শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫
শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫

সাঈদীর গায়েবানা জানাজা ঘিরে সংঘর্ষ, চকরিয়ার অস্ত্রধারীর সঙ্গে মিছিলে ছিলেন সংসদ সদস্য জাফর আলমও

কক্সবাজারের চকরিয়ায় মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজা ঘিরে সংঘর্ষের সময় অস্ত্রধারীর সঙ্গে মিছিলে ছিলেন কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের আওয়ামী লীগদলীয় সংসদ সদস্য জাফর আলমও। জাফর আলমের সামনে-পেছনে অন্তত দুজনের হাতে ভারী অস্ত্র দেখা গেছে।

ওই দিন সংসদ সদস্য জাফর আলম মাথায় হেলমেট, সাদা পাঞ্জাবি-পায়জামা পরেছিলেন। ওই সময় ভারী অস্ত্র বহনকারী একজনকে গুলি করতে দেখা যায়। এ ছাড়া তাঁর সঙ্গে থাকা বেশির ভাগ লোকজনের হাতে লাঠি ছিল। গতকাল শুক্রবার থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভেসে বেড়ানো কয়েকটি ভিডিও ও ছবি পর্যালোচনা করে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, ১৫ আগস্ট বিকেল ৪টার দিকে সাঈদীর গায়েবানা জানাজা ঘিরে যখন চকরিয়া পৌরসভার নামার চিরিংগার বায়তুশ শরফ সড়কে জামায়াতের কর্মী-সমর্থকেরা পুলিশ ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তার দুটি গাড়িতে ভাঙচুর চালাচ্ছিলেন। ঠিক ১৫ মিনিটের মধ্যে অন্তত ৬০ থেকে ৭০ জন লোক নিয়ে সংসদ সদস্য জাফর আলম চকরিয়া শহরে উপস্থিত হন। তাঁর সঙ্গে সশস্ত্র অবস্থায় কয়েকজনকে দেখে মানুষ দিগ্‌বিদিক ছুটোছুটি করতে থাকেন। এ সময় একটি মিছিল নিয়ে জাফর আলম বায়তুশ শরফ সড়কের দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন। মিছিলের সামনে ছিলেন একজন অস্ত্রধারী, হাঁটতে হাঁটতে তিনি ফাঁকা গুলি ছোড়েন। তাঁর ঠিক পেছনে জাফর আলম ও আরেক অস্ত্রধারীকে হেলমেট পরা অবস্থায় দেখা যায়।

মিছিল এগিয়ে যেতে যেতে একজনকে অস্ত্র হাতে গুলি করতে দেখা যায়। এ সময় স্লোগান দিতে দেখা যায়, ‘চকরিয়ার মাটি জাফর ভাইয়ের ঘাঁটি’, ‘জাফর ভাইয়ের ভয় নেই, রাজপথ ছাড়ি নাই’।

একটি ভিডিওতে দেখা যায়, সাদা পাঞ্জাবি পরা সংসদ সদস্য জাফরকে মাঝখানে রেখে চকরিয়া শহরের মহাসড়কে মিছিলটি হয়। মিছিলের সামনে হেলমেট পরা হাফহাতা শার্ট ও কালো প্যান্ট পরা এক ব্যক্তির হাতে ভারী অস্ত্র। এর পেছনে জাফর আলম, তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী আমিন চৌধুরী, চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলমগীর ও চকরিয়া পৌরসভা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক আহ্বায়ক জয়নাল হাজারীকে দেখা যায়। জাফর আলম হেলমেট পরলেও আমিন চৌধুরী, আলমগীর ও জয়নাল হাজারীর মাথায় হেলমেট ছিল না। তাঁদের পাশে কালো পাঞ্জাবি ও হেলমেট পরা আরেকজনকে অস্ত্র হাতে দেখা যায়। মিছিল এগিয়ে যেতে যেতে একজনকে অস্ত্র হাতে গুলি করতে দেখা যায়। এ সময় স্লোগান দিতে দেখা যায়, ‘চকরিয়ার মাটি জাফর ভাইয়ের ঘাঁটি’, ‘জাফর ভাইয়ের ভয় নেই, রাজপথ ছাড়ি নাই’।

