপির গণসমাবেশ নানা ছক আঁকছে ডিএমপি, আজ থেকে মাঠে র‌্যাব

রাজধানীতে বিএনপির ‘গণসমাবেশ’ ১০ ডিসেম্বর। এ সমাবেশকে ঘিরে কী হচ্ছে— এমন জল্পনা কল্পনা এখন সর্বত্র। নানা শঙ্কায় আছেন নগরবাসী। এ গণসমাবেশকে ঘিরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও ব্যাপক প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। এরইমধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশ ও র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) তাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বলে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে। রাজধানীর সব আবাসিক হোটেল ও মেসগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সন্দেহজনক মনে হলে অভিযান চালাবেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) থেকে পুরোদমে মাঠে কাজ শুরু করবেন তারা। সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা ইতোমধ্যে মাঠে কাজ শুরু করেছে। যাতে কোনও ধরনের নাশকতা কোনও পক্ষ চালাতে না পারে।

 

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে, ১০ ডিসেম্বর বিএনপির গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে ডিএমপিতে কর্মরত পুলিশ সদস্যদের নিয়মিত ছুটি বন্ধ রাখা হয়েছে। সমাবেশের আগে-পরে তিন দিন সব ধরনের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ৯ ডিসেম্বর থেকে ডিএমপির সব ইউনিটকে স্ট্যান্ডবাই রাখা হবে। স্বল্প সময়ের নির্দেশনায় যাতে তারা যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারে। রাজধানীর প্রতিটি থানায় বার্তা পাঠানো হয়েছে। বার্তায় নিজ নিজ থানা এলাকার আবাসিক হোটেল ও মেসগুলোতে নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে। এছাড়া হোটেলগুলোতে কারা আসছে এবং থাকছে, সে বিষয়েও তথ্য চাওয়া হয়েছে আবাসিক হোটেল কর্তৃপক্ষের কাছে। মেসগুলোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। রাজধানীতে সব ধরনের অরাজকতা মোকাবিলা ও নগরবাসীর জানমাল রক্ষায় পুলিশ আপসহীন থাকবে। ২০ নভেম্বর ঢাকার আদালত পাড়া থেকে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনার পর পুলিশ সারাদেশে রেড এলার্ট জারি করে। সেই রেড এলার্টের আওতায় রাজধানীসহ সারাদেশে তল্লাশি অভিযান অব্যাহত রাখা হবে।

ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের একজন পুলিশ কর্মকর্তা  বলেন, এবার পুলিশ আগের মতো আর বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে গায়েবি মামলা দেবে না। অতীতে এ ধরনের মামলায় পুলিশের ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে মনে করেন তারা। এবার নতুন মামলা কম হবে। কিন্তু আগের মামলার আসামিদের গ্রেফতারে জোর দেওয়া হবে। গায়েবি মামলা না দিয়ে পুরনো মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামির তালিকায় সক্রিয় নেতাকর্মীদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

বিএনপির দলীয় নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেফতার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। এ বিষয়ে আলাপকালে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, ‘ঢাকার সমাবেশকে কেন্দ্র করে আশেপাশের জেলাগুলোতে মামলা হয়েছে। বিএনপি ও এর সহযোগী এবং অঙ্গসংগঠনের কমিটি ধরে ধরে নাম দেওয়া হচ্ছে। নেত্রকোনার তিনটি উপজেলায় ১২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। ঢাকায় কিছুদিন আগে বনানী থেকে ৩০ জনের মতো আটক  করা হয়েছে। মামলা ও হয়রানি সমানতালে চলছে।’

ডিএমপির এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছর রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ৩১টি মামলা হয়েছে। এরমধ্যে ২৩টি মামলার বাদী পুলিশ। এরমধ্যে শাহবাগ থানায় ৬টি, ধানমন্ডি থানায় একটি, হাজারীবাগ থানায় একটি,  কোতোয়ালি থানায় দুটি, বংশাল থানায় একটি, তেজগাঁও থানায় একটি, পল্টন থানায় দুটি, মতিঝিল থানায় একটি, রামপুরা থানায় একটি, যাত্রাবাড়ী থানায় দুটি, শ্যামপুর থানায় একটি, বাড্ডা তিনটি, বনানী থানায় দুটি, পল্লবী থানায় দুটি, কাফরুল থানায় একটি, দারুল সালাম থানায় একটি, উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি এবং তুরাগ থানায় একটি মামলা দায়ের হয়।

ডিএমপির প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ২০১৮ সালে রাজধানীতে রাজনৈতিক মামলা হয়েছে সবচেয়ে বেশি, ৮৫৭টি। ওই বছর রাজনৈতিক গ্রেফতারও ছিল সবচেয়ে বেশি। আর ২০১৯ সালে ১৭টি, ২০ সালে ২৫টি ও ২১ সালে ২৪টি মামলা হয়। চলতি বছরের  ১১ মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার অভিযোগে মামলা হয়েছে ৩১টি। এসব মামলায় প্রতিদিনই বাড়ছে আসামি গ্রেফতারের সংখ্যা। ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত চার বছরে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিরপুর বিভাগে রাজনৈতিক সহিংসতার মামলা হয়েছে ২২৩টি। এরপরের অবস্থান মতিঝিল, লালবাগ ও তেজগাঁও বিভাগের। আর সবচেয়ে কম মামলা হয়েছে উত্তরা বিভাগে। তবে মামলা বেশি হলেও আসামি গ্রেফতারের ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে তেজগাঁও ও মতিঝিল বিভাগ।

