‘নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যে নিয়ন্ত্রণ, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে না পারলে দেশের সম্ভাবনা শেষ হয়ে যাবে’ বলে মন্তব্য করেছেন তারেক রহমান। মঙ্গলবার বিকালে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) আয়োজিত ইফতার পার্টিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘এই মুহুর্তে যদি আমরা পত্রিকা খুলি, টেলিভিশনের পর্দায় কি দেখি? আমরা দেখি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে কি পরিমান দূঃখ-কষ্টে আছে এদেশের অধিকাংশ মানুষ। আমরা কেনো রাজনৈতিক দলগুলো ডিভেট করছি না যে জনগনের রায় আমার পক্ষে আসলে আমি কিভাবে এই ব্যবস্থাটিকে হেন্ডেল করব, কিভাবে ডিল করব… আমি কিভাবে নিত্যপ্রয়োজনয়ীয় দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয়সীমার মধ্যে রাখব। এটিকে যদি রাখতে হয় তাহলে কিভাবে আমরা বাজার ব্যবস্থা সাজাব, এটিকে ঠিক করতে হলে কিভাবে আমরা উৎপাদন বাড়াব। আমি মনে করি, বিএনপি তার পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে মনে করে এই সব বিষয়গুলো অবশ্যই আমাদের জাতির সামনে এডড্রেস করা উচিত। শুধু তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা, শুধু সাংবিধানিক ব্যবস্থা, শুধু ভোটের ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা যেমন আলোচনা করা উচিত… তার থেকে বেশি আলোচনা হওয়া উচিত কিভাবে মানুষের সমস্যা সমাধান কোন দল কিভাবে করবে।’
তারেক বলেন, ‘আসুন জনগনের সমস্যাগুলোর বিষয় আমরা চিন্তা করি, কথা বলি। এই ব্যাপারেও আমাদের কি কি সংস্কার আছে সেগু্লো তুলে ধরার চেষ্টা করি। আমরা বাস্তবধর্মী সমালোচনা অবশ্যই করব এক আরেকজনের। কিন্তু সমালোচনা করতে গিয়ে এমন পরিস্থিতিতে যাতে এসে না দাঁড়াই যেখানে আমাদের জনগনের, দেশে্র এই ইস্যুগুলোকে এডড্রেস করতে ভুলে যাবো। আমাদের কাছে অন্যকিছু মুখ্য হয়ে যাবে, এগুলো গৌণ হয়ে যাবে। এটি যদি তাহলে এদেশের সম্ভাবনা সব শেষ যাবে, নষ্ট হয়ে যেতে পারে। অবশ্যই এখানে উপস্থিতি এটি কারোরই চাওয়া নয়।’
কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির প্রয়োজনীয় তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে হলে অবশ্যই আমাদের কৃষি উৎপাদন বাড়াতে হবে।কৃষি উপাদন কিভাবে বৃদ্ধি করব? শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শুধুমাত্র খাল খননের মাধ্যমে কৃষি জমিতে উপাদন বাড়িয়েছিলেন। যে জমিতে এক ফসল হতো সেখানে দুই-তিন ফসল হয়েছে সঠিক সময়ে পানি সরবারহ করার মাধ্যমে।খাল খননের মাধ্যমে বণ্যাকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছিলো।’
গুলশান শুটিং ক্লাবে এনডিএম রাজনীতিবিদদের সন্মানে রাজনীতিবিদ ও নাগরিকদের সন্মানে এই ইফতার পার্টির আয়োজন করে।
তারেক রহমান বলেন, ‘২০ কোটি জনসংখ্যার বহুল এই দেশের মানুষের একটি প্রাইমারি প্রয়োজন হচ্ছে মিনিমাম চিকিৎসা ব্যবস্থা। আমরা রাজনৈতিক দলগুলো কিভাবে আমাদের দেশের মানুষের নুন্যতম চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করব সে বিষয়গুলো কেনো তুলে ধরছি না। সেটি কি সংস্কার নয়?আমি যে বাজার ব্যবস্থা ও উৎপাদন ব্যবস্থার কথা বলেছি সেটি কি সংস্কার নয়? শুধু একজন ব্যক্তি দুই বারের বেশি প্রধান মন্ত্রী হবেন না এটি কি সংস্কার? শুধুমাত্র নির্বাচনের সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা করতে হবে… অবশ্যই করতে হবে। তবে কি শুধু সংস্কার? জনগনের সমস্যাগুলো সমাধান করার বিষয়গুলোকে নিয়ে সংস্কার হতে পারে না। আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে মনে করি এগুলো সংস্কারের প্রয়োজন। আমাদের ডাইরেশন থাকতে হবে, আমাদের প্ল্যান থাকতে হবে যা জনগনের সামনে তুলে ধরতে হবে… আমি জনগনের রায় পাই তাহলে জনগনের নুন্যতম চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য এই এই করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘সংস্কার আরও হতে পারে। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমরা যদি সঠিক শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে না পারি তাহলে কি করে আমাদের পক্ষে সম্ভব এদেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, কি করে সম্ভব একটি সমৃদ্ধশালী দেশ গড়ে তোলা। প্রত্যেকটি দলের শিক্ষা ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা থাকবে তা জনগনকে জানানো উচিত। আমরা বলি, উপাদনমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা… ফাইন… তো উৎপাদনমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা হলে সেটা কি আরেকটু ডিটেইল বলা উচিত।’
পরিবেশ দুষণ রোধে সংস্কার প্রস্তাব জরুরী উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘পরিবেশ দুষণ অত্যন্ত তীব্র মাত্রায় হচ্ছে… সামগ্রিক ভাবে সমগ্র বাংলাদেশে পরিবেশ হুমকির সম্মুখীন।আমরা রাজনৈতিক দলগুলো জাতির সামনে পরিবেশের ব্যাপারে সংস্কার উপস্থাপন করতে পারি না… কিভাবে আমরা আমাদের পরিবেশের উন্নতি ঘটাতে পারি। এই যে পরিবেশ দুষণ কিভাবে কমাতে পারি? আমি মনে করি পরিবেশ বিষয়ে সংস্কার প্রস্তাব একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কারণ এই দুষণের শব্দ দুষণ বলেন, ধুঁয়া দুষণ বলেন এসব দুষণের কারণে প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ মানুষ, শিশু অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে শারীরিকভাবে। এই দুষণ থেকে রাজধানীসহ গোটা দেশকে কিভাবে রক্ষা করতে পারি এ ব্যাপারে আমাদের পরিকল্পনা জাতির সামনে সকল রাজনৈতিক দলের উপস্থাপন করা উচিত।’
শিল্পায়নের পরিবেশ সৃষ্টি, মানুষের খাবার পানি, মানুষের ব্যবহার্য্ পানি, পরিবেশ-জ্বালানি প্রভৃতি ইস্যুতে করণীয় সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলো এডেড্রেস করা উচিত বলে মন্তব্য করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, বিএনপির মাহাদী আমিন, এবি পার্টির মজিবুর রহমান মঞ্জু, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সারসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতারাও ইফতারপূর্ব এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।