শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫
শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫

ভোটের মাঠে চাঙ্গা থাকতে গোপন প্রস্তুতি সেরেছে জামায়াত

এক দশক পর জামায়াত সমাবেশ করার অনুমতি পাওয়ায় রাজনৈতিক মাঠে নানামুখী গুঞ্জন শুরু হয়েছে। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে নতুন কোনো মেরূকরণ, নাকি মার্কিন ভিসা নীতির প্রেক্ষাপটে তারা এ অনুমতি পেল– এ নিয়ে জনমনে রয়েছে নানা প্রশ্ন। জামায়াতের দীর্ঘ দিনের মিত্র বিএনপির নেতাকর্মীর মধ্যেও দেখা দিয়েছে সংশয়। কোনো পক্ষের সঙ্গে গোপন সমঝোতার ভিত্তিতে তারা কর্মসূচি পালনের অনুমতি পেল কিনা, এই ভাবনায়ও তাঁরা।

১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রকাশ্যে অনেক দিন ধরেই বিএনপির সঙ্গে সুর মিলিয়ে জামায়াতও বলে আসছে বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে তারা অংশ নেবে না। তবে চার সিটিতে জামায়াতের অন্তত ৪০ নেতাকর্মী কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন। শুধু সিটি নির্বাচন নয়, গোপনে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি সারছে তারা। নানা ছক কষছে সংগঠন গুছিয়ে নেওয়ার। ৩০০ আসনে এমপি প্রার্থী হিসেবে কারা মনোনয়ন পেতে পারেন, তার একটি প্রাক-তালিকাও করে রেখেছে দলটি। জামায়াতের গোপন নথি ও গোয়েন্দা সূত্র থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এসব নথির সূত্র ধরে জামায়াতের গোপন নির্বাচনী কৌশলের ব্যাপারে বিস্তারিত একটি প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ছাড়াও কয়েকটি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠিয়েছে পুলিশ।

হঠাৎ করেই জামায়াতকে ইনডোরে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন  বলেন, এই অনুমতির সঙ্গে অন্য কোনো বিষয়ের সংশ্লিষ্টতা নেই। কোন জায়গায় কেন আর কোন প্রেক্ষাপটে তারা সমাবেশ করার অনুমতি চাচ্ছে, এসব দেখেই ভবিষ্যতে অনুমতি দেওয়া না দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এদিকে, গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদে বাজেট আলোচনায় বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, জামায়াতকে ১০ বছর পর সভা করার অনুমতি দেওয়া হলো, এটা কিসের আলামত আমরা জানি না। সাপের মুখে চুমো খেলে, সাপই ছোবল মারে।

জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, ১০ বছর ধরে জামায়াতকে তার রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এখন তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে। এটা আমরা স্বাগত জানাই। জামায়াত একটি নির্বাচনমুখী দল। কেন আমরা জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নেব না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে অংশ নেব আমরা। আর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জামায়াত দলীয়ভাবে কোনো প্রার্থী দেয়নি। তিনি আরও বলেন, আমরা সমাবেশের অনুমতি পেয়েছি বলে জোটের অন্যরা ঈর্ষান্বিত হবে কেন? বৈরী পরিবেশেও আমাদের অনুসারীর সংখ্যা বাড়ছে।

গত ডিসেম্বরে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে জামায়াতের বেশ কয়েকজন নেতাকে বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের কাছ থেকে ল্যাপটপ, মোবাইল ফোনসহ নানা ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইসও জব্দ করে পুলিশ। এসব ডিভাইসের ফরেনসিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। এ ছাড়া গ্রেপ্তার কোনো কোনো নেতার কাছ থেকে জামায়াতের কর্মকৌশল নিয়ে গোপন নথি পাওয়া গেছে।

দীর্ঘদিন ধরে জামায়াত প্রকাশ্যে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নেই। তবে জামায়াতের নথিপত্র বলছে, গোপনে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে নানামুখী উদ্যোগ নিচ্ছে দলটি। ২০৪১ সালের মধ্যে তারা রাষ্ট্রক্ষমতায় যাবে– এমন ধারণা তাদের। গত এক যুগে পুরুষের তুলনায় নারী রোকন প্রায় পাঁচ গুণ বেড়েছে। ২০০৮ সালে রোকন ছিল ২৩ হাজার ৮৬৩ জন। ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৩ হাজার ৪৬ জনে। সীমান্তবর্তী ১০টি জেলায় সংগঠনটির সদস্য সংখ্যাও বেড়েছে।