এ প্রসঙ্গে জানতে সংসদ সদস্য জাফর আলমকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। তাঁর নম্বরে খুদে বার্তা পাঠানো হলেও কোনো জবাব দেননি। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত চকরিয়া পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলমগীর  বলেন, ‘এমপি সাহেব চকরিয়ার বাইরে কাজে ব্যস্ত আছেন।’

অস্ত্রধারীদের সঙ্গে তাঁর ও সংসদ সদস্যের ছবি প্রসঙ্গে আলমগীর বলেন, তাঁর নেতৃত্বে গায়েবানা জানাজার দিন মহাসড়কে শান্তিমিছিল করা হয়। মিছিলের অগ্রভাগে ছিলেন সংসদ সদস্যও। তবে যে ছবিটির কথা বলা হচ্ছে, সে ছবি আর শান্তিমিছিলের ছবি এক নয়। অস্ত্রধারীদের বিষয়টি তিনি জানেন না। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দেখবেন বলে মন্তব্য করেন।

এর আগে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে একটি ছবিসহ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তাতে ভারী অস্ত্র হাতে এক ব্যক্তিকে দেখা যায়। স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, তাঁর নাম বেলাল উদ্দীন। তিনি পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি। তবে বেলালের দাবি, হেলমেট পরা সশস্ত্র সেই ব্যক্তি তিনি নন। এমনকি ঘটনার সময় তিনি ঘটনাস্থলেই ছিলেন না।

গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চকরিয়া উপজেলা ও পৌরসভা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলাম দাবি করেছেন, ‘আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের কেউ সংঘর্ষে ছিলেন না। জামায়াত-বিএনপি এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে।’

চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাবেদ মাহমুদ ঘটনার দিন দাবি করেছিলেন, সংঘর্ষের সময় পুলিশ কোনো গুলি ছোড়েনি। পুলিশের দায়ের করা দুটি মামলার একটিতেও পুলিশ নিজেদের পক্ষ থেকে গুলি করার কোনো ঘটনা উল্লেখ করেনি। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ভারী অস্ত্র হাতে গুলি করার ছবি ও ভিডিও প্রকাশ পেলেও আওয়ামী লীগ দাবি করছে, সংঘর্ষে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কেউ ছিলেন না। তাহলে মানুষের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, জামায়াত কর্মী ফোরকানুর কার গুলিতে মারা গেছেন?

ওসি জাবেদ মাহমুদ বলেন, অস্ত্রধারীদের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। তবে মিছিলে সংসদ সদস্যের থাকার বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।

১৫ আগস্ট সাঈদীর গায়েবানা জানাজাকে কেন্দ্র করে গুলিতে ফোরকানুর রহমান নামের এক ব্যক্তি নিহত হন। এ ঘটনায় ওসিসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। এসব ঘটনায় তিনটি মামলা হয়। বিশেষ ক্ষমতা আইন ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে দুটি মামলা করেন চকরিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ আল ফোরকান। অপর দিকে, হত্যা মামলা করেন নিহত ফোরকানুরের স্ত্রী নুরুচ্ছফা বেগম।

Facebook
X
WhatsApp
Email
Telegram
সর্বশেষ
ফেসবুক নেটওয়ার্ক ও পার্টনার পেজ
মিডিয়া
Cover for Table Talk Uk
595,824
Table Talk Uk

Table Talk Uk

Table Talk UK Discusses the political and social issues of the country. Our only purpose is to expose social inconsistencies and politics in the face of accountability on the path to democracy and talk about the rights of people.

This message is only visible to admins.
Problem displaying Facebook posts. Backup cache in use.
PPCA Error: Due to Facebook API changes it is no longer possible to display a feed from a Facebook Page you are not an admin of. The Facebook feed below is not using a valid Access Token for this Facebook page and so has stopped updating.

Smash Balloon Custom Facebook Feed WordPress Plugin The Custom Facebook Feed plugin

সর্বশেষ সংবাদ জানতে—এখনই সাবস্ক্রাইব করুন!
শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫
কপিরাইট © 2025 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত — লন্ডন মিরর।
সম্পাদক: হাসিনা আক্তার
সার্চ করুন
লগইন/সাইন আপ
সর্বশেষ সংবাদ জানতে—এখনই সাবস্ক্রাইব করুন!