সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫

রাজপথে নেমে আবারও মামলার জালে বিএনপি

রাজপথে নামার পর আবারও মামলার জালে পড়েছে বিএনপি। ২২ আগস্টের পর থেকে গত ৩ মাসে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৫৮ জেলায় ২৬১টি মামলা হয়েছে। এরমধ্যে গত ১০ দিনেই হয়েছে ১৬৫টি মামলা। এছাড়া সচল করা হচ্ছে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে করা পুরোনো মামলাও। আন্দোলন দমাতে মামলা দায়ের আওয়ামী লীগের ‘রাজনৈতিক কৌশল’ বলে মনে করছেন বিএনপি নেতারা। তারা দাবি করেন, সম্প্রতি যেসব মামলা হয়েছে তার সবই ‘গায়েবি’। কোনো ঘটনার সঙ্গেই বিএনপির নেতাকর্মীদের সংশ্লিষ্টতা নেই। অথচ এসব মামলায় এখন পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ২২ আগস্ট থেকে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ নানা ইস্যুতে রাজপথে কর্মসূচি পালন করছে দলটি। প্রথমে তৃণমূলে বিক্ষোভ সমাবেশের পর এখন বিভাগীয় পর্যায়ে গণসমাবেশ করছে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এই সরকার আবারও পুরোনো খেলা শুরু করেছে। ককটেল ফাটাতে দেখেনি কেউ, অথচ মামলা দিয়েছে পুলিশ। বিএনপির বিরুদ্ধে মামলা, কিন্তু সাক্ষী কিছুই জানেন না। কারণ ককটেলের কোনো শব্দই হয়নি, কেউ কিছু দেখেনি। বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা সবই গায়েবি মামলা।’

তিনি বলেন, ‘এই সরকার নির্বাচিত হয়ে আসেনি, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে আছে। এখন টিকে থাকতে নতুন নতুন কৌশল আবিষ্কার করছে। সরকারের এসব গায়েবি মিথ্যা মামলায় নেতাকর্মীরা ভীত নন। গণসমাবেশের মধ্যে দিয়ে সারা দেশে যে গণজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে, তাতে তারা ভয় পেয়ে এসব করছে। কিন্তু কোনো কৌশলেই আর কাজ হবে না। জনগণ জেগে উঠেছে। এ সরকারকে পদত্যাগ করতেই হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচন হবে। যত দিন পর্যন্ত এই সরকার পদত্যাগ না করবে, তত দিন এই দেশে কোনো নির্বাচন হবে না।’

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘এই অবৈধ সরকার বিভাগীয় গণসমাবেশে জনস্রোত দেখে ভয় পেয়ে গেছে। তাই গায়েবি মামলা দিচ্ছে। সারা দেশে গ্রেফতার অভিযান চালাচ্ছে। বিএনপি নেতাকর্মীরা এসবে আর ভয় পায় না। এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়েছে। তাদের পতন ঘটিয়েই নেতাকর্মীরা ঘরে ফিরবে।’

বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘রোববার (গতকাল) পর্যন্ত গত ১০ দিনেই সারা দেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ১৬৫টি মামলা হয়েছে। এতে কয়েক হাজার নামে আসামি আর অজ্ঞাত তো আছেই। এসব মামলার কোনো ধরনের আইনগত ভিত্তি নেই। বর্তমান সরকার পুলিশ বাহিনীকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। অতি উৎসাহী কিছু কর্মকর্তা ইচ্ছাকৃতভাবে মামলাগুলো দায়ের করছে। এসব মামলার জন্য জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের পক্ষ থেকে কেন্দ্রসহ জেলা-থানা পর্যায় পর্যন্ত নেতাকর্মীদের আইনি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তার কারণ নেই।’ জানা গেছে, ২২ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত ৫৮ জেলায় ২৬১টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয়েছে ঢাকা মহানগরে ১৭টি। রাজশাহীতে ১৩টি, নারায়ণগঞ্জে ১২টি, বগুড়ায় ৭টি, পাবনায় ৬টি, টাঙ্গাইলে ৬টি ও ঢাকা জেলায় ৬টি। এসব মামলায় নামে আসামি ৭ হাজারেরও বেশি এবং অজ্ঞাত প্রায় ২০ হাজার। গ্রেফতার করা হয়েছে পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীকে। দলটির কেন্দ্রীয় সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু জানান, প্রতিদিনই মামলা হচ্ছে। প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি।