পুলিশ সদর দফতরের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ৩০ আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতা ও নাশকতার ঘটনায় মামলা হয়েছে ৯২৩টি। এতে এজাহারনামীয় আসামি ৫৭ হাজার ৩৭২জন। আর এজাহার-বহির্ভূত আসামি ৩০ হাজার ২৮২ জন। এরমধ্যে এজাহারনামীয় আসামি গ্রেফতার হয়েছে ৫ হাজার ৮৩১ জন। এজাহার-বহির্ভূত আসামি গ্রেফতার করা হয়েছে এক হাজার ৩৪১ জনকে। এসব রাজনৈতিক মামলার মধ্যে ৬৮টি তদন্তাধীন, তদন্ত শেষে ৮৫২টির অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদন বা ফাইনাল রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে তিনটি মামলায়। আদালতে বিচারাধীন আছে ৮৫২টি মামলা।

১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশের কর্মসূচি পালন করার ঘোষণার পর রাজনৈতিক মামলা কম হলেও আগের মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে বেশি। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বিএনপির বেশ কিছু নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে আইন -শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সোমবার (২৮ নভেম্বর) রাতে ধানমন্ডিতে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসিমের পাশের বাসায় পুলিশ অভিযান চালায়। সেখান থেকে কলাবাগান থানা শ্রমিক দলের আহ্বায়ক রাসেলসহ চার জনকে আটক করা হয়।

বিএনপির গণসমাবেশ ঘিরে কী হচ্ছে এবং আইন- শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি কী জানতে চাইলে বুধবার (৩০ নভেম্বর) ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন  বলেন, ‘১০ ডিসেম্বর কিছুই হবে না। এটা নিয়ে এত মাতামাতির কিছু নেই। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগকে প্রধানমন্ত্রী বলে দিয়েছেন, যাতে তারা ওই দিন ঘরে থেকে বের না হয়। একই কারণে ছাত্রলীগের সমাবেশের দিনও এগিয়ে আনা হয়েছে।’ রাজধানীতে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে ডিসি ফারুক হোসেন বলেন, ‘এ বিষয়টি আমার জানা নেই। ধরপাকড়ের বিষয়ে বিএনপি নিজেরাই এটা নিয়ে দেশে প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে।’

রাজধানীতে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) এ.কে.এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘বিএনপির গণসমাবেশকে ঘিরে জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হবে।’ গ্রেফতারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘১০ ডিসেম্বর না, পুরনো মামলার পলাতক আসামিদের পুলিশ গ্রেফতার করছে।’

এদিকে রাজারবাগের এক অনুষ্ঠানে বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বিএনপির গণসমাবেশে অরাজকতার বিষয়ে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘সমাবেশকে ঘিরে অরাজকতা করার চেষ্টা করলে বিএনপি ভুল করবে।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপির কর্মসূচির কারণে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কর্মসূচি এগিয়ে এনে তাদের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। আমরা সবসময় বলেছি, যেকোনও কার্যক্রম আপনারা করবেন। কারণ, এটা আপনাদের রাজনৈতিক অধিকার। তবে কোনোক্রমেই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে দেওয়া যাবে না।’

১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-কে ২৬টি শর্তসাপেক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনারের এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, ‘বিএনপির গত ২০ নভেম্বর দাখিলকৃত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের বিপরীতে পথ-সমাবেশ করলে যানজট ও নাগরিক দুর্ভোগ সৃষ্টি হবে। এ কারণে ওই স্থানের পরিবর্তে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শর্তাবলি যথাযথভাবে পালন সাপেক্ষে ১০ ডিসেম্বর বেলা ১২টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত বিএনপির উদ্যোগে ঢাকা বিভাগীয় গণ-সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হলো।’

Facebook
X
WhatsApp
Email
Telegram
সর্বশেষ
ফেসবুক নেটওয়ার্ক ও পার্টনার পেজ
মিডিয়া
Cover for Table Talk Uk
595,824
Table Talk Uk

Table Talk Uk

Table Talk UK Discusses the political and social issues of the country. Our only purpose is to expose social inconsistencies and politics in the face of accountability on the path to democracy and talk about the rights of people.

This message is only visible to admins.
Problem displaying Facebook posts. Backup cache in use.
PPCA Error: Due to Facebook API changes it is no longer possible to display a feed from a Facebook Page you are not an admin of. The Facebook feed below is not using a valid Access Token for this Facebook page and so has stopped updating.

Smash Balloon Custom Facebook Feed WordPress Plugin The Custom Facebook Feed plugin

সর্বশেষ সংবাদ জানতে—এখনই সাবস্ক্রাইব করুন!
সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
কপিরাইট © 2025 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত — লন্ডন মিরর।
সম্পাদক: হাসিনা আক্তার
সার্চ করুন
লগইন/সাইন আপ
সর্বশেষ সংবাদ জানতে—এখনই সাবস্ক্রাইব করুন!