জামায়াত নিয়ে পুলিশ প্রতিবেদনে বলা হয়– ১০টি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও ৩০০ আসনে এমপি হিসেবে যাঁরা প্রার্থী হতে পারেন, তার প্রাথমিক তালিকা তারা করেছে। সংগঠনের সদস্য এবং দেশি-বিদেশি উৎস থেকে নির্বাচনকালীন প্রচার-প্রচারণা ও সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অর্থ সংগ্রহের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে তারা। ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেলের স্বাক্ষর করা একটি চিঠিও গোয়েন্দারা জব্দ করেছেন। ওই চিঠিতে তিনি বলেন– ‘মুহতারাম আমিরে জামায়াতের নির্দেশে নিম্নোক্ত বিষয় বাস্তবায়ন করতে অনুরোধ করছি।’

চিঠিতে ৯টি বিষয় উল্লেখ করা হয়। প্রথমে বলা হয়– ‘এই পত্র কোনো জেলা আমিরকে দেওয়া যাবে না। খুব সতর্কতার সঙ্গে এটা আপনাকে সংরক্ষণ করতে হবে। জেলা শাখাগুলোকে বিষয়গুলো মৌখিকভাবে বলে দেওয়া এবং ২০২৩ সালের এককালীন কোটার কথা জানানো। ২০২৩ সালের এককালীন নামক আদায় নির্বাচনী অর্থ তহবিল। এই আদায়ের ১০ শতাংশ এককালীন নামে খাতে সাধারণ ক্যাশ বহিতে লিপিবদ্ধ করে সমাজকল্যাণ কার্যক্রম চালাতে হবে; অবশিষ্ট ৯০ শতাংশ সরাসরি কেন্দ্রে পাঠাতে হবে। এ বছর অঞ্চল মারফত কোনো এককালীন আদায় করা হবে না। ফলে এখান থেকে খরচের অর্থ বরাদ্দ দেওয়া যাবে না। নির্বাচন উপলক্ষে এককালীন আদায়ের ৯০ শতাংশ পৃথক রসিদ বইয়ে আদায় করতে হবে। তবে পৃথক খাতায় লিপিবদ্ধ করতে হবে। এর জন্য জেনারেল অডিট হবে না। পৃথকভাবে সংগঠন দেখবে। এখানে গোপনীয়তা রক্ষা করা জরুরি। এককালীন সমাজকল্যাণের কিছু কিছু কাজ মুহতারাম আমিরে জামায়াত কর্তৃক কেন্দ্র তহবিল হতে বাস্তবায়িত হবে।’ চিঠির শেষে বলা হয়– ‘আপনার অঞ্চলের শাখাসমূহের কোটা নিম্নরূপ।’