বিএনপির হিসাব অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীর নামে ১ লাখ ১৫ হাজার মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৩৫ লাখেরও বেশি আসামি করা হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় ও তৃণমূলের প্রায় সব নেতাই এসব মামলার আসামি। কারও কারও বিরুদ্ধে শতাধিক মামলাও রয়েছে। এসব মামলায় অনেকে কারাগারে। মামলায় হাজিরা দিতে প্রায় প্রতিদিন কেন্দ্রসহ তৃণমূল নেতাকর্মীদের আদালতের বারান্দায় ঘুরতে হচ্ছে। কেউ কেউ পরোয়ানা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অনেক মামলার বিচারও শুরু হয়েছে। আবার পুরোনো অনেক মামলায় নেতাদের নামে পরোয়ানাও জারি হচ্ছে।

অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা পুরাতন মামলা সচল ও নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থাটির আবেদনে উচ্চ আদালতের আদেশে একের পর এক বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে করা মামলা সচল হচ্ছে। এরই মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, জয়নাল আবদীন ফারুক, সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলুর মামলা সচলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘এসব মামলা ওয়ান-ইলেভেনের সময় করা হয়েছে। মামলাগুলোর আইনগত কোনো ধরনের উপাদান নেই এবং ছিলও না। বর্তমান এই সরকার সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দুদককে দিয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে পুরাতন মামলা সচল করছে।

গণতন্ত্রপন্থি ও মুক্তিকামী জনগণ এই অবৈধ ও কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। আর এজন্য সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে এ মামলাগুলো সামনে নিয়ে আসছে। যেজন্য দেশের সাধারণ মানুষ দুর্নীতি দমন কমিশনকে বিএনপি দমন কমিশন হিসাবে আখ্যা দিয়েছে।’

দুদকের সিনিয়র আইনজীবী মো. খুরশিদ আলম খান বলেন, ‘কোনো রাজনৈতিক দলকে দমন করা দুদকের উদ্দেশ্য নয়। দেখুন এসব মামলা অনেকদিন পড়ে আছে। দীর্ঘদিন ধরে মামলাগুলো লিস্টে আছে। দুর্নীতির মামলার বিচার হয় তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে, রেকর্ডের ভিত্তিতে। দুর্নীতি দমন কমিশনের লক্ষ্য দুর্নীতির মূলোৎপাটন করা। দুর্নীতির মামলাগুলো ত্বরিত নিষ্পত্তি চায় দুদক। এ কারণে আমরা শুনানির উদ্যোগ নিয়েছি।’

Facebook
X
WhatsApp
Email
Telegram
সর্বশেষ
ফেসবুক নেটওয়ার্ক ও পার্টনার পেজ
মিডিয়া
Cover for Table Talk Uk
595,824
Table Talk Uk

Table Talk Uk

Table Talk UK Discusses the political and social issues of the country. Our only purpose is to expose social inconsistencies and politics in the face of accountability on the path to democracy and talk about the rights of people.

This message is only visible to admins.
Problem displaying Facebook posts. Backup cache in use.
PPCA Error: Due to Facebook API changes it is no longer possible to display a feed from a Facebook Page you are not an admin of. The Facebook feed below is not using a valid Access Token for this Facebook page and so has stopped updating.

Smash Balloon Custom Facebook Feed WordPress Plugin The Custom Facebook Feed plugin

সর্বশেষ সংবাদ জানতে—এখনই সাবস্ক্রাইব করুন!
সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
কপিরাইট © 2025 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত — লন্ডন মিরর।
সম্পাদক: হাসিনা আক্তার
সার্চ করুন
লগইন/সাইন আপ
সর্বশেষ সংবাদ জানতে—এখনই সাবস্ক্রাইব করুন!