সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫

হলি আর্টিজান হামলা ছয় বছরে গ্রেফতার আড়াই হাজার জঙ্গি মোস্ট ওয়ান্টেড জিয়া জন এখনো অধরা

দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জঙ্গি আক্রমণ হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলা। দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোচিত এ হামলার পর জঙ্গি দমনে সর্বশক্তি নিয়োগ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গঠন করা হয় পুলিশের নতুন এন্টি-টেরোরিজম ইউনিট।

এর আগে আর্টিজানথেকেই জঙ্গিবাদের বিস্তার রোধে কাজ কআর্টিজানরছিল র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। বিশেষায়িত এ তিন বাহিনীর সদস্যরা গত ছয় বছরে আড়াই হাজার জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে।

তবু এখনো অধরা বেশ কয়েকজন শীর্ষ পর্যায়ের জঙ্গি নেতা। এদের সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়া (চাকরিচ্যুত মেজর), সালাউদ্দিন সালেহীন, মোহাম্মদ কামরুল হাসান ওরফে মেহেদী হাসান জন প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানায়, জুলহাস মান্নান ও মাহবুব তনয়সহ বেশ কয়েকটি হত্যা মামলার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মেজর জিয়া। ২০১৩ সাল থেকে একে একে হত্যার শিকার হন ব্লগার রাজীব হায়দার, ব্লগার ও লেখক অভিজিৎ রায়, ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান, অনন্ত দাস ও নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও ব্লগার নাজিম উদ্দিন, সমকামীদের অধিকারকর্মী জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব তনয়। এ ৯ হত্যাকাণ্ডের মধ্যে ছয়টির সঙ্গে সরাসরি জিয়া জড়িত ছিলেন।

২০১৩ সালে এবিটি প্রধান মুফতি জসিমউদ্দিন রাহমানী গ্রেফতার হওয়ার পর এই সংগঠনের অন্যতম ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসাবে জিয়ার নাম সামনে আসে। ২০১৬ সালে ২ আগস্ট মেজর জিয়া ও তামিম চৌধুরীকে ধরিয়ে দিতে ২০ লাখ টাকা করে ৪০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে পুলিশ। ২০১৭ সালে নারায়ণগঞ্জে এক অভিযানে তামিম চৌধুরীসহ তিন জঙ্গি নিহত হন। এখনো খোঁজ মেলেনি জিয়ার।

সূত্র আরও জানায়, নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) মূল ধারার শীর্ষ নেতা সালাহউদ্দিন ওরফে সালেহীন ওরফে সানি। ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ভালুকায় প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে একাধিক মামলার ফাঁসির আসামি সালেহীনকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় জঙ্গিরা।

সূত্র জানায়, ত্রিশালে পুলিশ ভ্যান থেকে পালানো আরেক জঙ্গি জাহিদুল ইসলাম মিজান ওরফে বোমা মিজানকে সঙ্গে নিয়ে ভারতে জেএমবির নতুন শাখা খুলেছেন। এর নাম তারা দিয়েছেন জামায়াতুল মুজাহিদীন ইন্ডিয়া (জেএমআই)। দেশের বিভিন্ন থানায় সালেহীনের বিরুদ্ধে ৪০টির বেশি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ১৩ মামলায় তার সাজার রায় হয়েছে। এসবের মধ্যে তিনটি মৃত্যুদণ্ড হয়েছে।

সিটিটিসি ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, মোহাম্মদ কামরুল হাসান ওরফে মেহেদী হাসান জনের গ্রামের বাড়ি বগুড়ার দুপচাঁচিয়ার জয়পুর পাড়ায়। বর্তমানে সে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অবস্থান করছেন। সে বেশ কয়েকটি ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে বাংলাদেশে অবস্থানরত জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। তার বিরুদ্ধে অন্তত পাঁচটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে।

এ মুহূর্তে জঙ্গি সদস্য সংগ্রহে নিয়োজিতদের একজন জন। ইতঃপূর্বে সে শতাধিক সদস্য সংগ্রহ করেছে। শুধু তাই নয়, জঙ্গিদের দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা করার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছে। তাকে গ্রেফতারের জন্য তুর্কি সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

সিটিটিসি প্রধান ও পুলিশের ডিআইজি আসাদুজ্জামান  বলেন, জিয়া, জন, সালেহীনসহ যেসব মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গি পলাতক রয়েছে তাদের আইনের আওতায় আনতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চলছে। হলি আর্টিজান হামলার পর থেকে এ পর্যন্ত শতাধিক জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালিয়েছে সিটিটিসি। এসব অভিযানে ৬১৪ জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ১৯২টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ১০৭টিতে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। চার্জশিটে ৪৪৪ জনকে আসামি করা হয়েছে।

এ মহূর্তে সিটিটিসির কাছে ৮৫টি জঙ্গি মামলা তদন্তাধীন আছে। তিনি আরও বলেন, সিটিটিসি যেসব মামলায় চার্জশিট দিয়েছে সেগুলোর মধ্যে তিনটি মামলায় ১৮ জনের মৃত্যুদণ্ড এবং একজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। চার্জশিট দেওয়া অন্য মামলাগুলোর বিচারিক কার্যক্রম চলমান।

