জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) তাদের ‘নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার’ ঘোষণা করেছে। এসময় বলা হয়, আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সময়ে সংঘটিত সব মানবতাবিরোধী অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করবে এনসিপি।
একই সঙ্গে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের পরিপূর্ণ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, আহতদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করে আজীবন তাদের পাশে দাঁড়াবে দলটি।
রোববার (৩ আগস্ট) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দলটির সমাবেশে আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম ২৪ দফা সম্বলিত ইশতেহার ঘোষণা করেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, আজ থেকে ঠিক এক বছর আগে এই শহীদ মিনারে দাঁড়িয়ে আমরা ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থার পতনের ডাক দিয়েছিলাম। ছাত্র-শ্রমিক-জনতার বিপুল আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা ফ্যাসিবাদী শাসনকে পরাজিত করে এক অবিস্মরণীয় বিজয় অর্জন করেছিলাম। আমাদের সুস্পষ্ট এক দফা দাবি ছিল, আমরা ফ্যাসিবাদী ব্যাবস্থার বিলোপ করে একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত করতে চাই। কেবল এক ফ্যাসিবাদী শাসক হঠিয়ে আরেক ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার উত্থানের সম্ভাবনাকে জিইয়ে রেখে আমরা নিশ্চিন্তে ঘরে ফিরতে পারিনি। বরং রাষ্ট্র ও সমাজে দীর্ঘদিনের জেঁকে বসা এই ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা সমূলে উৎপাটনে আপনাদের তীব্র আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আমরা আপনাদের, ছাত্র-শ্রমিক-জনতার রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি গঠন করেছি।
তিনি বলেন, গত এক বছরে আপনারা লক্ষ্য করেছেন যে, রাষ্ট্রের মৌলিক ও কাঠামোগত সংস্কারে বিভিন্ন শক্তিশালী পক্ষের বিরোধিতার মুখেও এনসিপি আপনাদের পক্ষ থেকে মৌলিক সংস্কারের জন্যে সুদৃঢ় অবস্থান নিয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি এই মৌলিক সংস্কারগুলোর পুরোপুরি বাস্তবায়ন ছাড়া ফ্যাসিবাদী কাঠামো ভেঙে ফেলে আমাদের ২৪ এর গণ-অভ্যুত্থান গণতান্ত্রিক বিপ্লবে রূপান্তরিত হবে না।
এনসিপির ২৪ দফা ইশতেহারে যা আছে–
১। নতুন সংবিধান ও সেকেন্ড রিপাবলিক
২। জুলাই অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি ও বিচার
৩। গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সংস্কার
৪। ন্যায়ভিত্তিক বিচারব্যবস্থা ও আইন সংস্কার
৫। সেবামুখী প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন
৬। জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী
৭। গ্রাম পার্লামেন্ট ও স্থানীয় সরকার
৮। স্বাধীন গণমাধ্যম ও শক্তিশালী নাগরিক সমাজ
৯। সার্বজনীন স্বাস্থ্য
১০। জাতি গঠনে শিক্ষানীতি
১১। গবেষণা, উদ্ভাবন ও তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লব
১২। ধর্ম, সম্প্রদায় ও জাতিসত্তার মর্যাদা
১৩। নারীর নিরাপত্তা, অধিকার ও ক্ষমতায়ন
১৪। ইনসাফভিত্তিক অর্থনীতি
১৫। তারুণ্য ও কর্মসংস্থান
১৬। বহুমুখী বাণিজ্য ও শিল্পায়ন নীতি
১৭। টেকসই কৃষি ও খাদ্য সার্বভৌমত্ব
১৮। শ্রমিক-কৃষকের অধিকার
১৯। জাতীয় সম্পদ ব্যবস্থাপনা
২০। নগরায়ণ, পরিবহন ও আবাসন পরিকল্পনা
২১। জলবায়ু সহনশীলতা ও নদী-সমুদ্র রক্ষা
২২। প্রবাসী বাংলাদেশির মর্যাদা ও অধিকার
২৩। বাংলাদেশপন্থি পররাষ্ট্রনীতি
২৪। জাতীয় প্রতিরক্ষা কৌশল
ঘোষণা শেষে নাহিদ ইসলাম বলেন, আজ থেকে ঠিক এক বছর আগে এই শহীদ মিনারেই আমরা শপথ নিয়েছিলাম এই দেশকে স্বৈরাচারের হাত থেকে মুক্ত করব। আপনারা সেই আহ্বানে সাড়া দেওয়ায় আমরা সবাই মিলে ফ্যাসিবাদী শাসনকে পরাজিত করেছি এবং দেশের ওপর নিজেদের কর্তৃত্ব ফিরিয়ে নিয়েছি। আজ আবারও এই শহীদ মিনার থেকে আমরা আপনাদের আহ্বান জানাচ্ছি– আসুন আমরা সবাই মিলে আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিক গঠনে এই ঐতিহাসিক ২৪ দফাকে বাস্তবে রূপান্তর করে সকল নাগরিকের স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়ি।


















