রাজনৈতিক দলগুলোর অনৈক্যের কারণেই বর্তমানে রাজনীতিতে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে বলেন মনে করেন খোদ রাজনীতিবিদরা। এই পরিস্থিতিতে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন হলে দেশ আবার পুরনো রাজনৈতিক অবস্থাতেই ফিরে যাবে বলেও মনে করেন তারা। আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ না হলে কোনো কিছুরই সমাধান আসবে না বলেও সংলাপে মত দেন বক্তারা।
শনিবার (১ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী একটি হোটেলে রাজনীতিকদের মধ্যে মতাদর্শভিত্তিক সংলাপ এবং গণতান্ত্রিক চর্চা অব্যাহত রাখতে সংলাপের আয়োজন করে সেন্টার ফর গভার্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস)।
এতে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহির উদ্দিন স্বপন, আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা, সেন্টার ফর গভারন্যান্স স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক পারভেজ করিম আব্বাসী।
এমসয় বক্তারা বলেন, দেশের পুরো ব্যবস্থা পাল্টানো ছিল গনঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা। তবে সেটি এখন ও পূরন করা সম্ভব হয়নি। দেশের ব্যবস্থা এতোটাই ভঙ্গুর যেখানে প্রতিবাদ ছাড়া কিছুই পাওয়া যায়।
দীর্ঘ আলোচনার পরেও ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারা রাজনীতিবিদদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক উল্লেখ করেন এবি পার্টি। আর বিএনপি বলছে জাতীয় নির্বাচনের পথে প্রবেশ না করা পর্যন্ত কোনো কিছুরই সমাধান সম্ভব নয়।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, জাতীয় নির্বাচনের শাশ্বত পথে প্রবেশ না করা পর্যন্ত কোনো কিছুর সমাধান আসবে না। ঐকমত্য কমিশন অনৈক্যের একটা দলিল জাতির কাছে হাজির করেছে। এ ধরনের কাজ বিরোধ সৃষ্টির সুযোগ।
তিনি বলেন, যেভাবে ঐকমত্য কমিশন কাজ করেছে, সেভাবে কমিশনের কাজই হবে যতোগুলো বিষয়ে ঐকমত্য রয়েছে তা তুলে ধরা। যেটাতে ঐকমত্য নেই, সেটা রেখে দেওয়া।
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, বাংলাদেশে যদি টিভি চ্যানেল না থাকতো, তাহলে আমাদের রাজনীতিবিদদের সম্পর্ক আরও ভালো থাকতো।
তিনি বলেন, প্রধান দলগুলো মত বিরোধের কারণে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি কমিশন।
দীর্ঘ আলোচনার পরও ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারা রাজনীতিবিদদের জন্য দুর্ভাগ্যের।
বিএনপি চাইলেই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়টা সমাধান হয়ে যেতো।
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নরুল হক নুর বলেন, যাদের কাঁধে চড়ে ড. ইউনূস ক্ষমতায় বসলেন, গত এক বছরে তাদের জন্য কিছু করেননি৷ তরুণ উপদেষ্টেরা দেখাতেই পারবেন না, তারা কিছু করেছেন কি না৷
সুযোগ পেলেও তরুণরা কিন্তু ভালো উদাহরণ তৈরি করতে পারেননি বলেও মন্তব্য করেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি।
তিনি আরও বলেন, শুরু থেকেই বুঝেছিলাম ঐকমত্য কমিশন অনৈক্যের দিকে যাবে৷ অনৈক্যের মধ্য দিয়ে যদি জুলাই সনদ বাস্তবায়নের দিকে যায়, তবে রাজনীতি আগের অরাজক অবস্থাতেই ফিরে যাবে৷
এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কাঙ্ক্ষিত ঐক্য হয়নি।
জুলাই সনদের সুপারিশে স্বাস্থ্য কমিশনের প্রতিবেদন কে বাস্তবায়ন করবে তার কোনো উল্লেখ নেই জানিয়ে তাসনিম জারা বলেন, রাস্তায় নামা ছাড়া কিছুই বাস্তবায়ন করা যায় না। আন্দোলন আর অনশন দাবি আদায়ের একমাত্র উপায়। যেটা পরিবর্তন দরকার।
তরুণদের রাজনীতিতে যুক্ত করার বিষয়ে তিনি বলেন, তরুণরা যাতে একটি সুস্থ ও সুন্দর পরিবেশে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হতে পারে সে ব্যবস্থা করে দেয়া আমাদের দায়িত্ব। এক্ষেত্রে আমরা ভোটাধিকারের বয়স ১৬ বছরে আনার প্রস্তাব করেছিলাম। কিছু কাঠামোগত পরিবর্তন না করলে, সেটা শুধু বলার মধ্যেই থেকে যাবে বাস্তবায়ন আর হবে না। বেশ কয়েকটি দেশে ১৬ বছর বয়সে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।
নারীরা যারা গণ-অভ্যুত্থানে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদেরও রাজনীতিতে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন উল্লেখ করে জারা বলেন, আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম সংরক্ষিত আসন ৫০ থেকে ১০০তে উন্নীত করার।
রাজনীতি আগের মতো থাকবে না উল্লেখ করে তাসনিম জারা বলেন, রাজনীতিতে যে পেশীশক্তি চলছিল, সেই রাজনীতি আর চলবে না। রাজনীতি এখন বদলে গেছে।
সংলাপ শেষে কর্মশালায় অংশ নেওয়া বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের তরুণ নেতৃবৃন্দদের মধ্যে সনদ বিতরণ করেন অতিথিরা।


