এটিইউয়ের প্রধান ও পুলিশের অতিরিক্ত আইজি কামরুল আহসান জানান, ২০১৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত এটিইউ ১০২টি অভিযানে ১৭৩ জঙ্গিকে আইনের আওতায় এনেছে। চলতি বছর ১৯ অভিযানে ২৭, ২০২১ সালের ৩৫ অভিযানে ৫৬, ২০২০ সালে ৪১ অভিযানে ৬৩ জন এবং ২০১৯ সালে ১৩টি অভিযানে ২৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি বলেন, এক সময় আমাদের দেশে জঙ্গিবাদ বা সহিংস উগ্রবাদে যারা জড়িত ছিল তাদের মধ্যে মাদ্রাসাছাত্র, বেকার ও দরিদ্র পরিাবারের সন্তান বেশি ছিল।

এখন আমাদের পর্যবেক্ষণ ও তদন্তে প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী, জঙ্গি সংগঠনের বেশিরভাগ সদস্য সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত, মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান। বেশিরভাগই জঙ্গিবাদে জড়াচ্ছে প্রযুক্তির হাত ধরে।

র‌্যাব সূত্র জানায়, হলি আর্টিজান হামলার পর থেকে গত ৩১ মে পর্যন্ত র‌্যাব এক হাজার ৬৭৮ জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে। এদের মধ্যে ৮৬৪ জন জেএমবি ও ৪০৬ জন আনসার আল ইসলামের সদস্য। এ সময়ে র‌্যাব ৭৭৯ টি জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালিয়েছে। ৫৪টি জঙ্গি আস্তানা গুঁড়িয়ে দিয়েছে। র‌্যাবের কাছে এ পর্যন্ত ১৬ জন জঙ্গি আত্মসমর্পণ করেছে। জঙ্গিদের কাছ থেকে র‌্যাব ৬৫টি দেশি-বিদেশি অস্ত্র, ২৬২ রাউন্ড গোলাবারুদ, ১০২টি গ্রেনেড-বোমা, সাড়ে ১৬ কেটি বিস্ফোরক এবং বিপুল পরিমাণ অন্যান্য জঙ্গি সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়েছে।

জানতে চাইলে র‌্যাব লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন  বলেন, র‌্যাবের অন্যতম ম্যান্ডেট হলো জঙ্গিবাদ দমন। মোস্ট ওয়ান্টেড যেসব জঙ্গি পলাতক আছে তাদের ধরতে আমাদের সর্বাত্মক তৎপরতা চলছে। তিনি বলেন, র‌্যাব প্রতিষ্ঠান পর থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের দুই হাজার ৮০৯ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে জেএমবির সদস্য এক হাজার ৪৩০ জন।

র‌্যাবের অভিযানে গ্রেফতার ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাই, আবদুর রহমানের ভাই আতাউর রহমান, জামাতা আবদুল আউয়াল, ইফতেখার হোসেন মামুন ও খালেদ সাইফুল্লাহ ওরফে ফারুক। ২০০৭ সালে তাদের ফাঁসি কার্যকর হয়। হলি আর্টিজানে হামলার পর ঘটনাস্থলে র‌্যাবের উপস্থিতির পরই মূল অভিযানের ক্ষেত্র তৈরি হয়।

২০১৬ সালের ১ জুলাই রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় দেশি-বিদেশি ২০ জনকে হত্যা করা হয়। এদের মধ্যে নয়জন ইতালীয়, সাতজন জাপানি, একজন ভারতীয়, একজন বাংলাদেশি-আমেরিকান দ্বৈত নাগরিক ও দুজন বাংলাদেশি নিহত। এ ছাড়া জঙ্গিদের প্রতিহত করতে গিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাও নিহত হন। তারা হলেন, বনানী থানার ওই সময়ের ওসি সালাউদ্দিন আহমেদ ও ডিএমপির সহকারী পুলিশ কমিশনার রবিউল ইসলাম।

Facebook
X
WhatsApp
Email
Telegram
সর্বশেষ
ফেসবুক নেটওয়ার্ক ও পার্টনার পেজ
মিডিয়া
Cover for Table Talk Uk
595,824
Table Talk Uk

Table Talk Uk

Table Talk UK Discusses the political and social issues of the country. Our only purpose is to expose social inconsistencies and politics in the face of accountability on the path to democracy and talk about the rights of people.

This message is only visible to admins.
Problem displaying Facebook posts. Backup cache in use.
PPCA Error: Due to Facebook API changes it is no longer possible to display a feed from a Facebook Page you are not an admin of. The Facebook feed below is not using a valid Access Token for this Facebook page and so has stopped updating.

Smash Balloon Custom Facebook Feed WordPress Plugin The Custom Facebook Feed plugin

সর্বশেষ সংবাদ জানতে—এখনই সাবস্ক্রাইব করুন!
সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
কপিরাইট © 2025 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত — লন্ডন মিরর।
সম্পাদক: হাসিনা আক্তার
সার্চ করুন
লগইন/সাইন আপ
সর্বশেষ সংবাদ জানতে—এখনই সাবস্ক্রাইব করুন!