বিদ্যমান ব্যবস্থায় যে-ই রাষ্ট্রের ক্ষমতায় যাক, তার স্বৈরাচার হয়ে ওঠার সুযোগ রয়েছে। তাই প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য, সংবিধান সংস্কার ও নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারের প্রতি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির আহবায়ক নাহিদ ইসলাম।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) সকালে জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টি প্রতিনিধি দলের আলোচনার সূচনা বক্তব্যে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
এসময় নাহিদ বলেন, বাংলাদেশ একটি রূপান্তর প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে নতুন বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে, তা বাস্তবায়নের জন্য রাষ্ট্র সংস্কারের কথা বলা হয়েছে। রাষ্ট্র সংস্কারে যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে তাতে আমরা ও জনগণ কৃতজ্ঞ।
তিনি বলেন, হাজারও মানুষ হতাহতের বিনিময়েই আজকের এই প্রেক্ষাপট। জাতীয় নাগরিক পার্টির সেই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। যে দলের প্রধান শক্তি বা ভিত্তির জায়গা হচ্ছে এদেশের তরুণরা। আমরা মনে করি, আমাদের সেই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষিতে যে গন্তব্য ছিল, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন একটি রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠা করতে চাই। জুলাই গণঅভ্যুত্থান কোনো ব্যক্তির নয়, একটি দলকে সরিয়ে আরেকটি দলকে বসানো নয়। বরং কীভাবে রাষ্ট্রের গুণগত পরিবর্তন করে রাষ্ট্র কাঠামোর মৌলিক এবং গুণগত সংস্কার। বাংলাদেশের ইতিহাসে বিভিন্ন সময় জনগণের রাস্তায় নেমেছে, আন্দোলন করেছে। যে আকাঙ্ক্ষা থেকে জনগণের রাস্তায় নেমে আসা সে আকাঙ্ক্ষা গুলো বিভিন্ন সময় আমরা দেখেছি ব্যর্থ হয়েছে। তাই ব্যর্থতার ফলেই ১৬ বছরের একটি ফ্যাসিবাদী শাসন দেখতে হয়েছে।
নাহিদ বলেন, জনমনে যে আকাঙ্ক্ষা এখন তৈরি হয়েছে তা আমাদের সবাইকে মিলে পূরণ করতে হবে- এটা আমাদের অঙ্গীকার। জাতীয় নাগরিক পার্টি পরিষ্কারভাবে বলেছে, সংস্কার বলতে আমরা বুঝি মৌলিক সংস্কার। যে সংস্কার করলে রাষ্ট্র কাঠামোর একটি আমল ও গুণগত পরিবর্তন করা সম্ভব হবে।
জাতির সামনে এখন একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে। এ সুযোগ হাতছাড়া করা যাবে না। গণতান্ত্রিক সংবিধান ও রাষ্ট্র কাঠামো নির্মাণে আমরা কাজ করবো, যোগ করেন নাহিদ।
এদিকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া যাতে স্থায়ী হয় এবং গণ আকাঙ্ক্ষার জাতীয় সনদ তৈরির লক্ষে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ। দুই পক্ষের মধ্যে সংস্কার ও ঐকমত্য নিয়ে আলোচনা এখনও চলমান রয়েছে।
তিনি বলেন, জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া প্রতিনিধিদের প্রশংসা, কৃতজ্ঞতা। আপনাদের সহযোগিতা, অবদান আমরা কৃতজ্ঞতা ভরে স্মরণ করবো। দেশের ইতিহাসে বারবার দেখেছি গণতন্ত্রের আকাঙ্খাকে কীভাবে পর্যবসিত করা হয়। এক ব্যক্তির একক সিদ্ধান্তে রাষ্ট্র চলেছে।
তিনি বলেন, আপনাদের আন্দোলনের কারণে এই অবস্থা থেকে আমরা মুক্তি পেয়েছি। এখন সেই ব্যবস্থা অপসারণ ও রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে সংস্কারের কাজ চলছে।
কমিশনগুলোর সুপারিশে যা যা একমত হয়েছে সেগুলো আমরা চিহ্নিত করেছি। জাতীয় আকাঙ্ক্ষায় জাতীয় সনদ তৈরি করা হবে।