তিব্বতের ইয়ারলুং জাংবো নদীটি ভারত ও বাংলাদেশে ব্রহ্মপুত্র নদ নামে পরিচিত। এই নদীর ওপর বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাধ নির্মাণের কাজ শুরু করেছে চীন। দেশটির প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং তিব্বতের মালভূমিতে এই প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন।
যেখানে ইয়ারলুং সভ্যতা প্রথম তিব্বতীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলো, হিমালয়ের পাদদেশের সেই স্থানে বিশ্বের সর্ববৃহৎ জলবিদ্যুৎ বাঁধ তৈরির কাজ শুরু করেছে এশিয়ার অন্যতম পরাশক্তি চীন।
২০২০ সালে পাঁচ বছরের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইয়ারলুং জাংবো নদীতে এই বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা প্রথম ঘোষণা করে চীন। তিব্বতের বিপুল জলবিদ্যুৎ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে এটি বৃহত্তর কৌশলের অংশ। প্রকল্পটি গত বছরের ডিসেম্বরে চূড়ান্ত অনুমোদন পায়।
এই ইয়ারলুং জাংবো নদীই তিব্বত ছাড়িয়ে ভারতের অরুণাচল প্রদেশ ও আসাম রাজ্যে প্রবেশ করার পর ব্রহ্মপুত্র নাম ধারণ করে এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশে প্রবেশ করে।
চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া জানিয়েছে, তিব্বতের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের দক্ষিণ-পূর্বে ন্যিংচি শহরে অবস্থিত ইয়ারলুং জাংবো নদীর নিম্নপ্রবাহে এই প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে অংশ নেন লি কিয়াং।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প হিসেবে বিবেচিত এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে প্রকল্পটি বছরে আনুমানিক ৩০ হাজার কোটি কিলোওয়াট-ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে, যা বিশ্বের বৃহত্তম বাঁধ থ্রি গর্জেস ড্যামের তুলনায় তিন গুণ বেশি।
চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া জানিয়েছে, তিব্বতে এই মেগা প্রকল্পে মোট পাঁচটি ক্যাসকেড জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থাকবে এবং এতে প্রায় ১৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করা হবে। প্রকল্প থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ মূলত দেশের অন্যান্য অংশে সরবরাহ করা হবে। তবে তিব্বতের স্থানীয় চাহিদাও এর মাধ্যমে পূরণ করা হবে।
তবে এই প্রকল্প ভারত ও বাংলাদেশের নিচু অঞ্চলের কোটি মানুষের ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে। হুমকির মুখে পড়বে পানি ও খাদ্য নিরাপত্তা। প্রকল্প নিয়ে গত জানুয়ারিতে চীনের কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল ভারত।
ভারতের দাবি, চীন এই বাঁধটি পানির মাধ্যমে চাপ সৃষ্টির কৌশল হিসেবে ব্যবহার করতে পার। তাছাড়া এর মাধ্যমে চীন ইচ্ছাকৃতভাবে বন্যা বা খরার সৃষ্টি করতে পারে।
চীন অবশ্য দাবি করছে, প্রকল্পটি নিয়ে বৈজ্ঞানিকভাবে সুপরিকল্পিত মূল্যায়ন করা হয়েছে ও এটি ভাটির দেশগুলোর পরিবেশ, ভূ-প্রকৃতি কিংবা পানির অধিকার ক্ষতিগ্রস্ত করবে না। বরং, প্রকল্পটি দুর্যোগ মোকাবিলা ও প্রশমন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য সহায়ক হবে বলেই দাবি করেছে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।



