জামায়াত এমপি প্রার্থী হিসেবে যাঁদের মনোনয়ন দিতে পারে এর মধ্যে ৪৯ জনের একটি তালিকা পাওয়া গেছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন– কুমিল্লা-১৪ আসনে ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মু. তাহের, খুলনা-৫ অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, খুলনা-৬ মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, চট্টগ্রাম-১০ শাহজাহান চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১৫ মাওলানা শামসুল ইসলাম, চট্টগ্রাম-১৬ মাওলানা জহিরুল ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ ড. কেরামত আলী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ অধ্যাপক ইয়াহহিয়া খালেদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ নুরুল ইসলাম বুলবুল, চুয়াডাঙ্গা-২ মোহাম্মদ রুহুল আমিন, জয়পুরহাট-১ ডা. ফজলুর রহমান সাঈদ, ঝিনাইদহ-৩ অধ্যাপক মতিয়ার রহমান, ঠাকুরগাঁও-২ মাওলানা আব্দুল হাকিম, ঢাকা-১৫ ডা. শফিকুর রহমান, দিনাজপুর-১ মাওলানা আবু হানিফ, দিনাজপুর-৪ মাওলানা আফতাব উদ্দিন মোল্লা, দিনাজপুর-৬ আনোয়ারুল ইসলাম, নওগাঁ-৪ খ. ম. আব্দুর রাকিব, নাটোর-১ অধ্যাপক তাসনিম আলম, নীলফামারী-২ মনিরুজ্জামান মন্টু, নীলফামারী-৩ মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম, পটুয়াখালী-২ ডা. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, পাবনা-১ ডা. আব্দুল বাসেত, পাবনা-৪ অধ্যাপক আবু তালেব মণ্ডল, পাবনা-৫ অধ্যক্ষ ইকবাল হোসাইন, পিরোজপুর-১ শামীর সাঈদী, বগুড়া-২ অধ্যক্ষ সাহাদাতুজ্জামান, বগুড়া-৪ অধ্যক্ষ মাওলানা তায়েব আলী, বাগেরহাট-৪ অধ্যাপক আবদুল আলীম, ময়মনসিংহ-৬ অধ্যাপক জসীম উদ্দিন, যশোর-১ মাওলানা আজিজুর রহমান, যশোর-২ আবু সাঈদ মুহাম্মদ শাহাদত হোসাইন, যশোর-৫ গাজী এনামুল হক, যশোর-৬ অধ্যাপক মুক্তার আলী, রংপুর-৫ অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী, রাজশাহী-১ অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, লক্ষ্মীপুর-২ মাস্টার রুহুল আমিন,  লালমনিরহাট-১ আবু হেনা মু. এরশাদ হোসেন সাজু, সাতক্ষীরা-১ অধ্যক্ষ ইজ্জতুল্লাহ, সাতক্ষীরা-২ মুহাদ্দিস আবদুল খালেক, সাতক্ষীরা-৩ মুফতি রবিউল বাশার, সাতক্ষীরা-৪ গাজী নজরুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ-৪ মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, সিরাজগঞ্জ-৫ অধ্যক্ষ আলী আলম, সিলেট-৫ মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী, সিলেট-৬ মাওলানা হাবিবুর রহমান ও বাগেরহাট-৩ আসনে অ্যাডভোকেট আবদুল ওয়াদুদ।

পুলিশের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়– ‘রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে তারা।’ প্রার্থী বাছাই করার সময় ব্যবসায়ী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, পুলিশ ও সাবেক আমলাদের গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। প্রার্থীর আর্থিক দিক বিবেচনা করা হয়। জামায়াতের প্রার্থীকে এলাকায় হিন্দু ভোট টানতে উদ্যোগী হওয়ার কথা বলা হয়। এ ক্ষেত্রে জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী ও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। বিদেশ থেকে জামায়াত প্রার্থীকে অর্থ ও ভোট দিয়ে সহায়তার কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে– ‘জামায়াত এমন প্রার্থী নির্বাচন করে যাতে তার যোগ্যতা এমন হবে যে দল ছাড়াও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির উল্লেখযোগ্য ভোট টানতে পারে। আবার যদি জোট হয় তাহলে যেন জামায়াতের প্রার্থীর মান জোটের প্রার্থীর চেয়ে উন্নত হয়।’

 

Facebook
X
WhatsApp
Email
Telegram
সর্বশেষ
ফেসবুক নেটওয়ার্ক ও পার্টনার পেজ
মিডিয়া
Cover for Table Talk Uk
595,824
Table Talk Uk

Table Talk Uk

Table Talk UK Discusses the political and social issues of the country. Our only purpose is to expose social inconsistencies and politics in the face of accountability on the path to democracy and talk about the rights of people.

This message is only visible to admins.
Problem displaying Facebook posts. Backup cache in use.
PPCA Error: Due to Facebook API changes it is no longer possible to display a feed from a Facebook Page you are not an admin of. The Facebook feed below is not using a valid Access Token for this Facebook page and so has stopped updating.

Smash Balloon Custom Facebook Feed WordPress Plugin The Custom Facebook Feed plugin

সর্বশেষ সংবাদ জানতে—এখনই সাবস্ক্রাইব করুন!
শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫
কপিরাইট © 2025 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত — লন্ডন মিরর।
সম্পাদক: হাসিনা আক্তার
সার্চ করুন
লগইন/সাইন আপ
সর্বশেষ সংবাদ জানতে—এখনই সাবস্ক্রাইব করুন!